৯ . আত-তাওবা
৯:২৩ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡۤا اٰبَآءَكُمۡ وَ اِخۡوَانَكُمۡ اَوۡلِیَآءَ اِنِ اسۡتَحَبُّوا الۡكُفۡرَ عَلَی الۡاِیۡمَانِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡكُمۡ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۳﴾

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। আল-বায়ান

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের পিতা আর ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকেই বেশি ভালবাসে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের পিতাদেরকে ও ভাইদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করনা যদি তারা ঈমানের মুকাবিলায় কুফরকে প্রিয় মনে করে; আর তোমাদের মধ্য হতে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবে, বস্তুতঃ ঐ সব লোকই হচ্ছে বড় অত্যাচারী। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, do not take your fathers or your brothers as allies if they have preferred disbelief over belief. And whoever does so among you - then it is those who are the wrongdoers. Sahih International

২৩. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পিতৃবর্গ ও ভাতৃবৃন্দ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।(১)। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম।

(১) পূর্বের আয়াতসমূহে হিজরত ও জিহাদের ফযীলত বর্ণিত হয়েছিল। সেক্ষেত্রে দেশ, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও অর্থ-সম্পদকে বিদায় জানাতে হয়। আর এটি হল মনুষ্য স্বভাবের পক্ষে বড় কঠিন কাজ। তাই সামনের আয়াতে এগুলোর সাথে মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসার নিন্দা করে হিজরত ও জিহাদের জন্য মুসলিমদের উৎসাহিত করা হয়। বলা হয়েছেঃ “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের বদলে কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারাই হবে সীমালংঘনকারী।” মাতা-পিতা, ভাই-বোন এবং অপরাপর আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ দিয়ে কুরআনের বহু আয়াত নাযিল হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে বলা হয় যে, প্রত্যেক সম্পর্কের একেকটি সীমা আছে এবং এ সকল সম্পর্ক তা মাতা-পিতা, ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজন যার বেলাতেই হোক, আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্পর্কের প্রশ্নে বাদ দেয়ার উপযুক্ত।

যেখানে এ দু’সম্পর্কের সংঘাত দেখা দেবে, সেখানে আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্পর্ককেই বহাল রাখা আবশ্যক। আল্লাহ্ তা'আলা আত্মীয়তার সম্পর্ক কতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক রাখা যাবে আর কখন রাখা যাবে না সে সম্পর্কে অন্যত্র বলেছেন, “আপনি পাবেন না আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালবাসে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচারিদেরকে— হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। এদের অন্তরে আল্লাহ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তার পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। আর তিনি এদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে এরা স্থায়ী হবে; আল্লাহ এদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এরাও তার প্রতি সন্তুষ্ট, এরাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।” [সূরা আল-মুজাদালাহ ২২]

এ আয়াত প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে সবকিছুর উপর স্থান দিতে হবে। আর যারা আল্লাহ ও তার রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ থেকে অপর কিছুকে প্রাধান্য দিবে তাদের জন্য কঠোর সাবধানবাণী দেয়া হয়েছে। আর সেটা চেনার উপায় হচ্ছে, যদি দুটি বিষয় থাকে একটি নিজের মনের বিরুদ্ধে যায়, কিন্তু তাতে আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি রয়েছে। আর অপরটি নিজের মনের পক্ষে কিন্তু তাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি রয়েছে, এমতাবস্থায় যদি সে নিজের মনের পছন্দের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয় তবে বুঝা যাবে যে সে যালিম। তার উপর যে ওয়াজিব ছিল সেটাকে সে ত্যাগ করেছে। [সা’দী] পক্ষান্তরে যদি কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়, তবে এটা হবে প্রকৃত ত্যাগ ও কুরবানী। উম্মতের শ্রেষ্ঠ জামা'আতরূপে সাহাবায়ে কেরাম যে অভিহিত, তার মূলে রয়েছে তাদের এ ত্যাগ ও কুরবানী। তারা সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সম্পর্ককেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাই আফ্রিকার বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু, রোমের সোহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু, মক্কার কুরাইশ ও মদীনার আনসারগণ গভীর ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং ওহুদ ও বদর যুদ্ধে পিতা ও পুত্র এবং ভাই ও ভাইয়ের মধ্যে দাঁড়াতেও কুন্ঠা বোধ করেন নি।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতৃগণ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তাহলে তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবক করবে, তারাই হবে অত্যাচারী। [1]

[1] এটা সেই বিষয় যে ব্যাপারে কুরআন কারীমে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ২৮, ১১৮, সূরা মায়েদাহ ৫১, সূরা মুজাদালাহ ২২নং আয়াত দ্রষ্টব্য) এখানে জিহাদ ও হিজরতের আলোচনায় আনুষঙ্গিকভাবে (যেহেতু এ বিষয়ের গুরুত্ব স্পষ্ট তাই) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, জিহাদ ও হিজরতের ব্যাপারে তোমাদের বাপ-ভাই ইত্যাদির মহব্বত যেন বাধা সৃষ্টি না করে। কেননা, তারা যদি এখনো পর্যন্ত কাফের হয়, তাহলে তারা তোমাদের ভালোবাসার পাত্র হতেই পারে না। বরং তারা তোমাদের শত্রু। আর যদি তোমরা তাদের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখ, তাহলে স্মরণ রেখো যে, তোমরা অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে