৪ . আন-নিসা
৪:৯২ وَ مَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ اَنۡ یَّقۡتُلَ مُؤۡمِنًا اِلَّا خَطَـًٔا ۚ وَ مَنۡ قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَـًٔا فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مُّؤۡمِنَۃٍ وَّ دِیَۃٌ مُّسَلَّمَۃٌ اِلٰۤی اَهۡلِهٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ یَّصَّدَّقُوۡا ؕ فَاِنۡ كَانَ مِنۡ قَوۡمٍ عَدُوٍّ لَّكُمۡ وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مُّؤۡمِنَۃٍ ؕ وَ اِنۡ كَانَ مِنۡ قَوۡمٍۭ بَیۡنَكُمۡ وَ بَیۡنَهُمۡ مِّیۡثَاقٌ فَدِیَۃٌ مُّسَلَّمَۃٌ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ وَ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مُّؤۡمِنَۃٍ ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ شَهۡرَیۡنِ مُتَتَابِعَیۡنِ ۫ تَوۡبَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَكِیۡمًا ﴿۹۲﴾

আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

কোন মু’মিনকে হত্যা করা কোন মু’মিনের কাজ নয় তবে ভুলবশত হতে পারে, কেউ কোন মু’মিনকে ভুলক্রমে হত্যা করলে, একজন মু’মিন দাস মুক্ত করা বা তার পরিবারবর্গকে রক্তপণ দেয়া কর্তব্য, যদি না তারা ক্ষমা করে দেয়। যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মু’মিন হয় তবে একজন মু’মিন গোলাম আযাদ করা কর্তব্য, আর যদি সে এমন গোত্রের লোক হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে চুক্তি রয়েছে তবে তার পরিবারকে রক্তপণ দেয়া এবং একজন মু’মিন গোলাম আযাদ করা কর্তব্য এবং যে ব্যক্তি সঙ্গতিহীন সে একাদিক্রমে দু’ মাস রোযা পালন করবে। এটাই হল আল্লাহর নিকট তাওবাহ করার ব্যবস্থা, আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সুবিজ্ঞ। তাইসিরুল

কোন মু’মিনের উচিত নয় যে, ভ্রম ব্যতীত কোন মু’মিনকে হত্যা করে; যে কেহ ভ্রম বশতঃ কোন মু’মিনকে হত্যা করে তাহলে সে জনৈক মু’মিন দাসকে মুক্ত করে দিবে এবং তার আত্মীয় স্বজনকে হত্যার বিনিময় সমর্পণ করবে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয় এবং যদি সে তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ও মু’মিন হয় তাহলে জনৈক মু’মিন দাসকে মুক্তি দান করবে; এবং যদি সে তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে সন্ধিবদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয় তাহলে তার স্বজনদেরকে হত্যার বিনিময় অর্পণ করবে এবং জনৈক মু’মিন দাসকে মুক্ত করবে; কিন্তু যদি সে ওটায় অক্ষম হয় তাহলে আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য একাদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করবে। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মুজিবুর রহমান

And never is it for a believer to kill a believer except by mistake. And whoever kills a believer by mistake - then the freeing of a believing slave and a compensation payment presented to the deceased's family [is required] unless they give [up their right as] charity. But if the deceased was from a people at war with you and he was a believer - then [only] the freeing of a believing slave; and if he was from a people with whom you have a treaty - then a compensation payment presented to his family and the freeing of a believing slave. And whoever does not find [one or cannot afford to buy one] - then [instead], a fast for two months consecutively, [seeking] acceptance of repentance from Allah. And Allah is ever Knowing and Wise. Sahih International

৯২. কোন মুমিনকে হত্যা করা কোন মুমিনের কাজ নয়(১), তবে ভুলবশত করলে সেটা স্বতন্ত্র; এবং কেউ কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে এক দাস মুক্ত করা এবং তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় করা কর্তব্য, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শক্র পক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যদি সে এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাদের সাথে তোমরা অংগীকারাবদ্ধ তবে তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় এবং মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যে সঙ্গতিহীন সে একাদিক্ৰমে দু’ মাস সিয়াম পালন করবে।(২) তাওবাহর জন্য এগুলো আল্লাহর ব্যবস্থা এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(১) হত্যা সর্বমোট আট প্রকার। কেননা, নিহত ব্যক্তি হয়তো মুসলিম, কিংবা যিম্মী, অথবা চুক্তিবদ্ধ ও অভয়প্রাপ্ত, নতুবা দারুল হারবের কাফের হবে। এ চার অবস্থার কোন না কোন একটি হবেই। হত্যাকারী দু'প্রকারঃ হয় ইচ্ছাকৃত, না হয় ভুলবশতঃ। অতএব, মোট প্রকার হল আটটিঃ (এক) মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (দুই) মুসলিমকে ভুলবশতঃ হত্যা, (তিন) যিম্মীকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (চার) যিম্মীকে ভুলবশতঃ হত্যা, (পাঁচ) চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা, (ছয়) চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ভুলবশতঃ হত্যা (সাত) হারবী কাফেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা এবং (আট) হারবী কাফেরকে ভুলবশতঃ হত্যা। প্রথম প্রকারের পার্থিব বিধান হচ্ছে, কিসাস ওয়াজিব হওয়া। যা সূরা বাকারায় উল্লেখ করা হয়েছে [সূরা আল-বাকারাহ ১৭৮]

আর আখেরাতে এর পরিণতি সূরা আন-নিসা এর ৯৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ ভুলবশতঃ মুমিনকে হত্যার বর্ণনা আলোচ্য সূরা আন-নিসার ৯২ নং আয়াতে এসেছে। অর্থাৎ দিয়াত দিতে হবে। তৃতীয় প্রকার অর্থাৎ যিম্মীকে ইচ্ছাকৃত হত্যার হুকুম কি তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। চতুর্থ প্রকার অর্থাৎ যিম্মীকে ভুলবশতঃ হত্যার শাস্তি সূরা আন-নিসার ৯২ নং আয়াতের শেষে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সেটারও দিয়াত দিতে হবে। পঞ্চম প্রকার অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ কাফেরকে ইচ্ছাকৃত হত্যা। এর হুকুম সূরা আন-নিসার ৯০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। মূলতঃ তাদের এবং যিম্মীদের হুকুম একই। কেননা, ৯০ নং আয়াতে উল্লেখিত مِيثَاقٌ তথা চুক্তি অস্থায়ী ও স্থায়ী উভয় প্রকারই হতে পারে। অতএব, যিম্মী ও অভয়প্রাপ্ত কাফের এর অন্তর্ভুক্ত। সপ্তম ও অষ্টম প্রকারের বিধান স্বয়ং জিহাদ আইনসিদ্ধ হওয়ার মাসআলা থেকে জানা গেছে। কেননা, জিহাদে দারুল হারবের কাফেরদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবেই হত্যা করা হয়। অতএব, ভুলবশতঃ হত্যার বৈধতা আরো সন্দেহাতীতরূপে প্রমাণিত হবে।

(২) কিসাস ও দিয়াতের বিধান সংশ্লিষ্টতার দিক থেকে হত্যা কয়েক প্রকারঃ প্রথম প্রকার عَمَدٌ অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত হত্যা। এমন অস্ত্র দ্বারা, যা দ্বারা হত্যা করা যায়। এ ধরনের হত্যার শাস্তি হচ্ছে কিসাস। দ্বিতীয় প্রকার شِبْهِ عَمدٍ অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত হত্যার সাথে যা সাদৃশ্যপূর্ণ। এর সংজ্ঞা এইঃ ইচ্ছা করেই হত্যা করা, কিন্তু এমন অস্ত্র দ্বারা নয়, যা দ্বারা অঙ্গচ্ছেদ হতে পারে। তৃতীয় প্রকার خطأ অর্থাৎ ভুলবশতঃ হত্যা। ইচ্ছা ও ধারণায় ভুল হওয়া। যেমন দূর থেকে মানুষকে শিকার জন্তু কিংবা দারুল-হারবের কাফের মনে করে লক্ষ্য স্থির করতঃ গুলী করে ফেলা কিংবা লক্ষ্যচ্যুতি ঘটা। যেমন, জন্তুকে লক্ষ্য করেই তীর অথবা গুলী ছোড়া; কিন্তু তা কোন মানুষের গায়ে লেগে যাওয়া। এগুলো সব ভুলবশতঃ হত্যার অন্তর্ভুক্ত। এখানে ভুল বলে ‘ইচ্ছা নয়’ বোঝানো হয়েছে। অতএব, দ্বিতীয় ও তৃতীয় উভয় প্রকার হত্যাই এর অন্তর্ভুক্ত। উভয় প্রকারের মধ্যে গোনাহ ও রক্ত-বিনিময় বিভিন্ন রকম। দ্বিতীয় প্রকারের রক্ত-বিনিময় হচ্ছে একশ’ উট। উটগুলো চার প্রকারের হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকারে পাঁচটি করে উট থাকবে।

তৃতীয় প্রকারের রক্ত-বিনিময়ও একশ উট। কিন্তু উটগুলো হবে পাঁচ প্রকারের। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকারে বিশটি করে উট থাকবে। তবে রক্ত-বিনিময় মুদ্রার মাধ্যমে দিলে উভয় প্রকারে দশ হাজার দিরহাম অথবা এক হাজার দীনার দিতে হবে। ইচ্ছার কারণে দ্বিতীয় প্রকারের গোনাহ বেশী এবং তৃতীয় প্রকারের গোনাহ কম। অর্থাৎ শুধু অসাবধানতার গোনাহ হবে। কাফফারা অর্থাৎ ক্রীতদাস মুক্ত করা কিংবা রোযা রাখা স্বয়ং হত্যাকারীর করণীয় এবং রক্ত-বিনিময় হত্যাকারীর স্বজনদের যিম্মায় ওয়াজিব। শরীআতের পরিভাষায় তাদেরকে ‘আকেলাহ’ বলা হয়। এখানে প্রশ্ন করা উচিত হবে না যে, হত্যাকারীর অপরাধের বোঝা তার স্বজনদের উপর কেন চাপানো হয়? তারা তো নিরপরাধ। এর কারণ এই যে, হত্যাকারীর স্বজনরাও দোষী। তারা তাকে এ ধরণের উচ্ছৃংখল কাজ-কর্মে বাধা দেয়নি। রক্ত-বিনিময়ের ভয়ে ভবিষ্যতে তারা তার দেখাশোনা করতে ক্রটি করবে না। এর বাইরে অন্য এক প্রকার হত্যা রয়েছে। যাকে কোন কোন ফকীহ ভুলের পর্যায়ভুক্ত বলেছেন। যেমন, কেউ কূপ এমন স্থানে খনন করলো যে, একজন তাতে পড়ে মারা গেল। এর বিধান অবস্থাভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯২) কোন বিশ্বাসীকে হত্যা করা কোন বিশ্বাসীর জন্য সংগত নয়, [1] তবে ভুলবশতঃ হত্যা করে ফেললে সে কথা স্বতন্ত্র। [2] কেউ কোন বিশ্বাসীকে ভুলবশতঃ হত্যা করলে এক বিশ্বাসী দাস মুক্ত করা এবং তার (নিহতের) পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ করা বিধেয়। [3] তবে যদি তারা সাদাকা (ক্ষমা) করে দেয়, তাহলে ভিন্ন কথা।[4] কিন্তু যদি সে তোমাদের শত্রু পক্ষের লোক হয় এবং বিশ্বাসী হয়, তবে এক বিশ্বাসী দাস মুক্ত করা বিধেয়।[5] আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, যার সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ, তবে তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ এবং এক বিশ্বাসী দাস মুক্ত করা বিধেয়। [6] কেউ যদি (উক্ত দাস) না পায় (বা মুক্ত করার সামর্থ্য না রাখে), তাহলে সে একাদিক্রমে দু’মাস রোযা রাখবে।[7] তওবার (সংশোধনের) জন্য এ আল্লাহর বিধান। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[1] এখানে নেতিবাচক বাক্য নিষেধাজ্ঞার অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যা হারাম প্রতিপাদন করে। অর্থাৎ, একজন মু’মিনের অপর মু’মিনকে হত্যা করা নিষেধ ও হারাম। যেমন, [وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللهِ ] "আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেওয়া তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়।" (আহযাবঃ ৫৩) অর্থাৎ, কষ্ট দেওয়া হারাম।

[2] ভুলের কারণ অনেক ধরনের হতে পারে। উদ্দেশ্য হল, নিয়ত ও ইচ্ছা হত্যা করার না হয়; অনিচ্ছায় ভুলক্রমে যদি হয়ে যায়, তাহলে সে কথা স্বতন্ত্র।

[3] এখানে ভুলক্রমে হত্যা হয়ে গেলে তার জরিমানা কি, তা বলা হচ্ছে। দু’টি জিনিসের কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে, কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) ও ক্ষমা স্বরূপ। আর তা হল, একজন মুসলিম ক্রীতদাস স্বাধীন করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বান্দাদের অধিকার স্বরূপ। আর তা হল, ‘দিয়াত’ রক্তপণ আদায় করা। নিহত ব্যক্তির রক্তের বিনিময় স্বরূপ যে জিনিস তার (নিহতের) উত্তরাধিকারীদেরকে দেওয়া হয়, তাকে ‘দিয়াত’ (রক্তপণ) বলা হয়। এর পরিমাণ হাদীস অনুযায়ী ১০০টি উট অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য সোনা, রূপা বা দেশে প্রচলিত মুদ্রা।

দ্রষ্টব্যঃ স্মরণ থাকে যে, ইচ্ছাকৃত হত্যায় ‘কি·সাস’ অথবা ‘দিয়াত মুগাল্লাযা’ হবে। আর ‘দিয়াত মুগাল্লাযা’র পরিমাণ ১০০টি উট যা বয়স ও তার (ভালো-মন্দ)গুণ অনুযায়ী তিন প্রকারের বা তিন মানের হবে। কিন্তু ভুলক্রমে হত্যায় কেবল ‘দিয়াত’ আছে, ‘কি·সাস’ (রক্তের বিনিময়ে রক্ত) নেই। এই ‘দিয়াত’এর পরিমাণ ১০০টি উট যাতে কোন কড়া শর্ত নেই। তাছাড়া এই ‘দিয়াত’এর মূল্য সুনানে আবূ দাউদের হাদীসে ৮০০ দীনার অথবা ৮ হাজার দিরহাম এবং তিরমিযীর বর্ণনায় ১২ হাজার দিরহাম বলা হয়েছে। অনুরূপ উমার (রাঃ) তাঁর খেলাফত কালে ‘দিয়াত’এর মূল্যে কম-বেশী এবং বিভিন্ন মুদ্রা অনুযায়ী তা বিভিন্ন প্রকারের নির্দিষ্ট করেছিলেন। (ইরওয়াউল গালীল ৮ম খন্ড) যার অর্থ হল, ১০০টি উটের মূল দিয়াতের ভিত্তিতে তার মূল্য প্রত্যেক যুগ অনুসারে নির্ধারিত হবে। (বিস্তারিত জনার জন্য দ্রষ্টব্যঃ হাদীসের ভাষ্য ও ফিক্বাহ গ্রন্থাদি)

[4] ক্ষমা করে দেওয়াকে সাদাকা বলে আখ্যায়িত করার উদ্দেশ্য হল, ক্ষমা করার প্রতি উৎসাহিত করা।

[5] অর্থাৎ, এই অবস্থায় দিয়াত লাগবে না। এর কারণ কেউ কেউ এই বলেছেন যে, যেহেতু এর ওয়ারেস একজন কাফের যোদ্ধা, তাই সে মুসলিমের দিয়াতের অধিকারী হবে না। কেউ কেউ এর কারণ বলেছেন, এই মুসলিম ইসলাম গ্রহণ করার পর যেহেতু হিজরত করেনি, যার প্রতি সে সময় বড়ই তাকীদ করা হয়েছিল। সে এ ব্যাপারে গড়িমসি করেছে, তাই তার রক্তের মান অনেক কম। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[6] এটা আর এক তৃতীয় অবস্থা। পূর্বের অবস্থার ন্যায় এতেও কাফফারা এবং দিয়াত আছে। কেউ কেউ বলেছেন, যদি নিহত ব্যক্তি ‘মুআহিদ’ (চুক্তিবদ্ধ কাফির) হয়, তবে তার দিয়াত মুসলিমের দিয়াতের অর্ধেক হবে। কেননা, হাদীসে কাফেরের দিয়াত মুসলিমের দিয়াতের অর্ধেক বলা হয়েছে। কিন্তু অধিক সঠিক এটাই মনে হচ্ছে যে, এই তৃতীয় অবস্থাতেও মুসলিম নিহত ব্যক্তিরই বিধান বর্ণনা করা হচ্ছে।

[7] অর্থাৎ, ক্রীতদাস স্বাধীন করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে প্রথম এবং শেষের অবস্থায় দিয়াত আদায় করার সাথে সাথে ধারাবাহিকতার সাথে (কোন বিরতি ছাড়াই) একটানা দুই মাস রোযা রাখতে হবে। যদি তারই মাঝে কোন দিন রোযা ছেড়ে দেয়, তবে পুনরায় প্রথম থেকে আরম্ভ করা জরুরী হবে। তবে যদি কোন শরয়ী কারণে রোযা ছেড়ে থাকে, তাহলে পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করার প্রয়োজন হবে না। যেমন, মাসিক, নিফাস অথবা এমন কঠিন রোগ যা রোযা রাখার জন্য বাধা হয়। (নিষিদ্ধ দিনসমূহ, যাতে রোযা রাখা নিষেধ আছে।) সফর শরয়ী ওজর কি না, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫ . আল-মায়েদা
৫:৮৯ لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِكُمۡ وَ لٰكِنۡ یُّؤَاخِذُكُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰكِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِیۡكُمۡ اَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِكَ كَفَّارَۃُ اَیۡمَانِكُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَ احۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَكُمۡ ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۸۹﴾

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফ্ফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। আল-বায়ান

তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির) কাফফারা হল দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিষদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। তাইসিরুল

আল্লাহ তোমাদের অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেননা, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ঐ কসমসমূহের জন্য পাকড়া করবেন যেগুলিকে তোমরা (ভবিষ্যত বিষয়ের প্রতি) দৃঢ় কর, সুতরাং ওর কাফফারা হচ্ছে দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম ধরণের খাদ্য প্রদান করা, যা তোমরা নিজ পরিবারের লোকদেরকে খাইয়ে থাক, কিংবা তাদেরকে পরিধেয় বস্ত্র দান করা (মধ্যম ধরণের), কিংবা একজন গোলাম কিংবা বাঁদী মুক্ত করা। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখেনা সে (একাধারে) তিন দিন সিয়াম পালন করবে; এটা তোমাদের কসমসমূহের কাফ্ফারা যখন তোমরা কসম কর এবং অতঃপর ভঙ্গ কর এবং নিজেদের কসমসমূহকে রক্ষা করবে। এই রূপেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় বিধানসমূহ বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। মুজিবুর রহমান

Allah will not impose blame upon you for what is meaningless in your oaths, but He will impose blame upon you for [breaking] what you intended of oaths. So its expiation is the feeding of ten needy people from the average of that which you feed your [own] families or clothing them or the freeing of a slave. But whoever cannot find [or afford it] - then a fast of three days [is required]. That is the expiation for oaths when you have sworn. But guard your oaths. Thus does Allah make clear to you His verses that you may be grateful. Sahih International

৮৯. তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছে করে কর সেগুলোর জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। তারপর এর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি।(১) অতঃপর যার সামর্থ নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন।(২) তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফফারা। আর তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো।(৩) এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।

(১) এর সারমর্ম এই যে, ইয়ামীনে লাগভ-এর জন্য আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না অর্থাৎ কাফফারা ওয়াজিব করেন না। অন্য শপথের জন্য কাফফারা দিতে হবে। আর তা হল, তিনটি কাজের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় যে কোন একটি কাজ করতে হবে। (১) দশ জন দরিদ্রকে মধ্যশ্রেণীর খাদ্য সকাল-বিকাল দুবেলা খাওয়াতে হবে কিংবা (২) দশ জন দরিদ্রকে সতর ঢাকা পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দিতে হবে। উদাহরণতঃ একটি পাজামা অথবা একটি লুঙ্গি অথবা একটি লম্বা কোর্তা কিংবা (৩) কোন গোলামকে মুক্ত করে দেয়া। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]

(২) এরপর বলা হয়েছেঃ “কোন শপথ ভঙ্গকারী ব্যক্তি যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ না হয়, তবে তার জন্য কাফফারা এই যে সে তিন দিন রোযা রাখবে”। কোন কোন বর্ণনায় এখানে ধারাবাহিকভাবে তিনটি সিয়াম রাখার নির্দেশ রয়েছে। তাই ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ ও অন্যান্য কয়েকজন ইমামের মতে শপথের কাফফারা হিসেবে যে সিয়াম পালন হবে তা ধারাবাহিকভাবে হওয়া জরুরী। [ইবন কাসীর, কুরতুবী]

(৩) আলোচ্য আয়াতে শপথের কাফফারা প্রসঙ্গে প্রথমে إطعام শব্দ বলা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অর্থ যেমন খাদ্য খাওয়ানো হয়, তেমনি কাউকে খাদ্য দান করাও হয়। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য, কিন্তু যে সব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেই সকলের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন।[1] অতঃপর এর কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হল, দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান করা; যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও,[2] অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা,[3] কিংবা একটি দাস মুক্ত করা।[4] কিন্তু যার (এ সবে) সামর্থ্য নেই, তার জন্য তিন দিন রোযা পালন করা।[5] তোমরা শপথ করলে এটিই হল তোমাদের শপথের প্রায়শ্চিত্ত। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

[1] قسم (কসম) এর আরবী প্রতিশব্দ حلف বা يمين আর বহুবচন أحلاف বা أيمان যা শপথ অর্থে ব্যবহার হয়। এই কসম বা শপথ তিন ভাগে বিভক্ত; (ক) لغو (খ)  غموس (গ) مُعقَّدة (ক) لغو (নিরর্থক বা নিরুদ্দেশ) এমন কসম, যা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এবং কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে। (এমন কসম খাওয়া তার মুদ্রাদোষে পরিণত হয়।) এই ধরনের কসমের কোন কাফফারা বা ধর-পাকড় নেই। (খ) غموس (মিথ্যা কসম) যা মানুষ ধোঁকা দেওয়া ও প্রতারণা করার জন্য করে থাকে। এটা মহাপাপ; বরং অতি মহাপাপ। কিন্তু এ ধরনের কসমের কোন কাফফারা নেই। (গ) معقَّدة ঐ কসমকে বলা হয়, যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়ত সহকারে নিজের কথার সত্যতার তাকীদ ও তা পাকা করার জন্য ব্যবহার করে। যদি কেউ এ ধরনের কসম ভঙ্গ করে, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। এই কাফফারার কথা এই আয়াতের পরের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

[2] (কসমের কাফফারায়) প্রদেয় খাদ্যের পরিমাণ সম্বন্ধে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। আর এই জন্য উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ইমাম শাফেয়ী (রঃ) রমযান মাসের রোযা অবস্থায় স্ত্রী-সহবাস করার ফলে যে পরিমাণ কাফফারা দেওয়ার কথা হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে তা দলীলরূপে পেশ করে বলেন, প্রত্যেক মিসকীনকে এক ‘মুদ’ (প্রায় ৬২৫ গ্রাম) খাদ্য দান করতে হবে। কেননা নবী করীম (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে সহবাসের কাফফারা আদায় করার জন্য ১৫ সা’ (সাড়ে ৩৭ কিলো) খেজুর দিয়েছিলেন, যা ৬০ জন মিসকীনের মাঝে বণ্টন করতে বলা হয়েছিল। আর এক সা’ সমান চার মুদ (আড়াই কিলো) হয়। এই হিসাবে ১০ মিসকীনকে ১০ মুদ করে (অর্থাৎ প্রায় সওয়া ৬ কিলো) খাদ্যদ্রব্য কাফফারা হিসাবে প্রদান করতে হবে। ((মতান্তরে মাথাপিছু দু মুদ (সওয়া এক কিলো) খাদ্য দান করতে হবে। যেহেতু কা’ব বিন উজরার ইহরাম অবস্থায় মাথায় উকুন হলে মহানবী (সাঃ) তাঁকে বলেন, ‘‘তোমার মাথা মুন্ডন করে ফেল এবং তিন দিন রোযা রাখ, কিংবা প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া এক কিলো) করে ছয়টি মিসকীনকে খাদ্য দান কর, কিংবা একটি ছাগল কুরবানী কর।’’ (বুখারী ১৮১৬, মুসলিম ১২০১নং)

[3] পোশাক বা বস্ত্রদানের ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। বাহ্যতঃ এর ভাবার্থ এক জোড়া এমন কাপড়, যা পরিধান করে মানুষ নামায আদায় করতে পারে। আবার কোন কোন উলামা খাদ্য ও বস্ত্রদান উভয় ক্ষেত্রেই সমাজের প্রচলিত নিয়ম-নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন।

[4] কোন কোন উলামা ভুল করে হত্যা করার ফলে যে রক্তপণ দিতে হয় তার উপর অনুমান করে মুক্তিযোগ্য দাস-দাসীর ক্ষেত্রে ঈমানের শর্তারোপ করেছেন। কিন্তু ইমাম শওকানী বলেন, আয়াতটি ব্যাপক, আর এর মধ্যে মুমিন ও কাফের উভয়ই শামিল।

[5] অর্থাৎ, উল্লিখিত তিনটি এখতিয়ারের মধ্যে একটি কেউ যদি পালন করতে না পারে, তাহলে তাকে তিন দিন রোযা রাখতে হবে। আর এটাই তার কসমের কাফফারা হয়ে যাবে। (উক্ত তিনটির মধ্যে একটিতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।) আবার রোযা রাখার ব্যাপারেও উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে; কেউ বলেন, ধারাবাহিকভাবে পরপর তিনদিন রোযা রাখতে হবে। আবার কেউ বলেন; একদিন পর পর বা বিলম্ব করে (অর্থাৎ একটি রাখার পর বিলম্ব করে তারপর আরেকটি রাখতে পারে।) উভয় অবস্থা জায়েয বা বৈধ।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৫৮ . আল-মুজাদালা
৫৮:৩ وَ الَّذِیۡنَ یُظٰهِرُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِهِمۡ ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا قَالُوۡا فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا ؕ ذٰلِكُمۡ تُوۡعَظُوۡنَ بِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ﴿۳﴾

আর যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে অতঃপর তারা যা বলেছে তা থেকে ফিরে আসে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আল-বায়ান

যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, অতঃপর তারা যে কথা বলেছে তা প্রত্যাহার করে নেয় তবে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে তাদেরকে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এর দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন। তাইসিরুল

যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘‘যিহার’’ করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাহলে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করতে হবে - এই নির্দেশ তোমাদেরকে দেয়া হল। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবগত। মুজিবুর রহমান

And those who pronounce thihar from their wives and then [wish to] go back on what they said - then [there must be] the freeing of a slave before they touch one another. That is what you are admonished thereby; and Allah is Acquainted with what you do. Sahih International

৩. আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে(১), তবে একে অন্যকে স্পর্শ করার আগে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এ দিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া যাচ্ছে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা يَعُودُونَ শব্দের অর্থ করেছেন يندمون অর্থাৎ একথা বলার পর তারা অনুতপ্ত হয় এবং স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করতে চায়। [দেখুন: বাগভী] এই আয়াত থেকে আরও জানা গেল যে, স্ত্রীর সাথে মেলামেশা হালাল হওয়ার উদ্দেশ্যেই কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। খোদ যিহার কাফফারার কারণ নয়। বরং যিহার করা এমন গোনাহ, যার কাফ্‌ফারা হচ্ছে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আয়াত শেষে (وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ) বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই কোনো ব্যক্তি যদি যিহার করার পর স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করতে না চায়, তবে কোনো কাফফারা দিতে হবে না। তবে স্ত্রীর অধিকার ক্ষুন্ন করা না জায়েয। স্ত্রী দাবী করলে কাফফারা আদায় করে মেলামেশা করা অথবা তালাক দিয়ে মুক্ত করা ওয়াজিব। স্বামী স্বেচ্ছায় এরূপ না করলে স্ত্রী আদালতে রুজু হয়ে স্বামীকে এরূপ করতে বাধ্য করতে পারে। [দেখুন: কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে,[1] তাহলে (এর প্রায়শ্চিত্ত) একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে[2] একটি দাসের মুক্তিদান। এর দ্বারা তোমাদেরকে সদুপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন।

[1] এখন এই বিধানকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে। রুজু’ বা প্রত্যাহার করা মানেঃ স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চাওয়া।

[2] অর্থাৎ, সহবাস করার পূর্বে কাফফারা আদায় করবে। (ক) একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে। (খ) তা না পারলে লাগাতার কোন বিরতি ছাড়াই দু’ মাস রোযা রাখবে। যদি রাখতে রাখতে মধ্যখানে কোন শরীয়তী কারণ ছাড়াই রোযা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পুনরায় আবার নতুনভাবে প্রথম থেকে দু’ মাসের রোযা পূর্ণ করতে হবে। আর শরীয়তী কারণ বলতে যেমন, অসুস্থতা বা সফরে যাওয়া ইত্যাদি। (গ) যদি লাগাতার দু’মাস রোযা রাখতে না পারে, তবে ষাটজন মিসকীনকে (এক বেলা) আহার করাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রত্যেক মিসকীনকে দুই মুদ্দ (অর্ধসা’ অর্থাৎ, সওয়া এক কিলো), আবার কেউ বলেন, এক মুদ্দ (গম বা চাল) দিলেই যথেষ্ট হবে। তবে কুরআনের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খাবার পেটপুরে খাওয়াতে হবে অথবা পেট ভরে যায় এতটা পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ সকল মিসকীনকে একই সাথে খাওয়ানোও জরুরী নয়, বরং একাধিক কিস্তীর মাধ্যমে এ সংখ্যা পূরণ করা যেতে পারে। (ফাতহুল ক্বাদীর) তবে এটা জরুরী যে, যতক্ষণ না নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে সহবাস করা জায়েয হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে