২২ . আল-হজ্জ
২২:২৭ وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡكَ رِجَالًا وَّ عَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ كُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ ﴿ۙ۲۷﴾

‘আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’। আল-বায়ান

আর মানুষের মাঝে হাজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে, আর সব (পথক্লান্ত) শীর্ণ উটের পিঠে, বহু দূরের গভীর পর্বত সংকুল পথ বেয়ে তাইসিরুল

এবং মানুষের কাছে হাজ্জের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে ও সর্ব প্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে – মুজিবুর রহমান

And proclaim to the people the Hajj [pilgrimage]; they will come to you on foot and on every lean camel; they will come from every distant pass - Sahih International

২৭. আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন(১), তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে(২);

(১) ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম-এর প্রতি তৃতীয় আদেশ এই যে, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দিন যে, বায়তুল্লাহর হজ্জ তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। ইবনে আবী হাতেম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম-কে হজ্জ ফরয হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরয করলেনঃ এখানে তো জনমানবহীন প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই; যেখানে জনবসতি আছে। সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌছবে? জবাবে আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বে পৌছানোর দায়িত্ব আমার। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলে আল্লাহ তা'আলা তা উচ্চ করে দেন।

কোন কোন বর্ণনায় আছে, তিনি আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে আঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্বপশ্চিমে মুখ করে বললেনঃ “লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তা গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর এই গৃহের হজ ফরয করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন কর।” এই বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম-এর এই আওয়াজ আল্লাহ তা’আলা বিশ্বের কোণে কোণে পৌছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয়; বরং ভবিষ্যতে কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী ছিল, তাদের প্রত্যেকের কান পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌছে দেয়া হয়। যার যার ভাগ্যে আল্লাহ্ তা'আলা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ) এ বলেছে। অর্থাৎ হাজির হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ ইবরাহিমী আওয়াজের জবাবই হচ্ছে হজ্জে ‘লাব্বাইকা’ বলার আসল ভিত্তি। [দেখুন: তাবারীঃ ১৪/১৪৪, হাকীম মুস্তাদরাকঃ ২/৩৮৮]

(২) এ আয়াতে সেই প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে, যা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর ঘোষণাকে সব মানবমণ্ডলী পর্যন্ত পৌছানোর কারণে কেয়ামত পর্যন্তের জন্য কায়েম হয়ে গেছে। তা এই যে, বিশ্বের প্রতিটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মানুষ বায়তুল্লাহর দিকে চলে আসবে; কেউ পদব্রজে, কেউ সওয়ার হয়ে। যারা সওয়ার হয়ে আসবে, তারাও দূর-দূরান্ত দেশ থেকে আগমন করবে। ফলে তাদের সওয়ারীর জন্তুগুলো কৃশকায় হয়ে যাবে। পরবর্তী নবীগণ এবং তাদের উম্মতগণও এই আদেশের অনুসারী ছিলেন। ঈসা আলাইহিস সালাম-এর পর যে সুদীর্ঘ জাহেলিয়াতের যুগ অতিবাহিত হয়েছে, তাতেও আরবের বাসিন্দারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকা সত্বেও হজ্জের বিধান তেমনিভাবে পালন করেছে, যেমন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত ছিল। যদিও পরবর্তীতে আরবরা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় হজ্জের সঠিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে সমস্ত ভুলের সংশোধন করে দিয়েছিলেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) এবং মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটসমূহের পিঠে (সওয়ার হয়ে), [1] তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে। [2]

[1] যা খাবারের অভাব, সফরের দূরত্ব ও ক্লান্তির জন্য ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

[2] এটি আল্লাহর কুদরতের মহিমা যে, মক্কার পাহাড়-চূড়া হতে উচ্চারিত সেই অনুচ্চ আহবান পৃথিবীর কোণায় কোণায় পৌঁছে গেছে; প্রত্যেক হজ্জ ও উমরাহ সম্পাদনকারী হজ্জ ও উমরার সময় সেই আহবানে ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দিয়ে থাকেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে