সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ৮ - মাক্কী

৭ : ৮ وَ الۡوَزۡنُ یَوۡمَئِذِ ۣالۡحَقُّ ۚ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۸﴾

আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারি হবে তারাই হবে সফলকাম। আল-বায়ান

সেদিনের ওজন হবে ঠিক ঠিক। ফলে যাদের পাল্লা ভারী হবে তারা সফলকাম হবে। তাইসিরুল

আর সেদিন (কিয়ামাতের দিন) ন্যায় ও সঠিকভাবে (প্রত্যেকের ‘আমল) ওযন করা হবে, সুতরাং যাদের (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে কৃতকার্য ও সফলকাম। মুজিবুর রহমান

And the weighing [of deeds] that Day will be the truth. So those whose scales are heavy - it is they who will be the successful. Sahih International

৮. আর সেদিন ওজন(১) যথাযথ হবে।(২) সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।(৩)

(১) সেদিনের সে দাঁড়িপাল্লায় কোন অপরাধীর অপরাধ বাড়িয়ে দেয়া হবে না। আর কোন নেককারের নেক কমিয়ে দেয়া হবে না। [আদওয়াউল বায়ান] অন্য আয়াতেও আল্লাহ সেটা বলেছেন, “আর কেয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না এবং কাজ যদি শস্য দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও তা আমরা উপস্থিত করব।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭] তবে আল্লাহ তা'আলা কোন কোন নেক বান্দার আমলকে বহুগুণ বর্ধিত করবেন। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।” [সূরা আন-নিসা: ৪০] অনুরূপভাবে ‘হাদীসে বিতাকাহ’ নামে বিখ্যাত হাদীসেও [দেখুন, ইবন মাজাহঃ ৪৩০০; তিরমিযী ২১২৭] সেটা বর্ণিত হয়েছে।

(২) এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ “সেদিন যে ভাল-মন্দ কাজকর্মের ওজন হবে তা সত্য সঠিকভাবেই হবে।” এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এতে মানুষ ধোঁকায় পড়তে পারে যে, যেসব বস্তু ভারী, সেগুলোর ওজন ও পরিমান হতে পারে। মানুষের ভাল-মন্দ কাজকর্ম কোন জড় পদার্থ নয় যে, এগুলোকে ওজন করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় কাজকর্মের ওজন কিরূপে করা হবে? উত্তর এই যে, প্রথমতঃ আল্লাহ্ তা'আলা সর্বশক্তিমান। তিনি সব কিছুই করতে পারেন। অতএব, আমরা যা ওজন করতে পারি না আল্লাহ্ তা'আলাও তা ওজন করতে পারবেন, এটা বিচিত্র কিছু নয়। দ্বিতীয়তঃ আজকাল জগতে ওজন প্রায়োজন নেই।

এসব নবাবিস্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে আজকাল এমন বস্তুও ওজন করা যায়, যা ইতোপূর্বে ওজন করার কল্পনাও করা যেত না। আজকাল বাতাসের চাপ এবং বৈদ্যুতিক প্রবাহও ওজন করা যায়। এমনকি শীত-গ্রীষ্ম পর্যন্ত ওজন করা হয়। এগুলোর মিটারই এদের দাড়িপাল্লা। যদি আল্লাহ তা'আলা স্বীয় অসীম শক্তি-বলে মানুষের কাজকর্ম ওজন করে নেন, তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। হাদীসে রয়েছে যে, যদি কোন বান্দার ফরয কাজসমূহে কোন ক্রটি পাওয়া যায়, তবে রাব্বুল আলামীন বলবেনঃ দেখ, তার নফল কাজও আছে কি না। নফল কাজ থাকলে ফরযের ক্রটি নফল দ্বারা পূরণ করা হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৬৫]

আমলের ওজন পদ্ধতিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন কিছু মোটাআ লোক আসবে। তাদের মূল্য আল্লাহ্‌র কাছে মশার পাখার সমানও হবে না। এ কথার সমর্থনে কুরআনুল কারীমের এ আয়াত পাঠ করলেন। (فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا) অর্থাৎ কেয়ামতের দিন আমি তাদের কোন ওজন স্থির করবো না। [বুখারীঃ ৪৪৫২, মুসলিমঃ ২৭৮৫] আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসায় বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার পা দু’টি বাহ্যতঃ যতই সরু হোক, যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, কেয়ামতের দাড়িপাল্লায় তার ওজন ওহুদ পর্বতের চাইতেও বেশী হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৪২০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, দুটি বাক্য উচ্চারণের দিক দিয়ে খুবই হালকা; কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী এবং আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। বাক্য দুটি হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’, ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম’। [বুখারীঃ ৭৫৬৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ’ বললে আমলের দাড়িপাল্লার অর্ধেক ভরে যায় আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে বাকী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৬০, ৫/৩৬৫; সুনান দারমীঃ ৬৫৩] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমলের ওজনের বেলায় কোন আমলই সচ্চরিত্রতার সমান ভারী হবে না’। [আবু দাউদঃ ৪৭৯৯; তিরমিযীঃ ২০০৩] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যায়, তার আমলের ওজনে দুটি কিরাত রেখে দেয়া হবে। [বুখারীঃ ১২৬১]। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এই কিরাতের ওজন হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান। [মুসলিমঃ ৬৫৪] কেয়ামতে আমলের ওজন সম্পর্কে এ ধরণের বহু হাদীস রয়েছে।

(৩) মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলী দুটি অংশে বিভক্ত হবে। একটি ইতিবাচক বা সৎকাজ এবং অন্যটি নেতিবাচক বা অসৎকাজ। ইতিবাচক অংশের অন্তর্ভুক্ত হবে সত্যকে জানা ও মেনে নেয়া এবং সত্যের অনুসরণ করে সত্যের খাতিরে কাজ করা। আখেরাতে এটিই হবে ওজনদার, ভারী ও মূল্যবান। আর সে মূল্যবান কাজের ফলাফলও মূল্যবান হবে। এ আয়াতে তা উল্লেখ না হলেও অন্য আয়াতে সেটা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে, সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে।” [সূরা আল-কারি'আহ: ৬–৭] অর্থাৎ জান্নাতে।

অন্যদিকে সত্য থেকে গাফিল হয়ে অথবা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষ নিজের নফস-প্রবৃত্তি বা অন্য মানুষের ও শয়তানের অনুসরণ করে অসত্য পথে যা কিছুই করে, তা সবই নেতিবাচক অংশে স্থান লাভ করবে। আর এ নেতিবাচক অংশটি কেবল যে মূল্যহীন হবে তাই নয়, বরং এটি মানুষের ইতিবাচক অংশের মর্যাদাও কমিয়ে দেবে। কাজেই মানুষের জীবনের সমুদয় কার্যাবলীর ভাল অংশ যদি তার মন্দ অংশের ওপর বিজয় লাভ করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কিছু দেবার পরও তার হিসেবে কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবেই আখেরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) সেদিন ওজন ঠিকভাবেই করা হবে, যাদের ওজন ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান