সূরাঃ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة - আয়াত নং - ৪৮ মাদানী

২ : ৪৮ وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا لَّا تَجۡزِیۡ نَفۡسٌ عَنۡ نَّفۡسٍ شَیۡئًا وَّ لَا یُقۡبَلُ مِنۡهَا شَفَاعَۃٌ وَّ لَا یُؤۡخَذُ مِنۡهَا عَدۡلٌ وَّ لَا هُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۴۸﴾

আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। আল-বায়ান

তোমরা সেদিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারো উপকারে আসবে না এবং কারও সুপারিশ গৃহীত হবে না এবং কারও নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবে না আর তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। তাইসিরুল

এবং তোমরা সেই দিনের ভয় কর, যে দিন এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি হতে কিছুমাত্র উপকৃত হবেনা এবং কোন ব্যক্তি হতে কোন সুপারিশও গৃহীত হবেনা, কোন ব্যক্তি হতে কোন বিনিময়ও গ্রহণ করা হবেনা এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবেনা। মুজিবুর রহমান

And fear a Day when no soul will suffice for another soul at all, nor will intercession be accepted from it, nor will compensation be taken from it, nor will they be aided. Sahih International

৪৮. আর তোমরা সে দিনের তাকওয়া অবলম্বন কর যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না(১)। আর কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না(২) এবং কারো কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না। আর তারা সাহায্যও প্রাপ্ত হবে না(৩)।

১.  অর্থাৎ কেউ অপর কারও পক্ষ থেকে কোন কিছু আদায় করবে না। [তাবারী] তাকওয়া অবলম্বন কর এবং ভয় কর সে দিনকে, যখন কোন পিতা তার সন্তানের পক্ষ থেকে কিছু আদায় করবে না, অনুরূপ কোন সন্তান সেও তার পিতার পক্ষ থেকে আদায়কারী হবে না [সূরা লুকমান: ৩৩] তাছাড়া হাদীসেও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ঐ বান্দাকে রহমত করুন, যার কাছে তার কোন ভাইয়ের কোন ইযযত আবরুর উপর হামলা জনিত যুলুম, অথবা তার সম্পদ ও সম্মানের উপর আঘাত ছিল, তারপর সে সেটা থেকে নিজেকে বিমুক্ত করতে পেরেছে, ঐ দিনের পূর্বেই যে দিন কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। বরং যদি তার কোন নেকী থাকে তবে তা থেকে তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর যদি নেকী না থাকে তবে তার উপর মাযমুমের পাপসমূহ চাপিয়ে দেয়া হবে।” [বুখারী: ৬৫৩৪]

২. আয়াত থেকে বাহ্যতঃ বোঝা যাচ্ছে যে, আখেরাতে শাফা’আত বা সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। মূলত: ব্যাপারটি এরকম নয়। এ আয়াতের উদ্দেশ্য শুধু কাফের মুশরিক, আহলে কিতাব ও মুনাফিকদের জন্য কোন শাফা’আত বা সুপারিশ কাজে আসবে না। যেমন পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ যার উপর সন্তুষ্ট নয় তার জন্য তারা সুপারিশ করবে না।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ২৮] আল্লাহ কাদের উপর সন্তুষ্ট নয় তা আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করে বলেছেন, “আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কুফরতে সন্তুষ্ট নন। [সূরা আয-যুমার: ৭] সুতরাং কাফেরদের জন্য কোন সুপারিশ নয়। আর কাফেররাও হাশরের দিন স্বীকৃতি দিবে যে, তাদের জন্য কোন সুপারিশকারী নেই, তারা বলবে “আমাদের তো কোন সুপারিশকারী নেই” [সূরা আশ-শু'আরা: ১০০] তাদের সম্পর্কে আল্লাহ নিজেও বলেছেন, “সুতরাং সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের কোন উপকার দিবে না”। [সূরা আল-মুদাসসির: ৪৮] এতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যারা কুফরী, শির্কী, নিফাকী অবস্থায় মারা যাবে তাদের জন্য কোন শাফা’আত বা সুপারিশ নেই।

পক্ষান্তরে মুমিনদের জন্য শাফা’আত বা সুপারিশ অবশ্যই হবে। যা কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু তাদের জন্য সুপারিশের ব্যাপারেও শর্ত হচ্ছে, তন্মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে ঈমান অবশিষ্ট থাকতে হবে। মূলত: এ ঈমানের কারণেই শাফাআত তথা সুপারিশের হকদার হয়েছে। যার সামান্যতম ঈমান আছে তার উপর আল্লাহর সামান্যতম সস্তুষ্টি অবশিষ্ট আছে। সুতরাং যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তার জন্য আল্লাহর সামান্যতম সন্তুষ্টি হলেও থাকতে হবে। যদিও অন্য অপরাধের কারণে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারে নি। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, শাফা’আত বা সুপারিশ করার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, “এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করে?” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫] তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, যিনি সুপারিশ করবেন তার উপরও আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, “আর আসমানসমূহে বহু ফিরিশতা রয়েছে; তাদের সুপারিশ কিছুমাত্র ফলপ্রসূ হবে না, তবে আল্লাহর অনুমতির পর; যার জন্য তিনি ইচ্ছে করেন ও যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট” [সূরা আন-নাজম: ২৬] অর্থাৎ যিনি সুপারিশ করবেন তার কথা-বার্তা ও সুপারিশ আল্লাহর মনঃপুত হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ছাড়া কারো সুপারিশ সেদিন কোন কাজে আসবে না” [সূরা ত্বা-হাঃ ১০৯] এ তিনটি শর্ত পাওয়া যাওয়া সাপেক্ষে নবী-রাসূল, শহীদগণ ও নেককার মুমিনগণ শাফা'আত বা সুপারিশ করবেন। যা বহু হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত।

৩. আলোচ্য আয়াতে যেদিনের কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো কেয়ামতের দিন। সাধারণতঃ মানুষের কোন শাস্তির হুকুম হলে তা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ নিম্নলিখিত চারটি উপায় অবলম্বন করেঃ

১) একজনের পরিবর্তে অন্যজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ্ তাআলা এখানে “কেউ কারো পক্ষ থেকে আদায় করে না” বলে কেয়ামতের দিন এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।

২) অথবা, একজনের জন্য অপরজন সুপারিশ করে শাস্তি থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে। আল্লাহ্ তা'আলা এ সম্ভাবনাও নাকচ করে বলেনঃ “কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না”।

৩) অথবা, বিনিময় আদায়ের মাধ্যমে কেউ কেউ শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়। সে বিনিময় দু'ধরনের হতে পারে, ক) অন্যের কাছ থেকে কিছু সওয়াব লাভ করে তার বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করা। খ) টাকা-পয়সা ইত্যাদির বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করা। আল্লাহ্ তা'আলা “কারো কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না", এ কথা বলে এমন সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন।

৪) অথবা, শাস্তির হুকুমের বিপরীতে অপরাধীকে সাহায্যকারী দল থাকে, যারা তাকে তা না মানতে বা তার শাস্তি লাঘব করতে সাহায্য করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা “আর তারা কোন প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না” এ কথা দ্বারা এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। এর কারণ হচ্ছে, তারা ঈমান আনেনি। কিন্তু যদি তাদের ঈমান থাকত তবে শর্তসাপেক্ষে এ চারটির কোন কোনটি কাজে আসত। মোটকথা, দুনিয়াতে সাহায্য করার যত পদ্ধতি আছে ঈমান ব্যতীত আখেরাতে সেগুলোর কোনটাই কার্যকর হবে না।

তাফসীরে জাকারিয়া

৪৮। তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারোর কোন কাজে আসবে না, কারোও সুপারিশ সবীকৃত হবে না, কারোও নিকট হতে ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্যও পাবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান