৫৬ সূরাঃ আল-ওয়াকিয়া | Al-Waqi'a | سورة الواقعة - আয়াত নং - ৭৩ - মাক্কী

৫৬ : ৭৩ نَحۡنُ جَعَلۡنٰهَا تَذۡكِرَۃً وَّ مَتَاعًا لِّلۡمُقۡوِیۡنَ ﴿ۚ۷۳﴾

একে আমি করেছি এক স্মারক ও মরুবাসীর প্রয়োজনীয় বস্তু। আল-বায়ান

আমি তাকে (অর্থাৎ আগুনকে) করেছি স্মারক (যা জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) আর মরুর অধিবাসীদের জন্য দরকারী ও আরামের বস্তু। তাইসিরুল

আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু। মুজিবুর রহমান

We have made it a reminder and provision for the travelers, Sahih International

৭৩. আমরা এটাকে করেছি স্মারক(১) এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু।(২)

(১) মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, আমরা এ আগুনকে স্মরণিকা করেছি, এ আগুন আখেরাতের আগুনকে স্মরণ করিয়ে দিবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের এ আগুন যা তোমরা জালিয়ে থাক তা জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ। সাগর দিয়ে দু’বার এটাকে ঠাণ্ডা করা হয়েছে। যদি তা না হতো তবে তা থেকে কেউ উপকৃত হতে পারত না। [মুসনাদে আহমাদ ২/২৪৪, সহীহ ইবনে হিব্বান ৭৪৬৩, মুসনাদে হুমাইদী ১১২৯, অনুরূপ বর্ণনা বুখারী ৩২৬৫, মুসলিম: ২৮৪৩]

(২) উপসংহারে সবগুলোর সার-সংক্ষেপ এরূপ বৰ্ণিত হয়েছে যে, “আমরা এটাকে করেছি স্মারক এবং পথচারীদের জন্য উপভোগ্য”। আয়াতে مُقْوِينَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ভাষাভিজ্ঞ পণ্ডিতগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন মরুভূমিতে উপনীত মুসাফির বা পথচারী। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। কারো কারো মতে এর অর্থ হচ্ছে, সেসব মানুষ যারা প্রান্তরে অবস্থান করে খাবার পাকানো, আলো পাওয়া কিংবা তা গ্ৰহণ করার কাজে আগুন ব্যবহার করে সে সমস্ত মুসাফিরদেরকে বোঝানো হয়েছে। কারণ এ সমস্ত মরুচারী ও মুসাফিররা খাবারের জন্য যেমন আগুনের প্রয়োজন বোধ করে তেমনি নিজের শরীরের তাপমাত্ৰা ঠিক রাখার জন্যও আগুনের প্রতি বেশী মুখাপেক্ষী। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, এসব সৃষ্টি আমার শক্তি-সামর্থ্যের ফসল। সুতরাং তোমরা ভেবে দেখা কার গুণ-গান করবে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৩) আমি একে করেছি উপদেশের বিষয়[1] এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু। [2]

[1] এইভাবে যে, এর প্রভাব ও উপকারিতা বিস্ময়কর ব্যাপার। পৃথিবীর অসংখ্য জিনিস প্রস্তুত করণে এর প্রয়োজনীয়তার কথা অনস্বীকার্য। এটা আমার অসীম ক্ষমতার একটি নিদর্শন। তাছাড়া যেভাবে আমি পৃথিবীতে আগুন সৃষ্টি করেছি, অনুরূপ পরকালেও সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমি রাখি। আর সেই আগুনের তাপ পৃথিবীর আগুনের তুলনায় ৬৯ গুণ বেশী হবে। যেমন এ কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

[2] مُقْوِيْنَ হল مُقْوِيْ এর বহুবচন। অর্থঃ قَوَآءٌ অর্থাৎ নির্জন মরুভূমিতে প্রবেশকারী। উদ্দেশ্য মুসাফির। অর্থাৎ, মুসাফির মরুভূমি এবং বন-জঙ্গলে এই গাছগুলো দ্বারা উপকৃত হয়। এ থেকে আলো ও তাপ গ্রহণ করে এবং ইন্ধন হিসাবেও কাজে লাগায়। কেউ কেউ مُقْوِين বলতে বুঝিয়েছেন এমন সব দরিদ্র মানুষকে, যাদের পেট ক্ষুধার কারণে খালি থাকে। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, مُسْتَمْتِعِيْنَ (উপকারিতা অর্জনকারী)। এতে ধনী, গরীব, গৃহবাসী ও মুসাফির সবাই এসে যায়। আর সবাই আগুন থেকে উপকৃত হয়। এই জন্যই হাদীসে যে তিনটি জিনিসকে সার্বজনীন রাখার ও তা থেকে কাউকে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে পানি ও ঘাস সহ আগুনও বটে। (আবূ দাউদঃ ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়, ইবনে মাজাহ) ইমাম ইবনে কাসীর এই মতটিকেই বেশী পছন্দ করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান