৩০ সূরাঃ আর-রুম | Ar-Rum | سورة الروم - আয়াত নং - ৪ - মাক্কী

৩০ : ৪ فِیۡ بِضۡعِ سِنِیۡنَ ۬ؕ لِلّٰهِ الۡاَمۡرُ مِنۡ قَبۡلُ وَ مِنۡۢ بَعۡدُ ؕ وَ یَوۡمَئِذٍ یَّفۡرَحُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ﴿۴﴾

কয়েক বছরের মধ্যেই*। পূর্বের ও পরের সব ফয়সালা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে, আল-বায়ান

কয়েক (তিন থেকে নয়) বছরের মধ্যেই; (কোন্ কাজ হবে) আগে ও (কোন্ কাজ হবে) পরে সে ফয়সালা আল্লাহরই। সেদিন মু’মিনরা আনন্দ করবে। তাইসিরুল

কয়েক বছরের মধ্যেই। পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহরই। আর সেদিন মু’মিনরা হর্ষোৎফুল্ল হবে – মুজিবুর রহমান

Within three to nine years. To Allah belongs the command before and after. And that day the believers will rejoice Sahih International

* بضع سنين তিন থেকে দশ বছর। এ আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে, অনধিক নয় বছরের মধ্যে রোমানরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করবে। ৬২৩-২৪ খৃ এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়। আর সে বছরই বদর যুদ্ধে মুসলিমরা মুশরিকদেরকে পরাজিত করে।

৪. কয়েক বছরের মধ্যেই।(১) আগের ও পরের সব ফয়সালা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনগণ খুশী হবে(২),

(১) এই সূরায় রোমক ও পারসিকদের যুদ্ধের কাহিনী আলোচিত হয়েছে। এই যুদ্ধে উভয়পক্ষই ছিল কাফের। তাদের মধ্যে কারও বিজয় এবং কারও পরাজয় বাহ্যতঃ ইসলাম ও মুসলিমদের জন্যে কোন কৌতুহলের বিষয় ছিল না। কিন্তু উভয় কাফের দলের মধ্যে পারসিকরা ছিল অগ্নিপূজারী মুশরিক এবং রোমকরা ছিল নাসারা আহলে কিতাব। ফলে এরা ছিল মুসলিমদের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী। [ইবন কাসীর]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কায় অবস্থানকালে পারসিকরা রোমকদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে। হাফেজ ইবনে হাজার প্রমুখের উক্তি অনুযায়ী তাদের এই যুদ্ধ শাম দেশের আযরূ’আত ও বুসরার মধ্যস্থলে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ চলাকালে মক্কার মুশরিকরা পারসিকদের বিজয় কামনা করত। কেননা, শির্ক ও প্রতিমা পুজায় তারা ছিল পারসিকদের সহযোগী। অপরপক্ষে মুসলিমদের আন্তরিক বাসনা ছিল রোমকরা বিজয়ী হোক। কেননা, ধর্ম ও মাযহাবের দিক দিয়ে তারা ইসলামের নিকটবর্তী ছিল। [সা'দী]

কিন্তু ফল হল এই যে, তখনকার মত পারসিকরা যুদ্ধে জয়লাভ করল। এমনকি তারা কনষ্টাণ্টিনোপলও অধিকার করে নিল এবং সেখানে উপাসনার জন্যে একটি অগ্নিকুণ্ড নির্মাণ করল। এই ঘটনায় মক্কার মুশরিকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল এবং মুসলিমদেরকে লজ্জা দিতে লাগল যে, তোমরা যাদের সমর্থন করতে তারা হেরে গেছে। ব্যাপার এখানেই শেষ নয়; বরং আহলে কিতাব রোমকরা যেমন পারসিকদের মোকাবেলায় পরাজয় বরণ করেছে, তেমনি আমাদের মোকাবিলায় তোমরাও একদিন পরাজিত হবে। এতে মুসলিমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত হয়। [সা'দী]

সূরা রূমের প্রাথমিক আয়াতগুলো এই ঘটনা সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। এসব আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, কয়েক বছর পরেই রোমকরা পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে। আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এসব আয়াত শুনলেন, তখন মক্কার চতুষ্পার্শ্বে এবং মুশরিকদের সমাবেশ ও বাজারে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা করলেন, তোমাদের হর্ষোৎফুল্ল হওয়ার কোন কারণ নেই। কয়েক বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করবে। মুশরিকদের মধ্যে উবাই ইবনে খালফ কথা ধরল এবং বলল, তুমি মিথ্যা বলছ। এরূপ হতে পারে না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহর দুশমন, তুই-ই মিথ্যাবাদী। আমি এই ঘটনার জন্যে বাজি রাখতে প্ৰস্তুত আছি। যদি তিন বছরের মধ্যে রোমকরা বিজয়ী না হয়, তবে আমি তোকে দশটি উষ্ট্রী দেব।

উবাই এতে সম্মত হল। একথা বলে আবু বকর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে ঘটনা বিবৃত করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তো তিন বছরের সময় নির্দিষ্ট করিনি। কুরআনের এই জন্যে بضع শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তুমি যাও এবং উবাইকে বল যে, আমি দশটি উষ্ট্রীর স্থলে একশ উষ্ট্রী বাজি রাখছি, কিন্তু সময়কাল তিন বছরের পরিবর্তে নয় বছর এবং কোন কোন বর্ণনা মতে সাত বছর নির্দিষ্ট করছি। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আদেশ পালন করলেন এবং উবাইও নতুন চুক্তিতে সম্মত হল। [তিরমিযী: ৩১৯৩, ৩১৯৪] বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে এই ঘটনা সংঘটিত হয় এবং সাত বছর পূর্ণ হওয়ার পর বদর যুদ্ধের সময় রোমকরা পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে।

(২) অর্থাৎ যেদিন রোমকরা পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে, সেদিন আল্লাহর সাহায্যের কারণে মুসলিমরা উৎফুল্ল হবে। বাক্যবিন্যাস পদ্ধতির দিক দিয়ে বাহ্যতঃ এখানে রোমকদের সাহায্য বোঝানো হয়েছে। তারা যদিও কাফের ছিল, কিন্তু অন্য কাফেরদের তুলনায় তাদের কুফর কিছুটা হাল্কা ছিল। কাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সাহায্য করা অবান্তর নয়। বিশেষতঃ যখন তাদেরকে সাহায্য করলে মুসলিমরাও আনন্দিত হয় এবং কাফেরদের মোকাবিলায় তাদের জিত হয়। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) কয়েক বছরের মধ্যেই, আগের ও পরের সকল সিদ্ধান্ত আল্লাহরই। সেদিন বিশ্বাসীরা আনন্দিত হবে;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান