সূরাঃ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة - আয়াত নং - ১৭ মাদানী

২ : ১৭ مَثَلُهُمۡ كَمَثَلِ الَّذِی اسۡتَوۡقَدَ نَارًا ۚ فَلَمَّاۤ اَضَآءَتۡ مَا حَوۡلَهٗ ذَهَبَ اللّٰهُ بِنُوۡرِهِمۡ وَ تَرَكَهُمۡ فِیۡ ظُلُمٰتٍ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ ﴿۱۷﴾

তাদের উপমা ঐ ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের আলো কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দিলেন এমন অন্ধকারে যে, তারা দেখছে না। আল-বায়ান

তাদের উদাহরণ, যেমন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালালো, তা যখন তার চারদিক আলোকিত করল আল্লাহ তখন তাদের জ্যোতি অপসারণ করে দিলেন এবং তাদেরকে এমন ঘন অন্ধকারে ফেলে দিলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পায় না। তাইসিরুল

এদের অবস্থা ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল, অতঃপর যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত হল, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, সুতরাং তারা কিছুই দেখতে পায়না। মুজিবুর রহমান

Their example is that of one who kindled a fire, but when it illuminated what was around him, Allah took away their light and left them in darkness [so] they could not see. Sahih International

১৭. তাদের উপমা(১), ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো; তারপর যখন আগুন তার চারদিক আলোকিত করল, আল্লাহ তখন তাদের আলো নিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে ঘোর অন্ধকারে ফেলে দিলেন, যাতে তারা কিছুই দেখতে পায়না।

১. আল্লাহ্ তা'আলা এখানে মুনাফেকদের সম্পর্কে দুটো উপমা দিয়েছেন। ইবনে কাসীর বলেন, দু’টি উপমা দু’ধরনের মুনাফিকদের জন্য দেয়া হয়েছে। প্রথম উপমার মর্মার্থ হলোঃ মুনাফেকরা হলো এমন ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি অন্ধকারে থাকার কারণে অনেক কষ্টে আগুন জ্বলিয়েছে, যার আলোতে সে ভাল-মন্দ চিনতে পেরেছে। এবং আশা করছে যে, সে এ আলো তার জন্য স্থায়ী হবে। ইত্যবসরে আল্লাহ্ তার কাছ থেকে সে আলো নিয়ে গেলেন। ফলে সে অন্ধকারে হিমশিম খেতে লাগল। যতটুকু আলো পেয়েছিল তাও চলে গেল, কিন্তু রয়ে গেল কষ্টদায়ক আগুন। এতে সে কয়েক ধরণের অন্ধকারে পতিত হলো- রাতের অন্ধকার, মেঘের অন্ধকার, বৃষ্টির অন্ধকার ও আলোর পরে হঠাৎ করে সৃষ্ট অন্ধকার।

অনুরূপভাবে মুনাফেকদের অবস্থা হলো- তারা ঈমানদার থেকে ঈমানের আলো পেয়েছে। তাদের কাছে সে আলোর লেশমাত্রও ছিল না। তারপর যখন তারা সাময়িকভাবে এর দ্বারা আলোকিত ও উপকৃত হলো, পার্থিব জীবনে হত্যা থেকে নিষ্কৃতি পেল, সম্পদ রক্ষা পেল ও সাময়িক নিরাপত্তা লাভ করলো। ইত্যবসরে তাদের উপর মৃত্যু এসে পড়ল। ফলে তারা সে আলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হলো। তাদের উপর আপতিত হলো যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা, চিন্তা ও শাস্তি। এতে করে সে কয়েক ধরনের অন্ধকারে পতিত হল- কবরের অন্ধকার, কুফরীর অন্ধকার, নিফাকের অন্ধকার, গোনাহর অন্ধকার সর্বোপরি জাহান্নামের অন্ধকার। যে অন্ধকার থেকে তার কোন মুক্তি নেই। [তাফসীর আস-সাদী]

আতা বলেন, এ আয়াতাংশ মুনাফিকদের দৃষ্টান্ত। তারা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে ভালো মন্দ দেখে ও চিনে বটে, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি অন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা তা কবুল করতে পারে না। ইবনে যায়েদ বলেন, তারা যখন ঈমান আনল, তাদের অন্তরে ঈমানের আলো জ্বলল, যেভাবে আগুন জ্বালালে চারদিক আলোকিত হয় ঠিক সেভাবে। এরপর যখন তারা কাফের হয়ে গেল, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের ঈমানের নূর বিলুপ্ত করে দিলেন, যেখানে আগুন নিভে গেলে আলো চলে যায়। ফলে তারা অন্ধকারে ডুবে গিয়ে কিছুই দেখতে পেল না। [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৭। তাদের দৃষ্টান্ত, যেমন এক ব্যক্তি অগ্নি-প্রজ্বলিত করল; তা যখন তার চারদিক আলোকিত করল, আল্লাহ তখন তাদের জ্যোতিঃ অপসারিত করলেন এবং তাদেরকে ঘোর অন্ধকারে ফেলে দিলেন; তারা কিছুই দেখতে পায় না।

(1) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) গণ এর অর্থ এই বর্ণনা করেন যে, যখন রসূল (সাঃ) মদীনায় গমন করলেন, তখন কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু তারা সত্বর আবার মুনাফিক্ব হয়ে যায়। তাদের দৃষ্টান্ত সেই লোকের মত যে অন্ধকারে ছিল; তারপর সে বাতি জ্বালাল। ফলে তার চতুর্দিক আলোকিত হয়ে গেল এবং উপকারী ও অপকারী জিনিস তার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। হঠাৎ সে বাতি নিভে গেল এবং পুনরায় চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। এই অবস্থা হল মুনাফিক্বদের। প্রথমে তারা শির্কের অন্ধকারে ডুবে ছিল। তারপর মুসলিম হয়ে আলোয় আসে। হালাল, হারাম এবং ভাল-মন্দ জেনে যায়। অতঃপর তারা আবার কুফরী ও নিফাক্বের দিকে ফিরে যায় ফলে সমস্ত আলো নিভে যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান