১৬ সূরাঃ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل - আয়াত নং - ৮ - মাক্কী

১৬ : ৮ وَّ الۡخَیۡلَ وَ الۡبِغَالَ وَ الۡحَمِیۡرَ لِتَرۡکَبُوۡهَا وَ زِیۡنَۃً ؕ وَ یَخۡلُقُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸﴾

আর (তিনি সৃষ্টি করেছেন) ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা, তোমাদের আরোহণ ও শোভার জন্য এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন কিছু, যা তোমরা জান না। আল-বায়ান

তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গর্দভ সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা ওগুলোতে আরোহণ করতে পার আর শোভা-সৌন্দর্যের জন্যও; তিনি পয়দা করেন অনেক কিছু যা তোমাদের জানা নেই। তাইসিরুল

তোমাদের আরোহনের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, খচ্চর, গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও। মুজিবুর রহমান

And [He created] the horses, mules and donkeys for you to ride and [as] adornment. And He creates that which you do not know. Sahih International

৮. আর তোমাদের আরোহনের জন্য এবং শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা(১) এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা জান না।(২)

(১) উট, বলদ ইত্যাদির বোঝা বহনের কথা আলোচিত হওয়ার পর ঐসব জন্তুর কথা প্রসঙ্গতঃ উত্থাপন করা উপযুক্ত মনে করা হয়েছে, যেগুলো সৃষ্ট হয়েছে সওয়ারী ও বোঝা বহনের উদ্দেশ্যে। বলা হয়েছে, আমি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা এগুলোতে সওয়ার হও। আর তোমাদের শোভা ও সৌন্দর্যের উপকরণ হওয়াও এগুলোকে সৃষ্টি করার অন্যতম কারণ। [তাবারী]।

(২) অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ জিনিস এমন আছে যা মানুষের উপকার করে যাচ্ছে। অথচ কোথায় কত সেবক তার সেবা করে যাচ্ছে বরং কি সেবা করছে সে সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানে না। সওয়ারীর তিনটি জন্তু ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার কথা বিশেষভাবে বর্ণনা করার পর পরিশেষে অন্যান্য যানবাহন সম্পর্কে ভবিষ্যত পদবাচ্যে ব্যবহার করে বলা হয়েছে- (وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ঐসব বস্তু সৃষ্টি করবেন, যেগুলো তোমরা জান না। যেমন, কীট-পতঙ্গ ও যমীনে অন্যান্য প্রাণী। যেগুলো যমীনের নীচে থাকে বা শুষ্ক স্থানে বা সমুদ্রে অবস্থান করে। যেগুলো মানুষ দেখতে পায়নি বা শুনতেও পায়নি। [কুরতুবী] কারও কারও মতে এখানে আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতে জান্নাতীদের জন্য এবং জাহান্নামে জাহান্নামীদের জন্য যা সৃষ্টি করবেন বা করেছেন তা-ই বুঝিয়েছেন। [কুরতুবী] তাছাড়া সম্ভবত: এখানে ঐসব নবাবিস্কৃত যানবাহন ও গাড়ী বোঝানো হয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব প্রাচীনকালে ছিল না; যেমন, রেল, মটর, বিমান ইত্যাদি।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা।[1] আর তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও। [2]

[1] অর্থাৎ, তাদের সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য ও উপকারিতা তাদেরকে বাহনরূপে ব্যবহার করা। তা সত্ত্বেও সেসব সৌন্দর্যের কারণও বটে। ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার কারণে কোন কোন ফকীহ প্রমাণ করেছেন যে, ঘোড়াও হারাম যেমন গাধা ও খচ্চর হারাম। তাছাড়া খাদ্যরূপে ব্যবহার্য পশুর উল্লেখ প্রথমেই এসে গেছে। সেই কারণে এই আয়াতে যে সব পশুর উল্লেখ রয়েছে তা শুধু বাহনের জন্য। কিন্তু তাঁদের এই দলীল সঠিক নয়, কারণ সহীহ হাদীসে ঘোড়ার গোশত হালাল হওয়ার কথা প্রমাণিত। জাবের (রাঃ) বলেন নবী (সাঃ) ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারীঃ যবেহ অধ্যায়, মুসলিম শিকার অধ্যায়) তাছাড়া সাহাবায়ে কিরামগণ নবী (সাঃ) এর উপস্থিতিতে খাইবার ও মদীনায় ঘোড়া যবেহ করে গোশত রান্না করেছেন ও খেয়েছেন। আর নবী (সাঃ) নিষেধ করেননি। (দেখুন মুসলিম উক্ত অধ্যায়, আহমাদ ৩/৩৫৬, আবু দাউদঃ খাদ্য অধ্যায়) এই কারণে অধিকাংশ উলামা ঘোড়ার গোশত হালাল বলেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর) এখানে ঘোড়ার উল্লেখ শুধু বাহনরূপে করা হয়েছে। কারণ তার অধিক ব্যবহার এই উদ্দেশেই হয়ে থাকে এবং তা পৃথিবীতে সর্বযুগে এত বেশি মূল্যবান ও দামী থেকেছে যে তাকে খাবারের জন্য খুব কম ব্যবহার করা হয়েছে। ছাগল-ভেড়ার মত তা সাধারণতঃ যবেহ করে ভক্ষণ করা হয় না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বিনা স্পষ্ট প্রমাণে তাকে হারাম সাব্যস্ত করা যেতে পারে।

[2] ভূগর্ভে, সমুদ্রে, মরুভূমিতে এবং জঙ্গলে মহান আল্লাহ অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করে থাকেন, যার জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। এর সঙ্গে নব আবিষ্কৃত সকল বাহনও এসে যায়, যা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে তাঁরই সৃষ্ট বস্তুকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষ তৈরী করেছে। যেমন বাস, ট্টেন, রেলগাড়ি, জলজাহাজ ও বিমান ইত্যাদি অসংখ্য যানবাহন এবং আরো অনেক কিছু, যা ভবিষ্যতে আশা করা যায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান