১৫ সূরাঃ আল-হিজর | Al-Hijr | سورة الحجر - আয়াত নং - ১৮ - মাক্কী

১৫ : ১৮ اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَهٗ شِهَابٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۸﴾

তবে যে গোপনে শোনে, তৎক্ষণাৎ সুস্পষ্ট জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তার পিছু নেয়। আল-বায়ান

কিন্তু কেউ চুরি করে (খবর) শুনতে চাইলে উজ্জ্বল অগ্নিশিখা তার পশ্চাদ্ধাবণ করে। তাইসিরুল

আর কেহ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা। মুজিবুর রহমান

Except one who steals a hearing and is pursued by a clear burning flame. Sahih International

১৮. কিন্তু কেউ চুরি করে(১) শুনতে চাইলে(২) প্রদীপ্ত শিখা(৩) তার পশ্চাদ্ধাবন করে।

(১) অর্থাৎ যেসব শয়তান তাদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকদেরকে গায়েবের খবর এনে দেবার চেষ্টা করে থাকে, যাদের সাহায্যে অনেক জ্যোতিষী, গণক ও ফকির বেশধারী বহুরূপী অদৃশ্য জ্ঞানের ভড়ং দেখিয়ে থাকে, গায়েবের খবর জানার কোন একটি উপায়-উপকরণও আসলে তাদের আয়ত্বে নেই। তারা চুরি-চামারি করে কিছু শুনে নেবার চেষ্টা অবশ্যি করে থাকে।

(২) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মাঝে মাঝে ফিরিশতারা আকাশের নীচে মেঘমালার স্তর পর্যন্ত অবতরণ করত এবং আসমানের সংবাদাদী নিয়ে পরস্পর আলোচনা করত। শয়তানরা শূন্যে আত্মগোপন করে এসব সংবাদ শুনত এবং গণকদের কাছে তা গোপনে পৌছিয়ে দিত। গণকরা এগুলোর সাথে শত মিথ্যা নিজেদের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে তা বলে বেড়ায়।” [বুখারীঃ ৩২১০, ২২২৮] পরে উল্কাপাতের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন আসমানে কোন বিষয়ের ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতাগণ তার নির্দেশের আনুগত্য স্বরূপ তাদের ডানাগুলোকে মারতে থাকে তাতে পাথরের উপর জিঞ্জির পড়ার মত শব্দ অনুভূত হয়। তারপর যখন তাদের অন্তর থেকে ভয়ভীতি দূর হয় তখন তারা বলতে থাকেঃ তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তারাই আবার বলেঃ হক্ক বলেছেন, তিনি বড়, মহান। কান লাগিয়ে কথাচোরগণ এ কথোপকথন শুনতে পায়।

আর এসব কান লাগিয়ে শ্রবণকারীগণ একটির উপর একটি থাকে। বর্ণনাকারী সুফিয়ান তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিলেন। তিনি তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে ফাঁক করলেন এবং একটির উপর আর একটি স্থাপন করলেন। তারপর কখনো কখনো উজ্জল আলোর শিখা সে কান লাগিয়ে শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে কথা পৌছানোর পূর্বেই আঘাতে করে জালিয়ে দেয়। আবার কখনো কখনো আলোর শিখা তার কাছে পৌঁছার আগেই সে তার নীচের সাথীকে তা পৌঁছিয়ে দেয়। এভাবে পৌছাতে পৌছাতে যমীন পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর যাদুকর বা গণকের মুখে রেখে দেয়। তখন সে যাদুকর তথা গণক সে সংবাদের সাথে শতটি মিথ্যা মিশ্রিত করে বর্ণনা করে। আর এভাবেই তার কোন কোন কথা সত্যে পরিণত হয়। তারপর লোকেরা বলতে থাকেঃ সে কি আমাদেরকে বলেনি যে, অমুক অমুক দিন এই সেই হবে, তারপর আমরা কি সঠিক পাইনি? আসলে সেটা ছিল ঐ বাক্য যা আসমান থেকে শোনা গিয়েছিল। [বুখারীঃ ৪৭০১]

(৩) شهاب এর আভিধানিক অর্থ উজ্জ্বল আগুনের শিখা। এখানে বলা হয়েছে, (شِهَابٌ مُبِينٌ) কুরআনের অন্য জায়গায় এজন্য (شِهَابٌ ثَاقِبٌ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [সূরা আস-সাফফাতঃ ১০] আবার কোথায়ও বলা হয়েছে, (شِهَابًا رَصَدًا) [সূরা আলজিনঃ ৯] আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যে আকাশে তারকা খসে পড়ল। তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাহেলিয়াত যুগে অর্থাৎ ইসলাম-পূর্বকালে তোমরা তারকা খসে যাওয়াকে কি মনে করতে? তারা বললেনঃ আমরা মনে করতাম যে, বিশ্বে কোন ধরণের অঘটন ঘটবে অথবা কোন মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ কিংবা জন্মগ্রহণ করবেন। তিনি বললেনঃ এটা অর্থহীন ধারণা। কারো জন্ম-মৃত্যুর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব জ্বলন্ত অঙ্গার শয়তানদেরকে বিতাড়নের জন্য নিক্ষেপ করা হয়। [মুসলিমঃ ২২২৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত উল্কা। [1]

[1] এর অর্থ এই যে, শয়তানেরা আকাশে কথা শোনার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে তাদের উপর জলন্ত উল্কা এসে পড়ে। যার কারণে কেউ মারা যায়, কেউ পালাতে সক্ষম হয়, আবার কেউ কিছু শুনে ফেলে। এর ব্যাখ্যা হাদীসে এভাবে এসেছে; নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন মহান আল্লাহ আকাশে কোন কিছুর ফায়সালা করেন, তখন তা শুনে ফিরিশতাগণ অক্ষমতা ও দুর্বলতা প্রকাশ স্বরূপ ডানা নাড়তে শুরু করেন, যেন তা লোহার শিকল দ্বারা কোন পাথরের উপর মারার শব্দ। অতপর যখন তাদের মন থেকে আল্লাহর ভয় কিছুটা কমে আসে তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমাদের প্রভু কি বললেন? তাঁরা বলেন, তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন এবং তিনি সুমহান ও সুউচ্চ। তারপর সেই ফায়সালার কথা ঊর্ধ্ব থেকে নিম্ন আসমান পর্যন্ত ফিরিশতাবর্গ পরস্পর শোনাশুনি করেন। এই সময় শয়তানরাও তা শোনার জন্য চুপি চুপি গিয়ে কান পাতে এবং তারাও এক অপরের একটু দূরে থেকে তা শোনার চেষ্টা করে এবং কেউ কেউ এক আধটি শব্দ শুনে ফেলে ও পরে তা কোন গণকের কানে পৌঁছে দেয়। গণক সেই কথার সাথে আরও একশত মিথ্যা কথা মিলিয়ে মানুষের কাছে বর্ণনা করে। (সংক্ষেপে সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা হিজর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান