১২ সূরাঃ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف - আয়াত নং - ৫৮ - মাক্কী

১২ : ৫৮ وَ جَآءَ اِخۡوَۃُ یُوۡسُفَ فَدَخَلُوۡا عَلَیۡهِ فَعَرَفَهُمۡ وَ هُمۡ لَهٗ مُنۡكِرُوۡنَ ﴿۵۸﴾

আর ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে প্রবেশ করল। অতঃপর সে তাদেরকে চিনল, অথচ তারা তাকে চিনতে পারল না। আল-বায়ান

ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে হাযির হল। সে তাদেরকে চিনতে পারল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না। তাইসিরুল

ইউসুফের ভাইয়েরা এলো এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারলনা। মুজিবুর রহমান

And the brothers of Joseph came [seeking food], and they entered upon him; and he recognized them, but he was to them unknown. Sahih International

৫৮. আর(১) ইউসুফের ভাইয়েরা আসল এবং তার কাছে প্রবেশ করল।(২) অতঃপর তিনি তাদেরকে চিনলেন, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না।

(১) এখানে আবার সাত আট বছরের ঘটনা মাঝখানে বাদ দিয়ে বর্ণনার ধারাবাহিকতা এমন এক জায়গা থেকে শুরু করে দেয়া হয়েছে যেখান থেকে বনী ইসরাঈলের মিসরে স্থানান্তরিত হবার এবং ইয়াকুব আলাইহিস সালামের হারানো ছেলের সন্ধান পাওয়ার সূত্রপাত হয়। মাঝখানে যেসব ঘটনা বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলোর সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে, ইউসুফ আলাইহিস সালামের রাজত্বের প্রথম সাত বছর মিসরে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হয়। এ সময় তিনি আসন্ন দুর্ভিক্ষ সমস্যা দূর করার জন্য পূর্বাহ্নে এমন সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করেন যার পরামর্শ তিনি স্বপ্নের তা’বীর বলার পর বাদশাহকে দিয়েছিলেন। এরপর শুরু হয় দুর্ভিক্ষের যামানা। [ইবন কাসীর]

(২) এ আয়াত থেকে পরবর্তী কয়েক আয়াতে ইউসুফ-ভ্রাতাদের খাদ্যশস্যের জন্যে মিসরে আগমন উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, দুর্ভিক্ষ শুধু মিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং দূর-দূরান্ত অঞ্চল এর করালগ্রাসে পতিত হয়েছিল। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর জন্মভূমি কেনান ছিল ফিলিস্তিনের একটি অংশ। এ এলাকাটিও দুর্ভিক্ষের করালগ্রাস থেকে মুক্ত ছিল না।

ফলে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর পরিবারেও অনটন দেখা দেয়। সাথে সাথেই মিসরের এ সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে যে, সেখানে স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর কানে এ সংবাদ পৌছে যে, মিসরের বাদশাহ অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি জনসাধারণের মধ্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করেন। অতঃপর তিনি পুত্রদেরকে বললেনঃ তোমরাও যাও এবং মিসর থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে আসো। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র বিনইয়ামীন ছিলেন ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর সহোদর।

ইউসুফ নিখোঁজ হওয়ার পর ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর স্নেহ ও ভালবাসা তার প্রতিই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। তাই সাস্তুনা ও দেখাশোনার জন্য তাকে নিজের কাছে রেখে দিলেন। দশ ভাই কেনান থেকে মিসর পৌছল। তারা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে চিনল না; কিন্তু ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদেরকে ঠিকই চিনে ফেললেন। এরপর যে কোনভাবেই হোক ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদের কাছ থেকে তাদের আরেক ছোট ভাইয়ের তথ্য উদঘাটন করলেন। তারপর ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাদেরকে রাজকীয় মেহমানের মর্যাদায় রাখা এবং যথারীতি খাদ্যশস্য প্রদান করার আদেশ দিলেন। বন্টনের ব্যাপারে ইউসুফ 'আলাইহিস সালাম-এর রীতি ছিল এই যে, একবারে কোন এক ব্যক্তিকে এক উটের বোঝার চাইতে বেশী খাদ্যশস্য দিতেন না। হিসাব অনুযায়ী যখন তা শেষ হয়ে যেত, তখন পুনর্বার দিতেন। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) ইউসুফের ভাইগণ এল এবং তার নিকট উপস্থিত হল। সে তাদেরকে চিনল, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারল না। [1]

[1] এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ফল-ফসল-সমৃদ্ধ সাতটি বছর সমাপ্ত হয়ে দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হল, যা মিশর দেশের সমস্ত এলাকা ও শহরকে আক্রমণ করল, এমনকি কানআন পর্যন্ত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ল, যেখানে ইয়াকূব (আঃ) ও ইউসুফ (আঃ)-এর ভায়েরা বসবাস রত ছিলেন। ইউসুফ (আঃ) এই দুর্ভিক্ষের জন্য সুকৌশলের সাথে যে সুব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা সফল হল এবং শস্যপ্রাপ্তির জন্য সব দিক থেকে লোকজন তাঁর কাছে আসতে লাগল। ইউসুফ (আঃ)-এর প্রসিদ্ধি কানআন পর্যন্তও পৌঁছে গেল যে, মিসরের বাদশা এভাবে শস্য বিক্রি করছেন। সুতরাং পিতার আদেশে ইউসুফ (আঃ)-এর ভায়েরাও বাড়ি থেকে পুঁজি নিয়ে শস্য প্রাপ্তির জন্য রাজদরবারে উপস্থিত হলেন, যেখানে ইউসুফ (আঃ) রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ভায়েরা তাঁকে চিনতে পারেননি, কিন্তু তিনি তাঁদেরকে চিনে নিয়েছিলেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান