লগইন করুন
৭ সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ১৭০ - মাক্কী
আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং সালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট’ করি না। আল-বায়ান
যারা কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, আমি (এসব) সৎকর্মশীলদের কর্মফল কখনো বিনষ্ট করি না। তাইসিরুল
যারা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে; আমিতো সৎ কর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করিনা। মুজিবুর রহমান
But those who hold fast to the Book and establish prayer - indeed, We will not allow to be lost the reward of the reformers. Sahih International
১৭০. যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারন করে ও সালাত কায়েম করে, আমরা তো সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না।(১)
(১) পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে একটি প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা বিশেষতঃ বনী-ইসরাঈলের আলেম সম্প্রদায়ের নিকট থেকে তাওরাত সম্পর্কে নেয়া হয়েছিল যে, এতে কোন রকম পরিবর্তন কিংবা বিকৃতি সাধন করবে না এবং সত্য ও সঠিক বিষয় ছাড়া মহান রবের প্রতি অন্য কোন বিষয় আরোপ করবে না। আর এ বিষয়টি পূর্বেই উল্লেখিত হয়ে গিয়েছিল যে, বনী-ইসরাঈলের আলেমগণ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে স্বার্থাম্বেষীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাওরাতের বিধিবিধানের পরিবর্তন করেছে এবং তাদের উদ্দেশ্য ও স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাতলিয়েছে।
এখানে আলোচ্য এই আয়াতটিতে সে বর্ণনারই উপসংহার হিসাবে বলা হয়েছে যে, বনী-ইসরাঈলের সব আলেমই এমন নয়; কোন কোন আলেম এমনও রয়েছে যারা তাওরাতের বিধি-বিধানকে দৃঢ়তার সাথে ধরেছে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সৎকাজেও নিষ্ঠা অবলম্বন করেছে। আর যথারীতি সালাতও প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনি লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- আল্লাহ তাদের প্রতিদান বিনষ্ট করে দেন না, যারা নিজেদের সংশোধন করে। কাজেই যারা ঈমান ও আমলের উভয় ফরয আদায়ের মাধ্যমে নিজের সংশোধন করে নিয়েছে, তাদের প্রতিদান বা প্রাপ্য বিনষ্ট হতে পারে না। এ আয়াতে কয়েকটি লক্ষণীয় ও জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে-
প্রথমতঃ কিতাব বলতে এতে সে কিতাবই উদ্দেশ্য যার আলোচনা ইতোপূর্বে এসেছে অর্থাৎ তাওরাত। অর্থাৎ যারা তাদের কিতাবে যে নবীর কথা বলা হয়েছে সে অনুসারে ঈমান এনেছে। মুজাহিদ বলেন, এ অনুসারে এটি আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আর এও হতে পারে যে, এতে কুরআনকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যারা বর্তমান নাযিলকৃত কিতাবের অনুসরণ করে তাদের প্রচেষ্টা ও আমল নষ্ট হবার নয়। তখন উম্মতে মুহাম্মাদীই উদ্দেশ্য হবে। [বাগভী; জালালাইন: সা’দী] অথবা সমস্ত আসমানী কিতাবই উদ্দেশ্য। তখন অর্থ হবে, যাদেরকেই আমরা কিতাব দিয়েছি তারা যদি তাদের সময়কার কিতাব অনুসারে চলে আমরা তাদের কর্মকাণ্ড ও আমল নষ্ট করি না। আর বর্তমানে কুরআন অনুসারেই সকলকে চলতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। তাতে যত হুকুম আহকাম আছে তারা সেটার উপর যত্ন সহকারে আমল করে, এ ব্যাপারে তাদের কোন শৈথিল্য হয় না। যাদের আমল বিনষ্ট হয় না। তাদের পরিচয় হচ্ছে যে, তারা কঠোরভাবে এ কিতাবে বর্ণিত শরীআতের উপর আমল করে। [আইসারুত তাফসীর] সুতরাং একান্ত আদব ও সম্মানের সাথে অতি যত্ন সহকারে নিজের কাছে শুধু রেখে দিলেই তার উদ্দেশ্য সাধিত হয় না; বরং তার বিধি-বিধান ও নির্দেশাবলীর অনুবতীও হতে হবে।
তৃতীয় লক্ষণীয় বিষয় হল, এখানে একটিমাত্র বিধান সালাত প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেই ক্ষান্ত করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের বিধিবিধানসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান হল সালাত। [সা’দী] তদুপরি সালাতের অনুবর্তিতা আসমানী বিধানসমূহের অনুবর্তিতার বিশেষ লক্ষণ। এরই মাধ্যমে চেনা যায়, কে কৃতজ্ঞ আর কে কৃতঘ্ন। আর এর নিয়মানুবর্তিতার একটা বিশেষ কার্যকারিতাও রয়েছে যে, যে লোক সালাতে নিয়মানুবর্তী হয়ে যাবে, তার জন্য অন্যান্য বিধি-বিধানের নিয়মানুবর্তিতাও সহজ হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে যে লোক সালাতের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তী নয়, তার দ্বারা অন্যান্য বিধি-বিধানের নিয়মানুবর্তিতাও সম্ভব হয় না। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘সালাত হল দ্বীনের স্তম্ভ', [তিরমিযীঃ ২৬১৬] অর্থাৎ যার উপরে তার ইমারত রচিত হয়েছে, যে ব্যক্তি এই স্তম্ভকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে, সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছে, যে এ স্তম্ভকে বিধ্বস্ত করেছে, সে গোটা দ্বীনের ইমারতকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। যে সালাতের ব্যাপারে গাফলতি করে, সে যত তাসবীহ-ওযীফাই পড়ুক কিংবা যত প্রচেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহর নিকট সে কিছুই নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৭০) আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও নামায যথারীতি আদায় করে, নিশ্চয় আমি (তাদের মত) সংশোধনকারীদের শ্রমফল নষ্ট করি না। [1]
[1] তাদের মধ্যে যারা তাকওয়া, পরহেযগারি ও সাবধানতার পথ অবলম্বন করবে, কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করবে; যার অর্থঃ আসল তাওরাতের উপর আমল করে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতের উপর ঈমান আনবে, নামায ইত্যাদির উপর দৃঢ় থাকবে। তাহলে এমন সৎকর্মশীলদের কর্মফল আল্লাহ নষ্ট করবেন না। এখানে ঐ সকল আহলে কিতাবের (বিশেষভাবে ইয়াহুদীদের) কথা বর্ণনা রয়েছে। যারা কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করবে, নামায প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে এবং তাদের জন্য পরকালের সুসংবাদও রয়েছে; এর অর্থ হল, তারা যেন মুসলমান হয়ে যায় ও শেষনবীর রিসালাতের উপর ঈমান আনে। কারণ, এখন শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনা ছাড়া পরকালের সুসংবাদ লাভ সম্ভব নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান