সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ১৩৩ - মাক্কী

৭ : ১৩৩ فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمُ الطُّوۡفَانَ وَ الۡجَرَادَ وَ الۡقُمَّلَ وَ الضَّفَادِعَ وَ الدَّمَ اٰیٰتٍ مُّفَصَّلٰتٍ ۟ فَاسۡتَكۡبَرُوۡا وَ كَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۳۳﴾

সুতরাং আমি তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত নিদর্শনাবলী হিসাবে পাঠালাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। তার পরেও তারা অহঙ্কার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী কওম। আল-বায়ান

অতঃপর আমি তাদের উপর প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্তের বিপদ পাঠিয়েছিলাম সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে, কিন্তু তারা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করল। তারা ছিল এক অপরাধী জাতি। তাইসিরুল

অতঃপর আমি তাদের উপর প্লাবণ, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত ধারার শাস্তি পাঠিয়ে ক্লিষ্ট করি, ওগুলি ছিল আমার সুস্পষ্ট নিদর্শন, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত দাম্ভিকতা ও অহংকারেই মেতে রইল, তারা ছিল একটি অপরাধী জাতি। মুজিবুর রহমান

So We sent upon them the flood and locusts and lice and frogs and blood as distinct signs, but they were arrogant and were a criminal people. Sahih International

১৩৩. অতঃপর আমরা তাদের উপর তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত বিস্তারিত নিদর্শন হিসেবে প্রেরণ করি। এরপরও তারা অহংকার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।(১)

(১) ফিরআউনের জাদুকরদের সাথে সংঘটিত সে ঐতিহাসিক ঘটনার পরও মূসা 'আলাইহিস সালাম দীর্ঘ দিন যাবৎ মিসরে অবস্থান করে সেখানকার অধিবাসীদেরকে আল্লাহর বাণী শুনান এবং সত্য ও সরল পথের দিকে আহবান করতে থাকেন। এ সময়ে আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালামকে নয়টি নিদর্শন দান করেছিলেন। এগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ফিরআউনের সম্প্রদায়কে সতর্ক করে সত্য পথে আনা। আলোচ্য আয়াতে এই নয়টি নিদর্শন সম্পর্কেই বলা হয়েছে।

এই নয়টি নিদর্শনের মধ্যে প্রথম দুটি অর্থাৎ লাঠির সাপে পরিণত হওয়া এবং হাতের শুভ্রতা ফিরআউনের দরবারে প্রকাশিত হয়। আর এগুলোর মাধ্যমেই জাদুকরদের বিরুদ্ধে মূসা আলাইহিস সালাম জয়লাভ করেন। তারপরের একটি নিদর্শন যার আলোচনা পূর্ববর্তী আয়াতে করা হয়েছে তা ছিল ফিরআউনের সম্প্রদায়ের হঠকারিতা ও দুরাচরণের ফলে দুর্ভিক্ষের আগমন।

যাতে তাদের ক্ষেতের ফসল এবং বাগ-বাগিচার উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ফলে এরা অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মূসা আলাইহিস সালামের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তিলাভের দোআ করায়। কিন্তু দুর্ভিক্ষ রহিত হয়ে গেলে পুনরায় নিজেদের ঔদ্ধত্যে লিপ্ত হয় এবং বলতে শুরু করে যে, এই দুর্ভিক্ষ তো মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গী-সাথীদের অলক্ষণের দরুনই আপতিত হয়েছিল। আর এখন যে দুর্ভিক্ষ রহিত হয়েছে, তা হল আমাদের সুকৃতির স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। এমনটিই তো আমাদের প্রাপ্য।

তারপর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা আলাইহিস সালামকে আরো ছয়টি এমন নিদর্শন দেন যার উদ্দেশ্য ছিল ফিরআউনের সম্প্রদায়কে সৎপথে নিয়ে আসা। আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি তাদের উপর পাঠিয়েছি তুফান, পঙ্গপাল, ঘুন পোকা, ব্যাঙ এবং রক্ত। এতে ফিরআউনের সম্প্রদায়ের উপর আপতিত পাঁচ রকমের আযাবের কথা আলোচিত হয়েছে।

এসব আযাবে অসহ্য হয়ে সবাই মূসা আলাইহিস সালামের কাছে পাকাপাকি ওয়াদা করল যে, তারা এ সমস্ত আযাব থেকে মুক্তি পেলে মূসা আলাইহিস সালামের উপর ঈমান আনবে। মূসা আলাইহিস সালাম দোআ করলেন, ফলে তারা এ সমস্ত আযাব থেকে মুক্তি পেল। কিন্তু যে জাতির উপর আল্লাহর আযাব চেপে থাকে, তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা, জ্ঞান-চেতনা কোন কাজই করে না। কাজেই এ ঘটনার পরেও আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে এরা আবারও নিজেদের হঠকারিতায় আঁকড়ে বসল এবং ঈমান আনতে অস্বীকার করল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৩) অতঃপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি; এগুলি ছিল স্পষ্ট নিদর্শন।[1] কিন্তু তারা দাম্ভিকই রয়ে গেল, আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।

[1] طوفان (তুফান) বলতে বন্যা, প্লাবন, প্রচুর বৃষ্টিপাত, যাতে প্রতিটি জিনিস ডুবে যায়। অথবা অধিক মৃত্যু বোঝানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি ঘরে মাতম শুরু হয়। جراد পঙ্গপালকে বলে। ফসলের উপর পঙ্গপালের আক্রমণ ও অনিষ্টকারিতা সর্বজন-বিদিত। এই সমস্ত পঙ্গপাল তাদের ফসল ও ফলাদি খেয়ে শেষ করে ফেলত। قُمَّل উকুন যা মানুষের দেহ, পোশাক বা চুলে পাওয়া যায়। অথবা ঘুণ পোকা যা শস্যের অধিক অংশ খেয়ে নষ্ট করে দেয়। উকুনকে মানুষ ঘৃণা করে। আর বেশি পরিমাণে হলে মানুষ পেরেশান হয়ে যায়। আবার তা যদি শাস্তি স্বরূপ হয়, তাহলে তার কষ্ট অনুমেয়। অনুরূপ ঘুণ পোকা মানুষের রুযী ও আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ضفادع ضفدعة এর বহুবচন। যার অর্থ ব্যাঙ। যা পানিতে খাল ও ডোবায় জন্মায়। এই সমস্ত ব্যাঙ তাদের খাবারে, বিছানায়, গুদামজাত শস্যে এসে উপস্থিত হত; মোটকথা চারিদিকে শুধু ব্যাঙ আর ব্যাঙই নজরে আসত। যার কারণে তাদের খাওয়া, পান করা, শোয়া, আরাম করা সব হারাম হয়ে গিয়েছিল। دَم (রক্ত) এর অর্থ পানি রক্তে পরিণত হওয়া। ফলে তাদের পানি পান করা অসম্ভব হয়ে পড়ত। কেউ কেউ রক্ত বলতে নাক দিয়ে ঝরা রক্ত বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরার রোগ শুরু হয়। آيات مفصلات এগুলি স্পষ্ট ও আলাদা আলাদা মু’জিযা ছিল; যা সময়ের ব্যবধানে তাদের উপর এসেছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান