কুরআনের আয়াতের অনুবাদ/তাফসীর 'টি ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code

১১০ সূরাঃ আন-নাসর | An-Nasr | سورة النصر - আয়াত নং - ৩ মাদানী

১১০ : ৩ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ ؕؔ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا ﴿۳﴾

তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী। আল-বায়ান

তখন তুমি (শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশে) তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে আর তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তিনি বড়ই তাওবা কবূলকারী। তাইসিরুল

তখন তুমি তোমার রবের কৃতজ্ঞতা মূলক পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর; তিনিতো সর্বাপেক্ষা অধিক অনুতাপ গ্রহণকারী। মুজিবুর রহমান

Then exalt [Him] with praise of your Lord and ask forgiveness of Him. Indeed, He is ever Accepting of repentance. Sahih International

৩. তখন আপনি আপনার রবের প্ৰশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।(১)

(১) একাধিক হাদীস ও সাহাবীর উক্তিতে আছে যে, এ সূরায় রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত আছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বদরী সাহাবীগণের সাথে তার কাছে প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। তারা এটাকে মনে-প্ৰাণে মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা বলেই ফেলল, একে আবার আমাদের সাথে কেন? আমাদের কাছে তার সমবয়সী সন্তান-সন্ততি রয়েছে। তখন উমর বললেন, তোমরা তো জান সে কোত্থেকে এসেছে। তারপর একদিন তিনি তাদের মজলিসে তাকে ডেকে পাঠালেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমাকে তাদের মাঝে ডেকে আমাকে তাদের সাথে রাখার ব্যাপারটি স্পষ্ট করারই ইচ্ছা পোষণ করেছেন। অতঃপর উমর বললেন, তোমরা মহান আল্লাহর বাণী, “ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতিহ” সম্পর্কে কি বল? তাদের কেউ বলল, আমাদের বিজয় লাভ হলে যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই তা-ই বলা হয়েছে। আবার তাদের অনেকেই কিছু না বলে চুপ ছিল।

তখন তিনি আমাকে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! তুমি কি অনুরুপ বল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে কি বল? আমি বললাম, এটা তো রাসূলের মৃত্যুর সময়, যা তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে যাবে”, আর এটাই হবে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আলামত, “সুতরাং আপনি আপনার রবের সপ্ৰশংস তাসবীহ পাঠ করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চান; কেননা তিনিই তো তাওবা কবুলকারী”। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যা বললে তা ছাড়া এ সূরা সম্পর্কে আর কিছু আমি জানি না।” [বুখারী: ৪৯৭০] সুতরাং সূরার অর্থ হচ্ছে, আপনার দুনিয়াতে অবস্থান করার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেছে, তাবলীগ তথা পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব পালিত হয়েছে। অতএব, আপনি তাসবীহ ও ইস্তেগফারে মনোনিবেশ করুন। [ইবনুল কায়্যিম: ইলামুল মুয়াক্কিয়ীন, ১/৪৩৬]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ এই সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাতের পর এই দো'আ পাঠ করতেন سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي [বুখারী: ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, ৪৯৬৭, মুসলিম: ৪৮৪, আবু দাউদ: ৮৭৭, ইবনে মাজহ: ৮৮৯] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ বয়সে বেশী বেশী আগত দো’আ পাঠ করতেনঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ [মুসলিম ৪৮৪, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৫] অনুরূপভাবে উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, এই সূরা নাযিল হওয়ার পর তিনি উঠাবসা, চলাফেরা তথা সর্বাবস্থায় سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ এই দো'আ পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, আমাকে এর আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর প্রমাণস্বরূপ সূরাটি তেলাওয়াত করতেন। [তাবারীঃ ৩৮২৪৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

৩। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। [1]

[1] অর্থাৎ, বুঝে নাও যে, রিসালতের তবলীগ ও হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যা তোমার উপর ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার দুনিয়া থেকে তোমার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেছে। এ জন্য তুমি আল্লাহর তসবীহ, প্রশংসা এবং ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকাধিক মনোযোগী হও। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনের শেষ দিনগুলিতে উক্ত কর্মাবলী করতে অধিক যত্নবান হওয়া উচিত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান