কুরআনের আয়াতের অনুবাদ/তাফসীর 'টি ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code

সূরাঃ আলে-ইমরান | Al-i-Imran | سورة آل عمران - আয়াত নং - ৭১ মাদানী

৩ : ৭১ یٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تَلۡبِسُوۡنَ الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَكۡتُمُوۡنَ الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۷۱﴾

হে কিতাবীরা, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান? আল-বায়ান

হে আহলে কিতাব! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করছ আর জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করছ। তাইসিরুল

হে কিতাবীরা! তোমরা কেন সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিলিয়ে নিচ্ছ এবং সত্যকে গোপন করছ? অথচ তোমরাতো অবগত আছ। মুজিবুর রহমান

O People of the Scripture, why do you confuse the truth with falsehood and conceal the truth while you know [it]? Sahih International

৭১. হে কিতাবীরা! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর(১) এবং সত্য গোপন কর, যখন তোমরা জান।(২)

(১) ইবনে আব্বাস বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছাইফ, আদী ইবন যায়দ ও হারেস ইবন আওফ পরস্পর পরস্পরকে বললঃ আস, যা মুহাম্মাদ ও তার সাথীদের উপর নাযিল হয়েছে আমরা সেটার উপর সকালবেলায় ঈমান আনয়ন করি এবং সন্ধ্যা বেলা সেটার সাথে কুফর করি। যাতে করে মুসলিমরা তাদের দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহে ঘুরপাক খেতে থাকে। ফলে আমরা যে রকম করেছি তারাও সে রকম করবে। আর এতে করেই তারা তাদের দ্বীন থেকে সরে আসবে। তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। [তাবারী]

কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এখানে ‘তোমরা কেন হককে বাতিলের বা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর’ এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা কেন ইসলামের সাথে ইয়াহুদী মতবাদ ও খ্রীস্টানদের মতবাদকে মিলিয়ে মিশিয়ে দেখছ? অথচ তোমরা ভাল করেই জান যে, যে দ্বীন ব্যতীত আর কোন কিছু আল্লাহ কবুল করবেন না, আর কোন প্রতিফল কেউ পাবে না, সেটি হচ্ছে ইসলাম। [তাবারী]

(২) কাতাদা বলেন, জেনে-বুঝে সত্য গোপন করার অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিষয়টি তারা গোপন করছে। অথচ তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের তাওরাত ও ইঞ্জীলে আলোচনা ও গুণাগুণ দেখতে পায়। যিনি সৎকাজের আদেশ করবেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবেন। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭১) হে আহলে কিতাব (ঐশীগ্রন্থধারীরা)! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন কর? [1]

[1] এখানে ইয়াহুদীদের দু’টি অতি বড় অপরাধের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দান করা হচ্ছে। প্রথম অপরাধ হল, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মিশ্রিত করণ; যাতে মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যা পরিষ্কার না হয়। দ্বিতীয় অপরাধ হল, সত্যকে গোপন করা। অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ)-এর যে নিদর্শন ও গুণাবলী তাওরাতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা মানুষ থেকে গোপন করা, যাতে কমসে-কম এই নিদর্শনাদির দিক থেকে যেন তাঁর সত্যতা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। আর এই উভয় অপরাধ তারা জেনে-শুনেই করত। যার কারণে তারা বড়ই দুর্দশার শিকার হয়েছিল। তাদের অপরাধের কথা সূরা বাক্বারাতেও (৪২ আয়াতে) উল্লেখ হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, [وَلا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ] অর্থাৎ, ‘‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করো না।’’ ‘আহলে কিতাব’ (ঐশীগ্রন্থধারী) শব্দটি কোন কোন মুফাসসিরের নিকট ব্যাপক; যা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান উভয়কেই শামিল। অর্থাৎ, তাদের উভয়কেই এই অপরাধ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আবার কেউ বলেছেন, ‘আহলে কিতাব’ বলতে ইয়াহুদীদের সেই কয়েকটি গোত্রকে বুঝানো হয়েছে, যারা মদীনায় বসবাস করত। যেমন, বানী ক্বুরাইযা, বানী নায্বীর এবং বানী ক্বাইনুক্বা। আর এই উক্তিকেই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ, (বিভিন্ন কার্যকলাপের তাকীদে) মুসলিমদের সরাসরি সম্পর্ক এদের সাথেই ছিল এবং নবী করীম (সাঃ)-এর সাথে বিরোধিতায় এরাই ছিল অগ্রণী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান