কুরআনের আয়াতের অনুবাদ/তাফসীর 'টি ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code

সূরাঃ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة - আয়াত নং - ১৫ মাদানী

২ : ১৫ اَللّٰهُ یَسۡتَهۡزِئُ بِهِمۡ وَ یَمُدُّهُمۡ فِیۡ طُغۡیَانِهِمۡ یَعۡمَهُوۡنَ ﴿۱۵﴾

আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন। আল-বায়ান

আল্লাহ তাদের সঙ্গে (জবাবে) উপহাস করেন এবং তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের মত তাদেরকে ঘুরে মরার অবকাশ দেন। তাইসিরুল

আল্লাহ তাদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছেন এবং তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। ফলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ফিরছে। মুজিবুর রহমান

[But] Allah mocks them and prolongs them in their transgression [while] they wander blindly. Sahih International

১৫. আল্লাহ তাদের সাথে উপহাস করেন(১), এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।

১. ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে বদলা নেয়ার জন্য তাদের সাথে উপহাস করেছেন। কাফেরদের ঠাট্টা বা উপহাসের বিপরীতে আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক তাদের সাথে উপহাস বা ঠাট্টা করা দোষণীয় কিছু নয়। বরং এটা আল্লাহর এমন এক কর্মবাচক গুণ যা হওয়া জরুরী। কেননা, আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করার দিক থেকে বিভিন্ন গুণাগুণ চার প্রকারঃ

১) এমন কিছু গুণ রয়েছে, যেগুলো গুণ হিসেবে পরিপূর্ণ ও উত্তম তবে কখনো কখনো এগুলো থেকে মন্দ অর্থও বুঝা যায়। এরূপ গুণসমূহ থেকে আল্লাহর নাম গ্রহণ করা যাবে না। বরং গুণ হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন, ‘কালামুল্লাহ’ (আল্লাহর কথাবার্তা), ‘ইরাদা’ (আল্লাহর ইচ্ছা) এগুলো আল্লাহর গুণ হিসেবে ব্যবহার হবে অর্থাৎ গুণ হিসেবে তাকে ‘মুতাকাল্লেম’ ও ‘মুরীদ’ বলা যাবে। কিন্তু এগুলো থেকে আল্লাহর নাম গ্রহণ করে আল্লাহ্ তা'আলাকে ‘মুতাকাল্লেম’ ও ‘মুরীদ’ নাম দেয়া যাবে না। কেননা, কথাবার্তায় ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ইনসাফ-যুলুম সবকিছুই থাকে। ইচ্ছাও তদ্রুপ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কাউকে আব্দুল মুতাকাল্লেম বা আব্দুল মুরীদ বলা যাবে না এবং আল্লাহকে ডাকার জন্য ইয়া মুতাকাল্লেম। ইয়া মুরীদ বলা যাবে না।

২) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো পুরোপুরিভাবেই উত্তম গুণ। সেগুলো কোন মন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয় না। এগুলো গুণ হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয় তেমনিভাবে এগুলো থেকে নামও গ্রহণ করা যাবে আর আল্লাহর অধিকাংশ নামও এ ধরণের গুণসমৃদ্ধ। যেমন, রাহমান, রাহীম, সামী', বাসীর ইত্যাদি। এগুলো থেকে তার নাম সাব্যস্ত হওয়ার সাথে সাথে তার জন্য দয়া, করুণা, শুনা ও দেখার গুণসমূহও সাব্যস্ত হবে।

৩) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো সাধারণতঃ উত্তম গুণ নয়। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় তা উত্তম গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো বিশেষ বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতেই শুধু আল্লাহর গুণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেমন, ধোঁকা, কারসাজি, ঠাট্টা, কৌশল ইত্যাদি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করে বলা যাবে না যে, আল্লাহ ধোঁকা দেন, ঠাট্টা করেন ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে বলা যাবে যে, আল্লাহ তা'আলা যারা তার রাসূলের সাথে ঠাট্টা করে, ধোঁকাবাজি করে তাদের সাথে ঠাট্টা করেন, ধোঁকা দেন। এর দ্বারা আল্লাহর কোন অসম্মান বুঝা যায় না।

৪) এমনকিছু গুণ রয়েছে যেগুলো কোন অবস্থাতেই উত্তমগুণ নয়। যেমন, অপারগতা, দুর্বলতা, অন্ধত্ব, বধিরতা ইত্যাদি। এ জাতীয় গুণাবলী আল্লাহর জন্য কোন অবস্থাতেই সাব্যস্ত করা যাবে না।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, যারা আল্লাহ এবং তার রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা আল্লাহর উত্তম গুণের অন্তর্ভুক্ত। [মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন: আল-কাওলুল মুফীদ]

তাফসীরে জাকারিয়া

১৫। আল্লাহ তাদের সাথে পরিহাস করেন(1) আর তাদের অবাধ্যতায় তাদেরকে বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।

(1) আল্লাহ তাদের সাথে পরিহাস করেন;-এর একটি অর্থ হল, যেভাবে তারা মুসলিমদের সাথে উপহাস ও বিদ্রূপমূলক কার্যকলাপ করে, আল্লাহও তাদের সাথে অনুরূপ কার্যকলাপ করে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করেন। এটাকে ভাষাগত ব্যবহারে পরিহাস বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা পরিহাস নয়, বরং তা আসলে তাদের পরিহাস কর্মের শাস্তি। যেমন মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। (সূরা শূরা ৪০ আয়াত) এই আয়াতে মন্দের প্রতিফলকেও মন্দ বলা হয়েছে। অথচ তা মন্দ নয়; বরং তা একটি বৈধ কাজ। তদনুরূপ নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুত তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন।(সূরা নিসা ১৪২ আয়াত) অতঃপর তারা ষড়যন্ত্র করল এবং আল্লাহও কৌশল প্রয়োগ করলেন। (আলে ইমরান ৫৪ আয়াত) প্রভৃতি আয়াতসমূহেও অনুরূপ এসেছে।

এর দ্বিতীয় অর্থ হল, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহও তাদের সাথে উপহাস করবেন। যেমন সূরা হাদীদের ১৩নং আয়াতে এর পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান