পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - এ উম্মতের [উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.)-এর] সাওয়াবের বিবরণ
৬২৯৪-[১২] বাহয ইবনু হাকীম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি আল্লাহর কালাম (كُنْتُمْ خير أُمَّةٍ أًّخرجت للنَّاس) “তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে...”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩: ১১০); এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তোমরাই সত্তরতম উম্মতকে পরিপূর্ণ করলে। তোমরাই সকল উম্মতের মাঝে আল্লাহ তা’আলার দৃষ্টিতে সর্বোত্তম ও মর্যাদাবান উম্মত। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসটি হাসান]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب ثَوَاب هَذِه)
وَعَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: [كُنْتُمْ خير أُمَّةٍ أًّخرجت للنَّاس] قَالَ: «أَنْتُمْ تُتِمُّونَ سَبْعِينَ أُمَّةً أَنْتُمْ خَيْرُهَا وَأَكْرَمُهَا عَلَى اللَّهِ تَعَالَى» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3001) و ابن ماجہ (4288) و الدارمی (2 / 313 ح 2763) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (تُتِمُّونَ سَبْعِينَ أُمَّةً) অর্থাৎ তোমাদের দ্বারা সত্তর সংখ্যা পূর্ণ হবে। মানাবী বলেন, এর দ্বারা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সত্তর সংখ্যা থেকে উদ্দেশ্য হলো অধিক সংখ্যক। সীমিত অর্থে নয়। কারণ, (الْخَيْرِ) শব্দটিকে (نكره مفرد) তথা অনির্দিষ্ট এককের প্রতি (إِضَافَةَ) (সম্বন্ধ) করা হয়েছে। যেহেতু সীমাবদ্ধ সংখ্যার দিক থেকে বাকী থাকা উম্মত হিসেবে তারা এর পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত। এর অর্থ হলো যখন পূর্ববর্তী উম্মত কম হয়েছে তখন তোমরা হয়েছ (শ্রেষ্ঠ উম্মত)। আর শ্রেষ্ঠত্বের কারণকে তোমরাই পূর্ণ করেছ। কারণ এ থেকে উদ্দেশ্য হলো সর্বশেষ আগমন করা যেমন তোমাদের নবী হলেন সর্বশেষ নবী। তেমনিভাবে তোমরা হলে সর্বশেষ উম্মত। আল্লাহ তা'আলার বাণী (کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ) থেকে উদ্দেশ্য হাদীস থেকে বুঝা গেল তারা হলো নবী (সা.) -এর সমস্ত উম্মত।
হাফিয ইবনু কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ উম্মতে মুহাম্মাদী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মহান আল্লাহ বলেন, (کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ) অর্থাৎ “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত যাদের উত্থান ঘটেছে মানব জাতির জন্য...”- (সূরাহ্ আলি ‘ইমরান ৩: ১১০)।
ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মানব জাতির নিকটে তোমরা উত্তম জাতি। তোমরা তাদেরকে দলে দলে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছ। তাই তারা ইসলামের ছায়ায় দাখিল হয়েছে। অনুরূপভাবে ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ, ‘আতিয়্যাহ্ আল আওফী, ইকরিমাহ্, ‘আত্বা, রবী ইবনু আনাস প্রমুখ সাহাবীগণ এ আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন, তারা হলো শ্রেষ্ঠ জাতি এবং মানুষের মধ্যে সর্বাধিক উপকারী। কারণ, আল্লাহ বলেন, (تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ) “...তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ কর ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চল..."- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩:১১০)।
আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মুসনাদে, নাসায়ী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনানে, হাকিম তার ‘মুসতাদরাকে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এ থেকে উদ্দেশ্য হলো, যারা রাসূল (সা.) -এর সাথে মক্কাহ্ থেকে মদীনায় হিজরত করেছে। তবে সঠিক কথা হলো, সাধারণত এ আয়াত প্রত্যেক যুগের সব উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ যুগ হলো, যাদের মাঝে রাসূল (সা.) প্রেরিত হয়েছেন। অতঃপর পরের যুগ, তার পরবর্তী যুগ। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ کَذٰلِکَ جَعَلۡنٰکُمۡ اُمَّۃً وَّسَطًا) “আর এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি...”- (সূরা আল বাক্বারাহ ২: ১৪৩); অর্থাৎ- শ্রেষ্ঠত্ব।
মূলত এ উম্মত তাঁদের নবী (সা.) -এর মাধ্যমে কল্যাণের দিকে অগ্রবর্তীতা অর্জন করেছে। কারণ, তিনি আল্লাহর সেরা সৃষ্টি এবং আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক সম্মানিত রাসূল। তাঁকে আল্লাহ মহান পূর্ণ শারী'আত দিয়ে পাঠিয়েছেন। যা পূর্বের কোন নবী বা রাসূল-কে দেননি। তাঁর পথ ও পদ্ধতির উপর আমল কম সংখ্যকরা করেছে। যে স্থানে অন্যদের ‘আমল বেশি ছিল না। ইবনু কাসীর-এর আলোচনা সংক্ষেপে এ পর্যন্তই। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩০০১, “জামি'উল কিতাবিস্ তিস্'আহ” এ্যাপ)