৬২৭১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইয়ামান ও শাম (সিরিয়া) দেশের বর্ণনা এবং উওয়াইস করানী-এর আলোচনা

৬২৭১-[৬] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) (দু’আয়) বললেন, “হে আল্লাহ! শাম দেশে আমাদের জন্য বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! ইয়ামান দেশে আমাদের জন্য বরকত দান করুন।” তখন সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি (সা.) আবারও বললেন, “হে আল্লাহ! শাম দেশে আমাদের জন্য বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের ইয়ামান দেশে আমাদের জন্য বরকত দান করুন। এবারও সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নাজদের জন্যও। বর্ণনাকারী [ইবনু উমার (রাঃ)] বলেন, আমার ধারণা, তিনি তৃতীয়বারে বললেন, সেখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। (বুখারী)

الفصل الاول ( بَاب تَسْمِيَة من سمي من أهل الْبَدْر فِي «الْجَامِعِ لِلْبُخَارِيِّ» )

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَامِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَفِي نَجْدِنَا؟ فَأَظُنُّهُ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ: «هُنَاكَ الزَّلَازِلُ وَالْفِتَنُ وَبِهَا يَطْلُعُ قرن الشَّيْطَان» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (7095) ۔
(صَحِيح)

وعن ابن عمر قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: «اللهم بارك لنا في شامنا اللهم بارك لنا في يمننا» . قالوا: يا رسول الله وفي نجدنا؟ فاظنه قال في الثالثة: «هناك الزلازل والفتن وبها يطلع قرن الشيطان» . رواه البخاري رواہ البخاری (7095) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: বরকতের জন্য দুটি স্থানকে বিশেষিত করার স্পষ্ট কারণ হলো, মদীনাবাসীর খাদ্যদ্রব্য ইয়ামান ও নাজদ- এ দু' স্থান থেকে আমদানী করা হয়। আশরাফ বলেন, মূলত রাসূল (সা.) - এ দু' স্থানের জন্য বরকতের দু'আ করেছেন, এর কারণ হলো মক্কাহ্ রাসূল (সা.) -এর জন্মভূমি। আর তা ইয়ামানের সাথে সম্পৃক্ত। মদীনাহ্ হলো তাঁর বসবাসের ও দাফনের স্থান। সেটা শামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বাহ! কি চমৎকার দু'দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব যে, তার একটি জন্মস্থান, অন্যটি তাঁর দাফনস্থান। তিনি (সা.) দু’টিকে নিজের সাথে যুক্ত করেছেন। মর্যাদা বুঝানোর জন্য তিনি (সা.) বহুবচনের যামীর ব্যবহার করেছেন এবং বারংবার দু'আ করেছেন।
(وَفِي نَجْدِنَا) খত্তাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাজদ পূর্বদিকে। যে ব্যক্তি মদীনায় অবস্থান করে, নাজদ তার নিকটে ‘ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেটা মদীনাবাসীর পূর্বে। মূলত উঁচু ভূমিকে নাজদ বলা হয়। এটা নিচুর বিপরীত। কারণ তা তুলনামূলকভাবে নিচু। পুরো তিহামাহ্ নিম্নাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। মক্কাহ্ তিহামাহর অন্তর্ভুক্ত।
হাফিয (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: দাউদী বর্ণনা করেন, নাজদ ‘ইরাকের প্রান্তে অবস্থিত। তিনি কল্পনা করে বলেন, নাজদ একটি নির্দিষ্ট স্থান, অথচ এমনটি নয়। বরং তুলনায় অপেক্ষাকৃত উঁচু সব স্থান কে নাজদ বলা হয় এবং অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গাকে (غور) (গওর) বলা হয়।
(الزَّلَازِلُ) অর্থাৎ বাহ্যিক বোধগম্য অথবা অভ্যন্তরীণ প্রকম্পন। সেটা হলো মনের টলমলতা এবং মানুষের দোদুল্যমানতা।
(وَالْفِتَنُ) বিপদ মুসীবাত যাতে দীন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধর্মীয় হ্রাস ঘটে। সে কারণে তার জন্য দু'আ করা তাঁর জন্য সমিচীন নয়। মুহাল্লাব বলেন, আসলে রাসূল (সা.) পূর্ববাসীদের জন্য দু'আ বাদ দিয়েছেন যাতে তারা অকল্যাণ থেকে দুর্বল হয়ে যায়, যা সেদিকে শয়তানের প্রভাবের কারণে ফিতনাহ্ হিসেবে সৃষ্ট।
(قرن الشَّيْطَان) সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো শয়তানের সে সময়ের অনুসারী ও সাহায্যকারী দলবল। কেউ কেউ বলেন, (قرن) থেকে উদ্দেশ্য হলো শয়তানী শক্তি বা এমন সহযোগী যার দ্বারা সে বিপথগামী করতে পারে। সে সময় পূর্ববাসীরা কাফির ছিল। তাই রাসূল (সা.) বর্ণনা করেন যে, ফিতনাহ্ সৃষ্টি হবে সেখান থেকে। যেমন তিনি জানিয়েছিলেন পরে তাই হয়েছে প্রথম ফিতনাহ্ পূর্বদিক থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এ ফিতনাহ্ ছিল মুসলিমদের বিভক্ত হওয়ার কারণ। এটা ছিল শয়তানের আনন্দের বিষয়। এতে শয়তান খুশি হয়। অনুরূপভাবে বিদ'আতও সেখান থেকে সৃষ্টি হয়। যেমনটি উল্লেখ আছে ফাতহুল বারীতে। অনুরূপভাবে উট যুদ্ধের ঘটনা সিফফীনের যুদ্ধ। খারিজীদের উদ্ভব ঘটেছে পূর্বদিকের নাজদ, ‘ইরাক ও তার পিছনের এলাকায়। ফাসাদের মূল বড় ফিনাহ যেটা তাদের মাঝে সংঘটিত হয়েছিল, তা হলো ‘উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাত। সে কারণে রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং সংঘটনের পূর্বে তা জানিয়ে, দিয়েছেন। এটা হলো নবী (সা.) -এর নুবুওয়্যাতের লক্ষণ। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৯৬৫)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)