৬২১৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সমষ্টিগতভাবে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬২১৭-[২২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর রাসূল (সা.)-কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদরাজি গনীমাত আকারে হস্তগত করালেন, তখন তিনি তা হতে কুরায়শদের বিশেষ বিশেষ লোককে একশত করে উট প্রদান করলেন। এটা দেখে আনসারদের কিছু লোক বলল, আল্লাহ তাঁর রাসূল-কে মাফ করুন, তিনি আমাদেরকে না দিয়ে কুরায়শদেরকে প্রদান করছেন, অথচ আমাদের তরবারি হতে এখনো তাদের রক্ত ঝরছে। তাদের এ কথা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জানানো হলে তিনি লোক পাঠিয়ে আনসারদেরকে ডেকে চামড়ায় তৈরি একটি তাঁবুর মাঝে সমবেত করলেন এবং তাঁরা (আনসারগণ) ছাড়া আর কাউকেও সেখানে ডাকলেন না।
অতঃপর যখন তাঁরা সমবেত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সেখানে গিয়ে বললেন, এটা কেমন কথা, যা আমি তোমাদের তরফ হতে শুনতে পেয়েছি? তখন তাদের জ্ঞানী লোকেরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের বুদ্ধিমান লোকেরা কিছুই বলেননি, অবশ্য কিছু সংখ্যক অল্প বয়স্ক তরুণ বলেছে যে, আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা.) -কে মাফ করুন তিনি আনসারদের রেখে কুরায়শদেরকে প্রদান করছেন। অথচ আমাদের তরবারি হতে তাদের রক্ত এখনো ঝরছে।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এইমাত্র কুফর পরিত্যাগ করেছে এমন কিছু লোককে (ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ও তাদের মনোতুষ্টির জন্য) ধন-সম্পদ প্রদান করছি। তোমরা কি এতে তুষ্ট নও যে, এ সমস্ত লোকেরা অর্থ-সম্পদ নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে সাথে করে বাড়ি ফিরে যাও? তাঁর এ কথা শুনে আনসারগণ সকলেই বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা বলেছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب جَامع المناقب)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: إِنَّ نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ قَالُوا حِينَ أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَمْوَالِ هَوَازِنَ مَا أَفَاءَ فَطَفِقَ يُعْطِي رِجَالًا مِنْ قُرَيْشٍ الْمِائَةَ مِنَ الْإِبِلِ فَقَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَدَعُنَا وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ فَحَدَّثَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَقَالَتِهِمْ فَأَرْسَلَ إِلَى الْأَنْصَارِ فَجَمَعَهُمْ فِي قُبَّةٍ مَنْ أَدَمٍ وَلَمْ يَدْعُ مَعَهُمْ أَحَدًا غَيْرَهُمْ فَلَمَّا اجْتَمَعُوا جَاءَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: «مَا كَانَ حَدِيثٌ بَلَغَنِي عَنْكُمْ؟» فَقَالَ فُقَهَاؤُهُمْ: أَمَّا ذَوُو رَأْيِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمْ يَقُولُوا شَيْئًا وَأَمَّا أُنَاسٌ مِنَّا حَدِيثَةٌ أَسْنَانُهُمْ قَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَدَعُ الْأَنْصَارَ وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي أُعْطِي رِجَالًا حَدِيثِي عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالْأَمْوَالِ وَتَرْجِعُونَ إِلَى رِحَالِكُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» . قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قد رَضِينَا. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3147) و مسلم (132 / 1059)، (2436) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس قال: ان ناسا من الانصار قالوا حين افاء الله على رسوله صلى الله عليه وسلم من اموال هوازن ما افاء فطفق يعطي رجالا من قريش الماىة من الابل فقالوا: يغفر الله لرسول الله صلى الله عليه وسلم يعطي قريشا ويدعنا وسيوفنا تقطر من دماىهم فحدث رسول الله صلى الله عليه وسلم بمقالتهم فارسل الى الانصار فجمعهم في قبة من ادم ولم يدع معهم احدا غيرهم فلما اجتمعوا جاءهم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «ما كان حديث بلغني عنكم؟» فقال فقهاوهم: اما ذوو راينا يا رسول الله فلم يقولوا شيىا واما اناس منا حديثة اسنانهم قالوا: يغفر الله لرسول الله صلى الله عليه وسلم يعطي قريشا ويدع الانصار وسيوفنا تقطر من دماىهم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اني اعطي رجالا حديثي عهد بكفر اتالفهم اما ترضون ان يذهب الناس بالاموال وترجعون الى رحالكم برسول الله صلى الله عليه وسلم» . قالوا بلى يا رسول الله قد رضينا. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3147) و مسلم (132 / 1059)، (2436) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত সম্পদ বণ্টন করছিলেন, জি'রানা নামক স্থানে। আর যাদেরকে তিনি (সা.) বেশি বেশি সম্পদ দিচ্ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন মু'আবিয়াহ্-এর পিতা আবূ সুফইয়ান ও সেই মুহাজির কুরায়শদেরকে বেশি বেশি সম্পদ দিচ্ছিলেন তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য। কিন্তু তাদের তুলনায় তিনি আনসার সাহাবীদেরকে কম দিচ্ছিলেন। তখন আনসারদের মধ্য থেকে কম বুদ্ধিসম্পন্ন কিছু লোক বলে উঠল, আল্লাহ রাসূল (সা.) কে ক্ষমা করুন। তিনি শুধু তার সম্প্রদায় কুরায়শের লোকেদেরকেই দিচ্ছেন।
তারা যুক্তি দেখিয়ে আরো বলল, (وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ) অর্থাৎ এখন আমাদের তরবারি থেকে তাদের রক্ত ঝরছে। মিরকাতুল মাফাতীহ প্রণেতা বলেন, এ কথার ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে, আমরা বেশি যুদ্ধ করেছি এবং রক্ত ঝরিয়েছি। অতএব, গনীমতের মালের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আনসার সাহাবীদেরকে একত্র করে বুঝিয়ে বললেন, আমি তাদেরকে সম্পদ দিয়েছি তাদেরকে শুধু ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য। তারা কুরায়শ বা অন্য কোন উদ্দেশে তাদেরকে দেয়া হয়নি।
হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে আরো বুঝালেন, এতে তারা বুঝতে পারল এবং নিজেদের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হলো।
এক ‘আরব কবি কতই না চমৎকার বলেছেন,

رَضِينَا قِسْمَةَ الْجَنَّارِ فِينَا.... لَنَا عِلْمٌ وَلِلْأَعْدَاءِمَالُ
فَأِنَّ الْمَالَ يَفْنَى عَنْ قَرِيبٍ .... وَإِنَّ الْعِلْمَ يَبْقَى لَايَزَالُ.

অর্থাৎ আমাদের মাঝে মহা প্রতাপশালীর বণ্টনে আমরা রাজী। আমাদের জন্য ‘ইলম আর শত্রুদের সম্পদ। সম্পদ তো অচিরেই ফুরিয়ে যাবে। আর ইলম তো চিরকালই রয়ে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)