পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১২৮-[২১] কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ’আরবদের মাঝে আমিই সর্বপ্রথম লোক, যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। আর আমরা নিজেদেরকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে জিহাদে বের হয়েছি এবং আমাদের কাছে কোন খাদ্যদ্রব্য ছিল না, শুধু গাছের গোটা এবং বাবলার পাতা ছাড়া। যার ফলে আমাদের প্রতিটি লোক বকরির মলের মতো বড়ি বড়ি আকারে মল ত্যাগ করত। অতঃপর (পরবর্তীকালে) বানী আসাদ গোত্র আমাকে ইসলাম (সালাত) সম্পর্কে তিরস্কার করছে, এমতাবস্থায় তো আমি খুবই হতভাগা হব এবং আমার সকল ’আমল অহেতুক সাব্যস্ত হবে। আর (সা’দ এজন্য এ কথা বললেন যে,) বানূ আসাদ ’উমার (রাঃ)-এর কাছে তাঁর সম্পর্কে কটাক্ষ করেছিল এবং তারা অভিযোগে করেছিল যে, তিনি সঠিকভাবে সালাত আদায় করতে জানেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ)
عَن قيس بن حَازِمٍ قَالَ: سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ يَقُولُ: إِنِّي لَأَوَّلُ رَجُلٍ مِنَ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَأَيْتُنَا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا لَنَا طَعَامٌ إِلَّا الْحُبْلَةَ وَوَرَقَ السَّمُرِ وَإِنْ كَانَ أَحَدنَا ليضع كَمَا تضع الشَّاة مَاله خِلْطٌ ثُمَّ أَصْبَحَتْ بَنُو أَسَدٍ تُعَزِّرُنِي عَلَى الْإِسْلَامِ لَقَدْ خِبْتُ إِذًا وَضَلَّ عَمَلِي وَكَانُوا وَشَوْا بِهِ إِلَى عُمَرَ وَقَالُوا: لَا يُحْسِنُ يُصَلِّي. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3728) و مسلم (12 / 2966)، (7433) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (إِنِّي لَأَوَّلُ رَجُلٍ مِنَ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ) হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত ঘটনাটি ঘটেছিল ‘উবায়দাহ্ ইবনু হারিস ইবনু মুত্ত্বালিব-এর ‘সারিয়া’য় (বা ছোট যুদ্ধ যার লোক সংখ্যা থাকে ৩-৬ জন) এটি প্রথম যুদ্ধ ছিল যা মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে সংঘটিত হয়েছিল। এটি প্রথম হিজরীতে সংঘটিত হয়। তিনি মুসলিমদের একটি দল “রাবেগ’ নামক অঞ্চলে পাঠান এবং সেখানে কুরায়শদের কাফিলার সাথে সাক্ষাৎ হয় ও পরস্পরের মাঝে তীর নিক্ষেপ হয়। আর সা'দ (রাঃ) সেখানে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেন। (ফাতহুল বারী হা, ৩৭২৮)
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে সা'দ (রাঃ)-এর স্পষ্ট মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে। এবং মানুষ প্রয়োজনে নিজের প্রশংসা করতে পারে ইসলামে তার বৈধতা রয়েছে। (শারহুন নাবাবী হা, ২৯৬৬)।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসে সালাতকে ইসলাম দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেমন কুরআনে সালাতকে ঈমান দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (وَ مَا کَانَ اللّٰهُ لِیُضِیۡعَ اِیۡمَانَکُمۡ)...আল্লাহ তোমাদের ঈমান নষ্ট করবেন না...।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২: ১৪৩) এখানে ঈমান দ্বারা সালাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
প্রেক্ষিত ঘটনা: সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর নেতত্বে খলীফাহ্ ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ‘ইরাক বিজয় হয়। খলীফাহ্ সা'দ-কে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করলে কতিপয় লোক খলীফার নিকট সা'দ-এর বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা অভিযোগ করে; তন্মধ্যে একটি অভিযোগ এই যে, তিনি সঠিক সালাত আদায় করতে জানে না। অথচ তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শিখানো সময় ও পদ্ধতিতেই সালাত আদায় করতেন। তার ওপর এই মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন: (لَقَدْ خِبْتُ إِذًا وَضَلَّ عَمَلِي) “তাহলে আমি তো হব হতভাগা, আমার সব ‘আমল হবে ব্যর্থ।” এ বাক্যটি সেদিকে ইশারা করেছে। (আসহাবে রসূলের জীবন কথা ১ম খণ্ড)