পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৪৮-[১৪] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন এক যুদ্ধে বের হলেন, তিনি যখন ফিরে আসলেন, তখন এক হাবশী মেয়ে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানৎ করেছিলাম যে, আল্লাহ তা’আলা যদি আপনাকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনেন, তাহলে আমি দফ বাজিয়ে আপনার সামনে গান গাইব। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, যদি তুমি এরূপ মানৎ করেই থাক তবে দফ বাজাতে পার। অন্যথা তা করো না। অতঃপর সে দফ বাজাতে লাগল। ইতোমধ্যে আবূ বকর (রাঃ) সেখানে প্রবেশ করলেন, আর মেয়েটি দফ বাজাতে থাকল। তারপর আসলেন ’আলী (রাঃ), তখনো সে দফ বাজাতে থাকল, অতঃপর ’উসমান (রাঃ) আসলেন, অথচ তখনো সে দফ বাজাতে থাকল, তবে তারপর যখন ’উমার (রাঃ) প্রবেশ করলেন, তখন সে দফ বাজানো বন্ধ করে দিয়ে দফটি স্বীয় নিতম্বের নিচে রেখে দিয়ে তার উপর বসে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে ’উমার! শয়তান তোমাকে ভয় করে। আমি বসা ছিলাম, আর মেয়েটি দফ বাজাতে লাগল। এরপর আবূ বকর আসলেন, তারপর ’আলী আসলেন, পরে ’উসমান আসলেন, অথচ সে অবিরাম দফ বাজাচ্ছিল। আর হে ’উমার! তুমি যখন প্রবেশ করলে, তখন সে দফটি ফেলে দেয়। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, এবং তিনি বলেছেন: হাদীসটি হাসান, সহীহ ও গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب عمر)
وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ جَاءَتْ جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ. فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كنتُ نذرت إِن ردك الله سالما أَنْ أَضْرِبَ بَيْنَ يَدَيْكَ بِالدُّفِّ وَأَتَغَنَّى. فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ كُنْتِ نَذَرْتِ فَاضْرِبِي وَإِلَّا فَلَا» فَجَعَلَتْ تَضْرِبُ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عَلِيٌّ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عُثْمَانُ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عُمَرُ فَأَلْقَتِ الدُّفَّ تَحْتَ اسْتِهَا ثُمَّ قَعَدَتْ عَلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَخَافُ مِنْكَ يَا عُمَرُ إِنِّي كُنْتُ جَالِسًا وَهِيَ تَضْرِبُ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عَلِيٌّ وَهِيَ تَضْرِبُ ثُمَّ دَخَلَ عُثْمَانُ وَهِيَ تَضْرِبُ فَلَمَّا دَخَلْتَ أَنْتَ يَا عُمَرُ أَلْقَتِ الدُّفَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيب
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3690) ۔
(حسن صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (بِالدُّف) এখানে অর্থ হলো যার দ্বারা দফ (এক মুখ খোলা তবলা ধরনের) বাজানো হয়। আর (دف) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে দফগুলো পূর্বেকার যুগে পাওয়া যেত। যে দফে বাজনা হয় সকলের ঐকমত্যে সেটা (مكروه) বা হারাম।
উক্ত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা হয় যে, মানৎ দ্বারা নৈকট্য অর্জন হয় তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। নবী (সা.) -এর সামনে আনন্দ করা নৈকট্যের বিষয়। বিশেষ করে যখন যুদ্ধের ময়দান হতে ফিরে আসেন, কেননা যুদ্ধে অনেক বিনাশ হয়ে থাকে। তাছাড়া উক্ত হাদীসকে কেন্দ্র করে দফ বাজানো বৈধ বলা হয় ।
(أَتَغَنَّى) এটা প্রমাণিত যে, ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে মহিলার কণ্ঠে গান শ্রবণ করা বৈধ।
(إِنْ كُنْتِ نَذَرْتِ فَاضْرِبِي وَإِلَّا فَلَا) এখানে সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, দফ বাজানো বৈধ নয় মানৎ ছাড়া অনুরূপভাবে তা বাজানো বৈধ নয় শারী'আত প্রণেতার অনুমতি ব্যতীত যেমন বিবাহের ঘোষণা দেয়ার জন্য দফ বাজানো বৈধ।
আর ইয়ামানের শায়খরা যিকর করা অবস্থায় যে দফ বাজিয়ে থাকেন তা ঘৃণিত কাজসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাঁর দীনের রক্ষক ও সাহায্যকারী। [মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য]
ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর সামনে দফ বাজানো সম্ভব হয়েছিল ঐ মহিলার মানতের জন্য। অতএব তার মানৎ প্রমাণ করে যে, স্বাভাবিক অবস্থায় মানৎ ছিল তার ওপর আল্লাহর নিআমাতসমূহ হতে একটি নি'আমাত। এ ক্ষেত্রে তার কাজটি রূপান্তরিত হয়ে গেল অনর্থক কাজ হতে ভালোর দিকে এবং মাকরূহ কাজ হতে মুস্তাহাবের দিকে। তার মানৎ পূর্ণের জন্য এটা তিনি অপছন্দ মনে করলেন না। তার মানৎপূর্ণ করা হাসিল হয়েছে, অল্প কয়েকবার দফ পিটানো দ্বারা। এরপর বিষয়টি বেশি হয়ে গেলে মাকরূহ-এর পর্যায়ে চলে গেল, কিন্তু তিনি নিষেধ করা সমিচীন মনে করলেন না। কেননা যদি তিনি (সা.) নিষেধ করতেন তাহলে হারামের পর্যায় চলে যেত, এজন্য তিনি চুপ ছিলেন। আর তিনি (সা.) শ্রেষ্ঠ বিষয়টি প্রশংসা করলেন ‘উমার (রাঃ) আসার কারণে মেয়েটি যে অবস্থায় ছিল অর্থাৎ দফ বাজানো থেকে বিরত থাকা।
মুল্লা আলী আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাঁর নিষেধাজ্ঞা সাধারণ নিষেধ থাকত হারামের পর্যায় যেত না।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীস তার বাহ্যিকের উপর ধরা হবে, কেননা শয়তান যখন তাকে [উমার (রাঃ)] দেখে তখন পলায়ন করে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ৩৬৯৯, মিরকাতুল মাফাতীহ)
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَيَخَافُ مِنْكَ يَا عُمَرُ) এখানে শয়তান দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ কালো মহিলা, কেননা সে হলো মানুষ শয়তান আর সে শয়তানের কাজই করছিল। অথবা শয়তান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ মহিলার শয়তান যে তাকে খারাপ কর্ম করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তার সে খারাপ কর্ম হলো অতিরিক্ত দফ বাজানো যেটা অনর্থক কর্মের অন্তর্ভুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)