পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০০৭-[১] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর পথে খরচ করে, তবুও তাঁদের মর্যাদার এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদ (যব গম খরচ)-এর সমান সাওয়াব পৌছতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب مَنَاقِب الصَّحَابَة)
عَن أبي سعيدٍ الْخُدْرِيّ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نصيفه» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3673) و مسلم (222 / 2541)، (6488) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي) হাদীসের শানে অরুদ: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দু’জন প্রসিদ্ধ সাহাবী খালিদ ইবনু ওয়ালীদ এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু 'আওফ -এর মধ্যে কোন বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছিল। এক পর্যায়ে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে গালি দেয়। তখন রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে গালি না দেয়ার ব্যাপারে এ কথা বললেন। এখানে (أَصْحَابِي) দ্বারা মুরাদ হলো বিশেষ কজন সাহাবী যারা ইসলাম গ্রহণে সাবিকীনও অগ্রগামী ছিলেন। অথবা (لَا تَسُبُّوا) দ্বারা উদ্দেশ্য সে সব বিদ্আতী যাদের পরবর্তীতে আগমন ঘটবে এবং তারা সাহাবীগণকে গালি দিবে যা নবী (সা.) নূরে নুবুওয়্যাত দ্বারা আগত হয়েছিলেন। ইমাম সুয়ূত্নী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন এখানে সাহাবীদেরকে খিতাব করা হয়নি। বরং ব্যাপক আকারে উম্মতের সবাইকে খিতাব করা হয়েছে।
মুসলিমের শরাহতে বলা হয়েছে, সাহাবীদের গালি দেয়া সবচেয়ে বড় কাবীরা গুনাহ। কিছু কিছু মালিকী মাযহাবের ‘আলিম বলেছেন, যে গালি দিবে তাকে হত্যা করতে হবে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সাহাবীদের গালি দেয়া কাবীরাহ গুনাহ। কোন কোন ‘আলিম বলেছেন, শায়খায়ন তথা আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)-কে যে গালি দিবে তাকে হত্যা করা আবশ্যক।
“আল আশবাহ ওয়া নাযায়ির” গ্রন্থের লেখক যায়ন ইবনু নাজিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কাফির যদি দুনিয়ায় তার কুফরীর কারণে তাওবাহ্ করে তবে তা কবুল হয় কিন্তু যেই কাফিররা নবী ও সাহাবীদের গালি দিবে তাদের তাওবাহ্ কবুল হয় না। তিনি আরো বলেন কেউ যদি আবূ বাকর এবং “উমার (রাঃ)-এর ওপর ‘আলী (রাঃ) -এর মর্যাদা বর্ণনা করে তাহলে সে বিদ্আত করল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ) ইমাম বুরকানী (রহিমাহুল্লাহ) (الْمُصَافَحَةِ) গ্রন্থে “আবূ বাকর ইবনু ‘আইয়্যাশ থেকে” এই সূত্রে (كُلَّ يَوْمٍ) অংশটুকু বৃদ্ধি করেছেন। আর তিনি বলেছেন, এটা উত্তম বৃদ্ধি।
(مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نصيفه) ইমাম খত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো মর্যাদা এবং প্রকারতা।
ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসের তৎপর্য হলো এই যে, কোন সাহাবী যদি এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ পরিমাণ খাদ্য আল্লাহর রাস্তায় সদাকাহ করে, তাহলে সেই সদাকাহ্ সমপরিমাণ হবে না যদিও সাধারণ কোন মুসলিম উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ দান করে। এই মর্যাদা পার্থক্যের কারণ হলো সাহাবীদের ইখলাস এবং বিশুদ্ধ নিয়্যাত সবার চাইতে বেশি ছিলেন। (ফাতহুল বারী ৭)
মিরকাতুল মাফাতীহে বলা হয়েছে, ইসলামের পতাকা উড্ডিন করার জন্য সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত কম হওয়ার পরেও বৃহৎ প্রয়োজনের স্বার্থে তাদের এই সদাকাহ এবং ত্যাগ অনেক কল্যাণ ও বরকত অর্জনের কারণ ছিল, বিধায় তাদের সদাকার এত মর্যাদা।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাহাবীদের অত্যধিক মর্যাদার পিছনে কারণ ছিল তাদের দান সদাকাহ্। মহান আল্লাহ সূরাহ্ আল হাদীদ-এর ১০ নং আয়াতে বলেন,
(لَا یَسۡتَوِیۡ مِنۡکُمۡ مَّنۡ اَنۡفَقَ مِنۡ قَبۡلِ الۡفَتۡحِ وَ قٰتَلَ ؕ اُولٰٓئِکَ اَعۡظَمُ دَرَجَۃً مِّنَ الَّذِیۡنَ اَنۡفَقُوۡا مِنۡۢ بَعۡدُ وَ قٰتَلُوۡا) “তোমাদের মধ্যে যে লোক মক্কা বিজয়ের পূর্বে সদাকাহ করেছে এবং জিহাদ করেছে সে সমান নয়। এই সমস্ত লোকেদের মর্যাদা অনেক বেশি ঐসব ঈমানদার লোকেদের চেয়ে যারা পরে সদাকাহ করেছে এবং জিহাদ করেছে”- (সূরা আল হাদীদ ৫৭:১০)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)