৫৮৬১

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৬১-[১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সুফইয়ান ইবনু হারব অন্য কোন লোকের মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি সরাসরি আমাকে বলেছেন। তিনি বলেন, আমার ও রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মধ্যে সন্ধিকালে আমি সিরিয়া ভ্রমণ করি। সে সময় তথায় রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নামে নবী (সা.) -এর একখানা চিঠি আসলো। আবূ সুফইয়ান বলেন, উক্ত চিঠিখানা দিহইয়াহ্ আল কালবীই এনেছিলেন। দিহইয়াহ্ আল কালবী পত্ৰখানা বাসরার শাসনকর্তার কাছে প্রদান করলেন এবং বাসরার শাসনকর্তা তখন পত্রখানা হিরাক্লিয়াসের কাছে পেশ করলেন। তখন হিরাক্লিয়াস-এর উপস্থিত লোকজনকে বলল, এই যে ’আরব কুরায়শের এক লোক নুবুওয়াতের দাবি করেন, বর্তমানে এখানে (অর্থাৎ সিরিয়ায়) তার সম্প্রদায়ের কোন লোক আছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ আছে। আবূ সুফইয়ান বলেন, কুরায়শদের একটি দলের সাথে আমাকেও (হিরাক্লিয়াসের দরবারে) ডাকা হলো। আমরা হিরাক্লিয়াসের কাছে গেলে আমাদেরকে তার সামনেই বসানো হলো। অতঃপর সে আমাদেরকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল, যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবি করে তোমাদের মধ্যে বংশের দিক হতে কে তার নিকটতম? আবূ সুফইয়ান বললেন, আমি। তখন লোকেরা আমাকে তার একেবারে সম্মুখে এনে বসিয়ে দিল। আর আমার সঙ্গীদেরকে আমার পশ্চাতে বসাল। অতঃপর সম্রাট তার দোভাষীকে ডেকে বলল, তুমি এ লোকেদেরকে যিনি নবী বলে দাবি করেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞেস কর।
যদি ইনি মিথ্যা বলেন, তবে তারা যেন তাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে। আবূ সুফইয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ! লোকেরা আমার নামে মিথ্যা রটাবে বলে যদি আমার ভয় না হত, তাহলে আমি নিশ্চয় তাঁর [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর] সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম। অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বলল, তাকে (আবূ সুইয়ানকে) জিজ্ঞেস কর, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির (নুবুওয়্যাতের দাবিদারের) বংশ-মর্যাদা কেমন? আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। সে প্রশ্ন করল, তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ কি বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। সে প্রশ্ন করল, তোমরা কি তাঁকে তাঁর এ কথা বলার পূর্বে কোন বিষয়ে মিথ্যার অপবাদ দিতে? আমি বললাম, না। সে প্রশ্ন করল, সভ্রান্ত লোকেরা তাঁর অনুসরণ করে না। দুর্বল নিম্নশ্রেণির লোকেরা? আমি বললাম, বরং দুর্বল লোকেরা। সে জিজ্ঞেস করল, তাঁর অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে? আমি বললাম, বরং বাড়ছে। সে জিজ্ঞেস করল, তাদের মধ্যে কেউ কি উক্ত দীনে প্রবেশ করার পর তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তা বর্জন করে? আমি বললাম, না।
সে প্রশ্ন করল, তার সাথে তোমরা কখনো যুদ্ধ করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। সে প্রশ্ন করল, তার সাথে যুদ্ধে তোমাদের ফলাফল কেমন হয়েছে? আমি বললাম, তার ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা হয়েছে পালাক্রমে পানির বালতির মতো। কখনো তিনি পান আর কখনো আমরা পাই। কখনো কখনো তিনি আমাদের দিক হতে আক্রান্ত হন, আবার কখনো কখনো তাঁর পক্ষ হতে আক্রান্ত হন, আবার কখনো কখনো তার পক্ষ থেকে আমরা আক্রান্ত হই। সে প্রশ্ন করল, তিনি কী অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন? আমি বললাম না। তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি সন্ধি চুক্তিকে আবদ্ধ আছি। জানি না তিনি এ সময়ের মধ্যে কি করবেন। আবূ সুফইয়ান বলেন, এ শেষোক্ত কথাটি ব্যতীত তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলার সুযোগ আমি পাইনি।
সে প্রশ্ন করল, তোমাদের মধ্য হতে কেউ কি তার পূর্বে কখনো এ ধরনের কথা বলেছিল? আমি বললাম, না। এরপর হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বলল, এবার তুমি তাকে (আবূ সুফইয়ানকে) বল, আমি তোমাকে তাঁর বংশ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি উত্তরে বলেছ, তিনি তোমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। বস্তুত এরূপই নবী-রাসূল (সা.)দেরকে তাদের জাতির বংশেই পাঠানো হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম তার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ বাদশাহ ছিল কি না? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বলব, যদি তাঁর বাপদাদাদের মধ্যে কেউ বাদশাহ থাকত, তবে আমি বলতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁর পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চান। আমি তোমাকে তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম, তারা কি কওমের মধ্যে দুর্বল নাকি ভদ্র সম্ভ্রান্ত? তুমি বলেছ, বরং দুর্বল লোকেরাই তাঁর অনুসারী।
আসলে (প্রথমাবস্থায়) এরূপ লোকেরাই রাসূল (সা.)গণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার এ কথা বলার পূর্বে তোমরা কখনো তাকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করেছ কি? তুমি বলেছ, না। অতএব আমি বুঝতে পারলাম, তিনি (সা.) মানুষের সাথে মিথ্যা পরিহার করে চলেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে যাবেন, এটা কখনো হতে পারে না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেউ কি তাঁর দীনে প্রবেশ করার পর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তা বর্জন করে? তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের দীপ্তি ও সজীবতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে তখন এরূপই হয়, অবশেষে তা পূর্ণতা লাভ করে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর সাথে তোমরা কোন যুদ্ধ করেছ কি? জবাবে তুমি বলেছ, হ্যাঁ, যুদ্ধ হয়েছে এবং তাঁর ফলাফল পালাক্রমে পানির বালতির মতো। কখনো তিনি (সা.) লাভবান হন, আর কখনো তোমরা লাভবান হও। আসলে এভাবে রাসূল (সা.)দেরকে পরীক্ষা করা হয়। পরিণামে বিজয় তাঁদেরই জন্য। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সা.) কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন কি? তুমি বলেছ, না, ভঙ্গ করেন না। রাসূল (সা.)দের চরিত্র
এরূপই হয় যে, তারা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্য হতে কেউ কি তার পূর্বে কখনো এমন কথা (নবী হওয়ার কথা) বলেছিল? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুঝতে পারলাম, তার পূর্বে কেউ যদি এ কথা (নবী হওয়ার কথা) বলে থাকত তবে আমি বলতাম, এ ব্যক্তি পূর্বের কথার অনুবৃত্তি করেছে। আবূ সুফইয়ান বলেন, এরপর সে প্রশ্ন করল, তিনি (সা.) তোমাদেরকে কি বিষয় আদেশ দেন? আমরা বললাম, তিনি (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করার, যাকাত দেয়ার, আত্মীয়স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করার এবং যাবতীয় পাপাচার হতে বেঁচে থাকার জন্য নির্দেশ করেন।
এতদশ্রবণে হিরাক্লিয়াস বলল, তুমি এ যাবৎ যা কিছু বলেছ, তা যদি সত্য হয়, তাহলে তিনি নিশ্চয় নবী। অবশ্য আমি জানতাম তিনি (সা.) আবির্ভূত হবেন। কিন্তু তিনি তোমাদের (আরবদের) মধ্য হতে বের হবেন আমার এ ধারণা ছিল না। আর আমি যদি তাঁর নিকট পর্যন্ত পৌছতে পারব বলে বিশ্বাস করতাম, তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর সাক্ষাতের প্রত্যাশী হতাম। আর যদি আমি তার কাছে থাকতাম, তবে নিশ্চয় তাঁর পদদ্বয় ধুয়ে দিতাম। জেনে রাখ! অচিরেই তাঁর রাজত্ব আমার এ দু’ পায়ের নিচ পর্যন্ত পৌছে যাবে। অর্থাৎ তিনি (সা.) অল্প দিনের মধ্যেই গোটা রোম সাম্রাজ্যের মালিক হবেন। আবূ সুফইয়ান বলেন, এরপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই চিঠি আনিয়ে পাঠ করল। (বুখারী ও মুসলিম)

পূর্ণ হাদীসটি (بَاب الْكتاب إِلى الكفَّار) কাফিরদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পত্র প্রেরণ” অধ্যায়ে পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ مِنْ فِيهِ إِلَى فِيَّ قَالَ: انْطَلَقْتُ فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَبينا أَنا بِالشَّام إِذْ جِيءَ بِكِتَاب النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى هِرَقْلَ. قَالَ: وَكَانَ دِحْيَةُ الْكَلْبِيُّ جَاءَ بِهِ فَدَفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى فَدَفَعَهُ عَظِيمُ بُصْرَى إِلَى هِرَقْلَ فَقَالَ هِرَقْلُ: هَلْ هُنَا أَحَدٌ مِنْ قَوْمِ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ قَالُوا: نَعَمْ فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَدَخَلْنَا عَلَى هِرَقْلَ فَأَجْلَسَنَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ: أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ قَالَ أَبُو سُفْيَانَ: فَقُلْتُ: أَنَا فَأَجْلَسُونِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي ثُمَّ دَعَا بِتَرْجُمَانِهِ فَقَالَ: قُلْ لَهُمْ: إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ. قَالَ أَبُو سُفْيَانُ: وَايْمُ اللَّهِ لَوْلَا مَخَافَةُ أَنْ يُؤْثَرَ عَلَيَّ الْكَذِبُ لَكَذَبْتُهُ ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: سَلْهُ كَيْفَ حَسَبُهُ فِيكُمْ؟ قَالَ: قُلْتُ: هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ. قَالَ: فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكٍ؟ قُلْتُ: لَا. قَالَ: فَهَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ قُلْتُ: لَا. قَالَ: وَمَنْ يَتْبَعُهُ؟ أَشْرَافُ النَّاسِ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ؟ قَالَ: قُلْتُ: بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ. قَالَ: أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ قُلْتُ: لَا بَلْ يَزِيدُونَ. قَالَ: هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ؟ قَالَ: قلت: لَا. قلت: فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ؟ قَالَ: قُلْتُ: يَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالًا يُصِيبُ مِنَّا وَنُصِيبُ مِنْهُ. قَالَ: فَهَلْ يَغْدِرُ؟ قُلْتُ: لَا وَنَحْنُ مِنْهُ فِي هَذِهِ الْمُدَّةِ لَا نَدْرِي مَا هُوَ صَانِعٌ فِيهَا؟ قَالَ: وَاللَّهِ مَا أَمْكَنَنِي مِنْ كَلِمَةٍ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرَ هَذِهِ. قَالَ: فَهَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ؟ قُلْتُ: لَا. ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: قُلْ لَهُ: إِنِّي سَأَلْتُكَ عَنْ حَسَبِهِ فِيكُمْ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو حَسَبٍ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي أَحْسَابِ قَوْمِهَا. وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ فِي آبَائِهِ مَلِكٌ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَقُلْتُ: لَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ. قُلْتُ: رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ آبَائِهِ. وَسَأَلْتُكَ عَنْ أَتْبَاعه أضعافاؤهم أَمْ أَشْرَافُهُمْ؟ فَقُلْتَ: بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ. وَسَأَلْتُكَ: هَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَعَرَفْتُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَدَعَ الْكَذِبَ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ يَذْهَبُ فَيَكْذِبُ عَلَى اللَّهِ. وَسَأَلْتُكَ: هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا وَكَذَلِكَ الْإِيمَانُ إِذَا خَالَطَ بَشَاشَتُهُ الْقُلُوبَ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ وَكَذَلِكَ الْإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّكُمْ قَاتَلْتُمُوهُ فَتَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سِجَالًا يَنَالُ مِنْكُمْ وَتَنَالُونَ مِنْهُ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْتَلَى ثُمَّ تَكُونُ لَهَا الْعَاقِبَةُ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ لَا يَغْدِرُ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لَا تَغْدِرُ وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَقُلْتُ: لَوْ كَانَ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قُلْتُ: رَجُلٌ ائْتَمَّ بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ. قَالَ: ثُمَّ قَالَ: بِمَا يَأْمُرُكُمْ؟ قُلْنَا: يَأْمُرُنَا بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَالصِّلَةِ وَالْعَفَافِ. قَالَ: إِنْ يَكُ مَا تَقُولُ حَقًّا فَإِنَّهُ نَبِيٌّ وَقَدْ كُنْتُ أَعْلَمَ أَنَّهُ خَارِجٌ وَلَمْ أَكُنْ أَظُنُّهُ مِنْكُمْ وَلَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ لَأَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمَيْهِ وَلَيَبْلُغَنَّ مُلْكُهُ مَا تَحْتَ قَدَمَيَّ. ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَرَأَهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَقَدْ سَبَقَ تَمَامُ الْحَدِيثِ فِي «بَاب الْكتاب إِلى الكفَّار»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7) و مسلم (74 / 1773)، (4607) * و انظر ح 3926 ۔ 3927 لتمام الحدیث ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن ابن عباس قال: حدثني ابو سفيان بن حرب من فيه الى في قال: انطلقت في المدة التي كانت بيني وبين رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: فبينا انا بالشام اذ جيء بكتاب النبي صلى الله عليه وسلم الى هرقل. قال: وكان دحية الكلبي جاء به فدفعه الى عظيم بصرى فدفعه عظيم بصرى الى هرقل فقال هرقل: هل هنا احد من قوم هذا الرجل الذي يزعم انه نبي؟ قالوا: نعم فدعيت في نفر من قريش فدخلنا على هرقل فاجلسنا بين يديه فقال: ايكم اقرب نسبا من هذا الرجل الذي يزعم انه نبي؟ قال ابو سفيان: فقلت: انا فاجلسوني بين يديه واجلسوا اصحابي خلفي ثم دعا بترجمانه فقال: قل لهم: اني ساىل هذا عن هذا الرجل الذي يزعم انه نبي فان كذبني فكذبوه. قال ابو سفيان: وايم الله لولا مخافة ان يوثر علي الكذب لكذبته ثم قال لترجمانه: سله كيف حسبه فيكم؟ قال: قلت: هو فينا ذو حسب. قال: فهل كان من اباىه من ملك؟ قلت: لا. قال: فهل كنتم تتهمونه بالكذب قبل ان يقول ما قال؟ قلت: لا. قال: ومن يتبعه؟ اشراف الناس ام ضعفاوهم؟ قال: قلت: بل ضعفاوهم. قال: ايزيدون ام ينقصون؟ قلت: لا بل يزيدون. قال: هل يرتد احد منهم عن دينه بعد ان يدخل فيه سخطة له؟ قال: قلت: لا. قلت: فهل قاتلتموه؟ قلت: نعم. قال: فكيف كان قتالكم اياه؟ قال: قلت: يكون الحرب بيننا وبينه سجالا يصيب منا ونصيب منه. قال: فهل يغدر؟ قلت: لا ونحن منه في هذه المدة لا ندري ما هو صانع فيها؟ قال: والله ما امكنني من كلمة ادخل فيها شيىا غير هذه. قال: فهل قال هذا القول احد قبله؟ قلت: لا. ثم قال لترجمانه: قل له: اني سالتك عن حسبه فيكم فزعمت انه فيكم ذو حسب وكذلك الرسل تبعث في احساب قومها. وسالتك هل كان في اباىه ملك؟ فزعمت ان لا فقلت: لو كان من اباىه ملك. قلت: رجل يطلب ملك اباىه. وسالتك عن اتباعه اضعافاوهم ام اشرافهم؟ فقلت: بل ضعفاوهم وهم اتباع الرسل. وسالتك: هل كنتم تتهمونه بالكذب قبل ان يقول ما قال؟ فزعمت ان لا فعرفت انه لم يكن ليدع الكذب على الناس ثم يذهب فيكذب على الله. وسالتك: هل يرتد احد منهم عن دينه بعد ان يدخل فيه سخطة له؟ فزعمت ان لا وكذلك الايمان اذا خالط بشاشته القلوب. وسالتك هل يزيدون ام ينقصون؟ فزعمت انهم يزيدون وكذلك الايمان حتى يتم وسالتك هل قاتلتموه؟ فزعمت انكم قاتلتموه فتكون الحرب بينكم وبينه سجالا ينال منكم وتنالون منه وكذلك الرسل تبتلى ثم تكون لها العاقبة. وسالتك هل يغدر فزعمت انه لا يغدر وكذلك الرسل لا تغدر وسالتك هل قال هذا القول احد قبله؟ فزعمت ان لا فقلت: لو كان قال هذا القول احد قبله قلت: رجل اىتم بقول قيل قبله. قال: ثم قال: بما يامركم؟ قلنا: يامرنا بالصلاة والزكاة والصلة والعفاف. قال: ان يك ما تقول حقا فانه نبي وقد كنت اعلم انه خارج ولم اكن اظنه منكم ولو اني اعلم اني اخلص اليه لاحببت لقاءه ولو كنت عنده لغسلت عن قدميه وليبلغن ملكه ما تحت قدمي. ثم دعا بكتاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فقراه. متفق عليه وقد سبق تمام الحديث في «باب الكتاب الى الكفار» متفق علیہ ، رواہ البخاری (7) و مسلم (74 / 1773)، (4607) * و انظر ح 3926 ۔ 3927 لتمام الحدیث ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: আবূ সুফইয়ান-এর আসল নাম হলো সখর। তিনি হস্তির বছরের দশ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মক্কা বিজয়ের রাতে ইসালাম গ্রহণ করেন। তিনি ত্বায়িফ ও হুনায়নের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইয়ারমূকের দিনে তার চোখ উপড়িয়ে ফেলা হয়। তিনি মদীনায় মারা যান। উসমান (রাঃ) তাঁর জানাযার সালাতে ইমামতি করেন।
(مِنْ فِيهِ إِلَى فِيَّ) অর্থাৎ এ হাদীসটি তার মুখ থেকে সরাসরি আমার মুখে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আমাদের মাঝে কেউ মধ্যস্থিত ব্যক্তি নেই। এভাবেই ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন। বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, তার অর্থ হলো আমার আর তার মাঝে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। যেমনটি হাদ্দাসানী শব্দ দ্বারা বুঝা যায়। অনুরূপভাবে তার কথা ফিয়্যা। আর যদি সেখানে কেউ উপস্থিত থাকত তবে তার জন্যও সে হাদীসটি বর্ণনা করা জায়িয হত। তাহলে হাদীসটি শুধু তার মুখ থেকে তার মুখে সীমাবদ্ধ থাকত না।
(لَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থৎ হুদায়বিয়ার সন্ধি। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা ছিল ষষ্ঠ হিজরীর ঘটনা। আর এই সন্ধির মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল দশ হিজরী পর্যন্ত। কিন্তু তারা এই চুক্তি ভেঙ্গে ছিল খুযাআহ্ গোত্রের কতিপয় লোককে হত্যা করে, যাদের সাথে তাদের সন্ধি চুক্তি হয়েছিল। আর এটা ছিল অষ্টম হিজরীর ও মক্কাহ্ বিজয়ের সময়ের ঘটনা।
(فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ) অর্থাৎ কুরায়শদের কতিপয় লোককে। আর তারা ছিল ত্রিশজন লোক। কথিত আছে, মুগীরা ইবনু শুবাহ্ (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন। তবে তিনি আগেই ইসালাম গ্রহণ করেছিলেন। কেননা তিনি খন্দকের যুদ্ধের বছরে ইসালাম কবুল করেন। অতএব তিনি হাযির হওয়া থেকে দূরে ছিলেন। আর তিনি মুসলিম হওয়ার কারণে চুপ ছিলেন।
(أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟) অর্থাৎ ‘উলামাগণ বলেন, তিনি তার সবচেয়ে কাছের লোককে জিজ্ঞেস করার কারণ হলো তিনি তাঁর অবস্থা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর তার হকের ব্যাপারে তিনি মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকবেন।
(وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي) অর্থাৎ তার সাথিদেরকে তার পিছনে বসানোর কারণ হলো যেন তারা তার মিথ্যা কথা হতে তাকে ধরে তাদেরকে সহায়তা করতে পারে। আর তার থেকে তারা যেন লজ্জা না পায়। অথবা এটারও সম্ভাবনা আছে যে, তাদেরকে হাতের দ্বারা তার দিকে ইশারা করলেন আর তার বিরূদ্ধে দলীল হিসেবে থাকতে বললেন। এই ইশারা হতে পারে হাত দিয়ে বা মাথা নাড়িয়ে ইত্যাদি ভাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)