পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ
৫৭৭৩-[৩৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা সকল নবীগণের ও সকল মালায়িকা’র (ফেরেশতাগণের) ওপরে মুহাম্মাদ (সা.) -কে মর্যাদা দান করেছেন। লোকেরা প্রশ্ন করলেন, হে আবূ আব্বাস। (ইবনু আব্বাস-এর উপনাম) আল্লাহ মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) উপরে কিরূপে তাকে ফযীলাত দিয়েছেন? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা আকাশবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে বলবে যে, তিনি ব্যতীত আমিই ইলাহ’, তাহলে আমি তাকে তার প্রতিফল দেব জাহান্নাম, যালিমদেরকে আমি এভাবেই পুরস্কার দিয়ে থাকি”- (সূরাহ্ আল আম্বিয়া ২১ : ২৯)। আর আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছেন, “আমি তোমাকে দিয়েছি স্পষ্ট বিজয়। যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পিছের যাবতীয় ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন..."- (সূরাহ আল ফাতহ ৪৮: ১-২)। লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, নবীদের ওপর কিভাবে তাঁকে ফযীলত দেয়া হয়েছে? উত্তরে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমি কোন রাসূলকেই তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাইনি যাতে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে (আমার নির্দেশগুলো) বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথহারা করেছেন..."- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ৪)। আর আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, (হে নবী মুহাম্মাদ!) “আমি আপনাকে গোটা মানব সমাজের জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি..."- (সূরাহ্ সাবা- ৩৪: ২৮)। অতএব আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জিন্ ও ইনসান উভয় সম্প্রদায়ের নিকটেই পাঠিয়েছেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)
عَن ابْن عبَّاس قَالَ: إنَّ الله تَعَالَى فضل مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ وَعَلَى أَهْلِ السَّمَاءِ فَقَالُوا يَا أَبَا عَبَّاسٍ بِمَ فَضَّله الله عَلَى أَهْلِ السَّمَاءِ؟ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لِأَهْلِ السَّمَاءِ [وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَهٌ مِنْ دُونِهِ فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نجزي الظَّالِمين] وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: [إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تأخَّر] قَالُوا: وَمَا فَضْلُهُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ؟ قَالَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: [وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاء] الْآيَةَ وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: [وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا كَافَّة للنَّاس] فَأرْسلهُ إِلَى الْجِنّ وَالْإِنْس
اسنادہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 25 ۔ 26 ح 47) و الحاکم (2 / 350) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.) -কে সকল মালাক (ফেরেশতা), নবী-রাসূল, জিন ও মানুষের ওপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। মুহাম্মাদ (সা.) -এর মর্যাদা মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) ওপর দিয়েছেন। তার মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, “নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সৎপথে পরিচালিত করেন।” (সূরাহ্ আল ফাতহ ৪৮:১-২)
অত্র আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে অনুগ্রহ করে তার পূর্বের ও পরের গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আর তার প্রতি রহমত অবতীর্ণ করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা আসমানবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে বলবে, তিনি ব্যতীত আমিই ইলাহ তাকে আমরা জাহান্নামের শাস্তির প্রতিদান দিব, এভাবেই আমরা যালিমদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরাহ্ আল আম্বিয়া-২১: ২৯)
(وَ مَنۡ یَّقُلۡ مِنۡهُمۡ...) আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা'আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অন্যান্য সৃষ্টিজীবকে বুঝিয়েছেন। আয়াতের মাঝে আকাশবাসীদের অপরাধের কারণে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে কোমলতা সহজতরভাবে সম্বোধন করেছেন আর আসমানবাসীদেরকে কঠিনভাবে, কঠোরতার সাথে সম্বোধন করেছেন। - আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ...) (১৪:৪) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: এ আয়াত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে অন্যান্য সকল নবী-রাসূলদের ওপরে। কেননা এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রেরণ করা হয়েছে বিশ্বের সকল মানুষদের জন্য। সকল মানুষকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করার জন্য। তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য মূর্তিপূজার ‘ইবাদত বর্জন করে আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে আসার জন্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)