৫৭৫০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৫০-[১২] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা সমগ্র জমিনকে আমার জন্য সংকুচিত করলেন, তখন আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পেলাম। আমার উম্মতের রাজত্ব অদূর ভবিষ্যতে সে পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, যে পর্যন্ত জমিন আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছিল। আর আমাকে দুটি ধনভাণ্ডার দেয়া হয়েছে, একটি লাল এবং অপরটি সাদা (অর্থাৎ কায়সার ও কিসরার ধনভাণ্ডার) আর আমি আমার প্রভুর কাছে আমার উম্মতের জন্য এই আবেদন করি যেন তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষে ধ্বংস না করা হয়। আর তাদের ওপর যেন স্বজাতি ছাড়া অন্য শত্রুকে এমনভাবে চাপিয়ে দেয়া না হয় যে, তারা মুসলিমদের কেন্দ্রস্থলকে গ্রহণ করে নেয়। আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি যখন কোন ব্যাপারে ফয়সালা করে ফেলি, তখন তা পরিবর্তন হয় না। আমি তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে এ অঙ্গীকার দিচ্ছি যে, আমি তাদেরকে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করব না এবং তাদের স্বজাতি ছাড়া শত্রুতা তাদের ওপর এমনভাবে চাপিয়ে দেব না, যাতে তারা মুসলিমদের কেন্দ্রস্থল ধ্বংস করতে পারে। এমনকি দুনিয়ার সকল কাফির বিশ্বের সকল প্রান্ত হতেও একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ওপর আক্রমণ চালায়। অবশ্য তারা (মুসলিমরা) একে অপরে লড়াই করবে। একে অন্যকে ধ্বংস করতে থাকবে এবং কয়েদ ও বন্দি করতে থাকবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ زَوَى لِيَ الْأَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ: الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ وإنَّ ربِّي قَالَ: يَا محمَّدُ إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ وأنْ لَا أُسلطَ عَلَيْهِم عدُوّاً سِوَى أَنْفُسِهِمْ فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا وَيَسْبِي بَعضهم بَعْضًا . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (19 / 2889)، (7258) ۔
(صَحِيح)

وعن ثوبان قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله زوى لي الارض فرايت مشارقها ومغاربها وان امتي سيبلغ ملكها ما زوي لي منها واعطيت الكنزين الاحمر والابيض واني سالت ربي لامتي ان لا يهلكها بسنة عامة وان لا يسلط عليهم عدوا من سوى انفسهم فيستبيح بيضتهم وان ربي قال يا محمد اذا قضيت قضاء فانه لا يرد واني اعطيتك لامتك ان لا اهلكهم بسنة عامة وان لا اسلط عليهم عدوا سوى انفسهم فيستبيح بيضتهم ولو اجتمع عليهم من باقطارها حتى يكون بعضهم يهلك بعضا ويسبي بعضهم بعضا رواه مسلمرواہ مسلم 19 2889 7258 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (زَوَى لِيَ الْأَرْضَ) “ভূমিকে আমার জন্য সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন।” এ হাদীসে কয়েকটি প্রকাশ্য মু'জিযা বা অলৌকিক নিদর্শনের বিবরণ রয়েছে। উলামাগণ বলেন, লাল ও সাদা দুই খাযানা দ্বারা স্বর্ণ ও রোপ্য মুদ্রা বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা ‘ইরাক ও শামের কিসরা-কায়সারের ধনভাণ্ডার উদ্দেশ্য। উম্মাতের রাজত্ব পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ব্যাপ্তি লাভ করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ইসলামী রাজত্ব পূর্ব ও পশ্চিমে ব্যাপকতা লাভের তুলনায় উত্তর দক্ষিণে অনেক কম হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ওয়াহী ছাড়া কিছু বলেন না, অর্থাৎ যা বলেন তা ওয়াহীর ভিত্তিতে বলেন। এসব ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা তারই প্রকাশ। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: ফিতান, অনুচ্ছেদ: কিয়ামতের নিদর্শন)

(أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ) سَنَةٍ عَامَّةٍ অর্থাৎ এমন দুর্ভিক্ষ যা মুসলিমদের সকল দেশে ছড়িয়ে যায়। মুসলিমের সকল দেশ পরিব্যাপ্তি কোন দুর্ভিক্ষ দিয়ে যেন এই উম্মতকে ধ্বংস না করেন।
(فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ) অর্থাৎ মুসলিমদের শিকড় উপড়ে ফেলে এমন কোন অমুসলিম শত্রু যেন তাদের ওপর চড়াও না হয়। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (بيضة) দ্বারা মুসলিম সমাজ এবং তাদের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র এবং দা'ওয়াতী মিশন। যেমন- (بيضة الدار) বলা হয়, ঘরের মধ্যবর্তী স্থান ও উৎকৃষ্ট জায়গাকে। মর্ম হলো, তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিবে এমন কোন শত্রু যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়। (بيضة) বলার কারণ হলো, (بيضة) বা মূল ডিম ধ্বংস হলে ডিমের স্বাদ ও বাচ্চা সবই নষ্ট হয়ে গেল। মূল ডিম নষ্ট না হলে কোন সময় এক দুটি বাচ্চা বেঁচে যেতে পারে। অতএব উম্মাতের ডিম ধ্বংস করে ফেলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাদের পুরো অস্তিত্ব উপড়ে ফেলা।
কাফির শত্রু দ্বারা মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস না করার দু'আ আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছেন। তাই কাফির শত্রু মুসলিমদের ওপর চড়াও হলে বা যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে পারবে না। যতক্ষণ না তারা নিজেরা একে অপরকে ধ্বংস করছে। অর্থাৎ মুসলিমরা অন্য শত্রুর দ্বারা সমূলে ধ্বংস হবে না। কিন্তু তারা পরস্পর মারামারিতে লিপ্ত হলে একে অপরকে ধ্বংস করে সমূলে বিনাশ হয়ে যাবে।
سَأَلْتُ اللهُ ثَلَاثًا فَأَعْطَافُي اثْنَتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً. سَأَلْتُدُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي غَرَقًا فَأَعْطَانِيهَا. وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَايُسَلِّطَ عَدُوًّامِنْ غَيْرِهِمْ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَايُلْقِيَ بِأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَرَدَّعَلَيَّ.
 “আমি আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিসের আবেদন করেছি। আল্লাহ তা'আলা আমাকে দুটি দিয়েছেন এবং একটি বারণ করেছেন। আমি আবেদন করেছি, আমার উম্মাতকে যেন ডুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি তা দিয়েছেন। আমি আবেদন করেছি, তাদের বাহিরের কোন শত্রু যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়, তিনি তা দিয়েছেন। আমি আবেদন করেছি, তাদের শক্তি পরস্পরের মধ্যে নিক্ষেপ না করেন। তিনি আমার এই প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।” (সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা, ১/৬০৩)।

(إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ) “আমি কোন ফয়সালা করে ফেললে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না।” মিরক্কাতে উল্লেখ রয়েছে, মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার ফয়সালা দুই ধরনের। একটি চূড়ান্ত, আরেকটি কোন কর্মের সাথে শর্তযুক্ত। যেমন সে এই কাজ করলে এমন হবে, ঐ কাজ করলে এমন হবে। এ জাতীয় ফয়সালার মাঝে মিটানো এবং বহাল রাখা সাব্যস্ত হয়। এ ব্যাপারেই আল্লাহ তা'আলা তার কিতাবে বলেন, (یَمۡحُوا اللّٰهُ مَا یَشَآءُ وَ یُثۡبِتُ) “আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন”- (সূরা আর রা'দ ১৩ : ৩৯)।
অপরদিকে চূড়ান্ত ফয়সালা হলো আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত ঐ ফয়সালা যা তিনি বান্দার জন্য অনাদিকাল থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। এটা কোন অবস্থায়ই পরিবর্তন হয় না। এর বিপরীত হওয়া অসম্ভব। এর বেলায় মিটানো এবং বহাল রাখা সাব্যস্ত হয় না।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন-( وَ اللّٰهُ یَحۡکُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُکۡمِهٖ) “আল্লাহ ফয়সালা করেন, তার ফয়সালার পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই”- (সূরাহ আর রা'দ ১৩ : ৪১)।
অতএব হাদীসের বাণী “আমি কোন ফয়সালা করে ফেললে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না।” তা এই প্রকারের। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে এখানে এ ব্যাখ্যা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা কোন ফয়সালা করলে অন্য কেউ তা প্রত্যাখ্যান বা পরিবর্তন করতে পারে না। তিনি নিজে চাইলে তার ফয়সালা বদলাতে পারেন। যেমন কেউ তাঁর কাছে দু'আ করলে তিনি চাইলে তা পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
এটাই হাদীসে বলা হয়েছে- (لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ) “দু'আ ছাড়া কোন কিছু ফয়সালা পরিবর্তন করতে পারে না।” (আল্লাহ ভালো জানেন] (সুনানুত্ তিরমিযী হা. ২১৩৯) (সম্পাদকীয়)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)