৫৭৩৪

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭৩৪-[৩৭] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা জমিন সৃষ্টি করেছেন শনিবারে, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন রবিবারে, গাছ-গাছালি সৃষ্টি করেছেন সোমবারে, খারাপ জিনিসসমূহ বানিয়েছেন মঙ্গলবারে, আলো বা জ্যোতি সৃষ্টি করেছেন বুধবারে, জীবজন্তু ও প্রাণিজগৎকে সৃষ্টি করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন বৃহস্পতিবারে, আর আদম আলায়হিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন জুমু’আর দিন ’আসরের সময়ের পরে। মূলত এটাই সর্বশেষ সৃষ্টি, দিনের শেষ সময়েই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ ’আসর ও রাত্রির মধ্যবর্তী সময়ে। (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيَّ فَقَالَ: «خلق الله الْبَريَّة يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الْأَحَدِ وَخلق الشّجر يَوْم الِاثْنَيْنِ وَخلق الْمَكْرُوه يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَآخِرِ سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلى اللَّيْل» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (27 / 2789)، (7054) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: اخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدي فقال: «خلق الله البرية يوم السبت وخلق فيها الجبال يوم الاحد وخلق الشجر يوم الاثنين وخلق المكروه يوم الثلاثاء وخلق النور يوم الاربعاء وبث فيها الدواب يوم الخميس وخلق ادم بعد العصر من يوم الجمعة في اخر الخلق واخر ساعة من النهار فيما بين العصر الى الليل» . رواه مسلم رواہ مسلم (27 / 2789)، (7054) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: শায়খ সালিহ আল উসায়মীন (রহিমাহুল্লাহ) ‘রিয়াদুস সালিহীন’-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন। তবে ‘উলামারা হাদীসটির উপর আপত্তি তুলেছেন। তাই হাদীসটি সহীহ নয়। নবী (সা.) থেকে সহীহ সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়নি। কেননা এটা কুরআনের বিপরীত। আর যা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক তা অগ্রহণযোগ্য। কেননা যারা বর্ণনাকারী তারা মানুষ, তাদের ভুল হতে পারে আবার শুদ্ধ হতে পারে। অপরদিকে কুরআনে কোন ভুল নেই। কুরআন সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং তাওয়াতুরের মাধ্যমে বর্ণিত। কুরআনের সাথে কোন হাদীসের বৈপরীত্য দেখা দিলে কুরআন সেই হাদীসটি সহীহ নয় বলে ফয়সালা করে। কেননা রাবীগণ নবী (সা.) থেকে সরাসরি হাদীসগুলো শুনেননি। তারা অন্যের সূত্রে শুনেছেন এবং তা রাসূল (সা.) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আর এভাবে তাদের কখনো কখনো ভুল হয়ে যায়। কিন্তু কুরআনে কোন ভুল নেই। আহলে ইলমগণ ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ)-এর এ হাদীসটির উপর আপত্তি তুলেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা মানবজাতি সকলেই মানুষ। ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) যেমন মানুষ অন্যরাও মানুষ। সবারই ভুল শুদ্ধ রয়েছে। তাই এই হাদীস নিয়ে আমাদের আলোচনার প্রয়োজন নেই। (শারহু রিয়াদিস সালিহীন- অনুচ্ছেদ: দাজ্জালের হাদীস ও কিয়ামতের আলামাতসমূহ)

ইবনু কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমের গরীবের অন্তর্ভুক্ত। আলী ইবনুল মাদীনী, বুখারী এবং হাদীসের অন্যান্য হাফিযরা হাদীসটির ব্যাপারে কথা বলেছেন। তারা এটাকে কা'ব-এর কথা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) কা'ব আহবার থেকে এটা শুনেছেন এবং কোন কোন বর্ণনাকারী রাসূল (সা.)-এর দিকে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। (ইবনু কাসীর ১/২১৫)
কুরআনের সাথে হাদীসটি সাংঘর্ষিক; কেননা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় আসমান জমিনসহ পুরো জগতকে ছয় দিনে বানানোর কথা বলা হয়েছে। আবার দুই দিনে জমিন, আরো দুই দিনে জমিনের যাবতীয় বস্তুসহ মোট চার দিনের পৃথিবী ও তাতে বিদ্যমান বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর দুই দিনে সাত আসমান সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব বর্ণিত হাদীসটি আসমান জমিনের বানানোর দিন ও বিবরণ সবদিক দিয়েই কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

দ্র. সনদগত দিক থেকে হাদীসটি সহীহ। আর এ হাদীসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাদীসে ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু কুরআন ত্রুটিমুক্ত। তবে হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমভাবে সহীহ মুসলিমের সব হাদীসে ত্রুটিযুক্ত মনে করা ঠিক নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)