৫৭২৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭২৪-[২৭] আবু মূসা (রাঃ) নবী (সা.) - হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: পুরুষদের মাঝে অনেকেই কামিল হয়েছেন, কিন্তু নারীদের মধ্যে ’ইমরান-এর মেয়ে মারইয়াম এবং ফির’আওন-এর স্ত্রী আসিয়াহ্ ছাড়া আর কেউই কামিল হননি। তিনি আরো বলেছেন, সকল নারীর ওপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর সম্মান এমন, যেমন সর্ব রকমের খাদ্য সামগ্রীর উপর ’সারীদের সম্মান। (বুখারী ও মুসলিম)

মুফাখারাহ্ ও ’আসাবিয়্যাহ্ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, আনাস (রাঃ)-এর হাদীস (يَا خَيْرَ الْبَرِيَّةِ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস (أَيُّ النَّاسِ أَكْرَمُ) আর ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস (الْكَرِيم بن الْكَرِيمِ)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَمُلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيرٌ وَلَمْ يَكْمُلْ مِنَ النساءِ إِلا مريمُ بنتُ عِمْرَانَ وَآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ وَفَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذَكَرَ حَدِيثَ أَنَسٍ: «يَا خَيْرَ الْبَرِيَّةِ» . وَحَدِيثَ أَبِي هُرَيْرَةَ: «أَيُّ النَّاسِ أَكْرَمُ» وَحَدِيثُ ابْن عمر: الْكَرِيم بن الْكَرِيمِ: «. فِي» بَابِ الْمُفَاخَرَةِ وَالْعَصَبِيَّةِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3411)و مسلم (70 / 2431)، (6272) 0 حدیث ’’ خیر البریۃ ‘‘ تقدم (4896) و ’’ ای الناس ، اکرم ‘‘ تقدم (4893) و ’’ الکریم بن اکریم ‘‘ تقدم (4894) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي موسى عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «كمل من الرجال كثير ولم يكمل من النساء الا مريم بنت عمران واسية امراة فرعون وفضل عاىشة على النساء كفضل الثريد على ساىر الطعام» . متفق عليه وذكر حديث انس: «يا خير البرية» . وحديث ابي هريرة: «اي الناس اكرم» وحديث ابن عمر: الكريم بن الكريم: «. في» باب المفاخرة والعصبية متفق علیہ ، رواہ البخاری (3411)و مسلم (70 / 2431)، (6272) 0 حدیث ’’ خیر البریۃ ‘‘ تقدم (4896) و ’’ ای الناس ، اکرم ‘‘ تقدم (4893) و ’’ الکریم بن اکریم ‘‘ تقدم (4894) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (كَمُلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيرٌ) অর্থাৎ পুরুষ জাতির মাঝে অনেকে পরিপূর্ণ হয়েছে। এমনকি তাদের মাঝে রাসূল, নবী, খলীফাহ্, উলামাহ্ ও ওয়ালী হয়েছেন।
(وَلَمْ يَكْمُلْ مِنَ النساءِ إِلا مريمُ بنتُ عِمْرَانَ وَآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ)  “আর নারীদের মধ্যে মারইয়াম ও ফির'আওন-এর স্ত্রী ‘আসিয়াহ্ ছাড়া কেউ পরিপূর্ণ হয়নি।” পরিপূর্ণতাকে এই দুজনের মাঝে সীমাবদ্ধ করার কারণে নারীদের মাঝে তারা নবী ছিলেন বলে দলীল দেয়া হয়। কেননা নবীরা হচ্ছেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক পরিপূর্ণ। তারপর ওয়ালী, তারপর সিদ্দীক, তারপর শহীদ। যদি তারা নবী হন তবে পরিপূর্ণতাকে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার অর্থ এই হবে যে, নারীদের মাঝে ওয়ালী, সিদ্দীক, শহীদ নেই। তবে কিরমানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পূর্ণাঙ্গে উপনীত হওয়ার দ্বারা তারা নবী হওয়া আবশ্যক হয় না। যে ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ বলা হয়েছে সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিপূর্ণ হতে পারে। অতএব তারা পূর্ণাঙ্গ পৌছেছেন দ্বারা উদ্দেশ্য হবে নারীদের সকল শ্রেষ্ঠ গুণে তাদের স্তরে কেউ পৌছেনি।

(كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ) “যেমন সারীদের শ্রেষ্ঠত্ব সকল খাবারের উপর”। রুটিকে গোশত বা তার ঝোলের সাথে ভিজিয়ে যে খাবার তৈরি করা হয় সেটাকে সারীদ। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সারীদের সাথে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে তুলনা করার কারণ হলো, সারীদ আরবের শ্রেষ্ঠ খাবার। সারীদকে তারা সবচেয়ে তপ্তময় খাবার মনে করে এবং সারীদের পরিতৃপ্তি অন্য খাবারে হয় না। তবে ঐ সারীদের প্রশংসা করেন যা গোশত দিয়ে তৈরি। বর্ণনায় রয়েছে, “খাবারের সরদার গোশত”। তাই ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে যেন নারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, যেমন সকল খাবারের উপর গোশতের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। সারীদের সাথে তুলনা দেয়ার রহস্য হলো, গোশতের সাথে সারীদের মাঝে খাদ্য, স্বাদ, শক্তি, খেতে সহজসাধ্য, চাবাতে কষ্ট কম, দ্রুত গলায় প্রবেশসহ খাবারের সকল উত্তম গুণাবলি সারীদে রয়েছে। ঠিক তদ্রুপ ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে সুন্দর আকৃতি, সুন্দর চরিত্র, কথার মাঝে মাধুরতা, ভাষায় সাহিত্য, শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, সঠিক রায়, বুদ্ধিতে বিচক্ষণতা, স্বামীর প্রতি ভালোবাসাসহ নারীর যাবতীয় শ্রেষ্ঠ গুণাবলি দেয়া হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
 
‘আয়িশাহ্, খাদীজাহ্, এবং ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) -গণের মাঝে কে শ্রেষ্ঠ এ নিয়ে ‘আলিমরা মতানৈক্য করেছেন। আকমাল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) ‘আয়িশাহ্ এবং খাদীজাহ্ (রাঃ) থেকে সর্বসম্মতিক্রমে উত্তম। তারপর খাদীজাহ্ (রাঃ), তারপর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)। বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে -
(خَيْرُ نِسَائِهَا مَرْيَمُ ابْنَةُ عِمْرَانَ وَخَيْرُ نِسَائِهَا خَدِيْجَةُ) “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী মারইয়াম ইবনু ইমরান এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী খাদীজাহ্”- (সহীহুল বুখারী হা. ৩৪৩২ ও ৩৮১৫, সহীহ মুসলিম হা. ২৪৩০)।
সহীহ হাদীসে রয়েছে, (فَاطِمَةُ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ) “ফাতিমা জান্নাতের নারীদের সরদার”- (ইমাম বুখারী তা'লীক স্বরূপ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, অধ্যায়: মর্যাদা, অনুচ্ছেদ: ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) -এর মর্যাদা)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(وَذَكَرَ حَدِيثَ أَنَسٍ) এই ইবারতে লেখক কয়েকটি বর্ণনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ইতোমধ্যে উদ্দেশ্য হলো, উপরোল্লিখিত হাদীসে কয়েকজন কামিল বা পূর্ণাঙ্গ নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কোন পুরুষের নাম না নিয়ে কেবল বলা হয়েছে, (كَمُلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيرٌ) অর্থাৎ “পুরুষ জাতির মাঝে অনেকে পরিপূর্ণ হয়েছে, তবে কোন কোন পূর্ণাঙ্গ মানুষের নাম রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র নিয়েছেন। যেমন আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, একদিন এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলল, (يَا خَيْرَ الْبَرِيَّةِ) অর্থাৎ, হে সৃষ্টির সেরা ব্যক্তি! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সৃষ্টির সেরা হলেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম।
এভাবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন মানুষ সর্বাধিক সম্মানী? তিনি (সা.) বললেন, মানুষের মাঝে যে সর্বাধিক মুত্তাকী সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানী। প্রশ্নকারীরা বললেন, এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সর্বাধিক সম্মানী ব্যক্তি হলেন আল্লাহ তা'আলার নবী ইউসুফ; আল্লাহ তা'আলার নবীর পুত্র, সেই নবী আল্লাহর নবীর পুত্র, সেই নবী আল্লাহ তা'আলার বন্ধুর পুত্র। অনুরূপ ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, সম্মানী, সম্মানীর পুত্র, সম্মানীর পুত্র, সম্মানীর পুত্র, ইউসুফ ইয়াকূব-এর পুত্র, ইয়াকূব ইসহাক-এর পুত্র, ইসহাক ইবরাহীম-এর পুত্র। এসব বর্ণনা মুখারামাহ্ এবং আসাবিয়্যাহ্ অনুচ্ছেদে রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)