৫৭১৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭১৩-[১৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মৃত্যুর মালাক (ফেরেশতা) মূসা ইবনু ইমরান (আঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আপনার প্রভুর ডাকে সাড়া দিন। তখন মূসা আলায়হিস সালাম মৃত্যুর ফেরেশতার চোখের উপর চপেটাঘাত করলেন। ফলে তার চোখ উপড়ে গেল। তিনি বলেন, অতঃপর মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহ তা’আলার কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন, যে মরতে চায় না। এমনকি সে আমার চোখ উপড়িয়ে ফেলেছে।
তিনি (সা.) বলেছেন: তখন আল্লাহ তা’আলা তার চোখ ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি পুনরায় আমার সেই বান্দার কাছে যাও এবং বল, তুমি কি বেঁচে থাকতে চাও? যদি তুমি বেঁচে থাকতে চাও, তাহলে একটি ষাড়ের পিঠে হাত রাখ এবং তোমার হাত তার যতগুলো লোম ঢেকে ফেলবে, প্রতিটি লোমের বদলে তোমাকে এক এক বছর আয়ু দান করা হবে। তা শুনে মূসা আলায়হিস সালাম প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, তারপর কি হবে? মালাক (ফেরেশতা) বললেন, অতঃপর তোমাকে মরতে হবে। তখন মূসা ’আলায়হিস সালাম বললেন, তাহলে কাছাকাছি সময়ে এখনই তা হোক। (এরপর তিনি দু’আ করলেন,) হে প্রভু! আপনি আমাকে পবিত্র ভূমি (বায়তুল মাক্বদিস) হতে একটি ঢিল নিক্ষেপের দূরত্ব পর্যন্ত কাছে পৌছিয়ে দিন। (অর্থাৎ তথায় যেন আমাকে দাফন করা হয়) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর শপথ! যদি আমি সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে পথ পার্শ্বে লাল বালুর টিলার কাছে তাঁর কবর আমি তোমাদেরকে দেখিয়ে দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جَاءَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوسَى ابْنِ عِمْرَانَ فَقَالَ لَهُ: أَجِبْ رَبَّكَ . قَالَ: «فَلَطَمَ مُوسَى عَيْنَ مَلَكَ الْمَوْتِ فَفَقَأَهَا» قَالَ: فَرَجَعَ الْمَلَكُ إِلَى اللَّهِ فَقَالَ: إِنَّكَ أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لَكَ لَا يُرِيدُ الْمَوْتَ وَقَدْ فَقَأَ عَيْنِي قَالَ: فَرَدَّ اللَّهُ إِلَيْهِ عَيْنَهُ وَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى عَبْدِي فَقُلْ: الْحَيَاةَ تُرِيدُ؟ فَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْحَيَاةَ فَضَعْ يَدَكَ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ فَمَا تَوَارَتْ يَدُكَ مِنْ شَعْرِهِ فَإِنَّكَ تَعِيشُ بِهَا سَنَةً قَالَ: ثُمَّ مَهْ؟ قَالَ: ثُمَّ تَمُوتُ. قَالَ: فَالْآنَ مِنْ قَرِيبٍ رَبِّ أَدْنِنِي مِنَ الْأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَوْ أَنِّي عِنْدَهُ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ إِلَى جَنْبِ الطَّرِيقِ عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1339) و مسلم (158 ، 157 / 2372)، (6148) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: جاء ملك الموت الى موسى ابن عمران فقال له: اجب ربك . قال: «فلطم موسى عين ملك الموت ففقاها» قال: فرجع الملك الى الله فقال: انك ارسلتني الى عبد لك لا يريد الموت وقد فقا عيني قال: فرد الله اليه عينه وقال: ارجع الى عبدي فقل: الحياة تريد؟ فان كنت تريد الحياة فضع يدك على متن ثور فما توارت يدك من شعره فانك تعيش بها سنة قال: ثم مه؟ قال: ثم تموت. قال: فالان من قريب رب ادنني من الارض المقدسة رمية بحجر . قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «والله لو اني عنده لاريتكم قبره الى جنب الطريق عند الكثيب الاحمر» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (1339) و مسلم (158 ، 157 / 2372)، (6148) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (جِبْ رَبَّكَ) তুমি তোমার রবের ডাকে সাড়া দাও। অর্থাৎ মৃত্যুকে বরণ করার মাধ্যমে তোমার প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দাও, আমি তোমার প্রাণ নিতে এসেছি।
 (فَلَطَمَ مُوسَى عَيْنَ مَلَكَ الْمَوْتِ فَفَقَأَهَا) “মূসা আলায়হিস সালাম মালাকুল মাওতের চোখে চড় মেরে অন্ধ করে দেন।” বলা হয়, মালাক (ফেরেশতা) কখনো কখনো মানুষের আকার ধারণ করেন। তাদের এই আকার ধারণ মানুষের জন্য পোশাক পরিধানের মতো। মূসা আলায়হিস সালাম-এর চড় মালাকের বাহ্যিক ধারণকৃত চোখে প্রভাব ফেলেছিল। মালাকের মৌলিক চোখে নয়। কেননা মালায়িকার (ফেরেশতাদের) মৌলিক চোখে চড় ইত্যাদি আঘাত করতে পারে না।

(ثُمَّ مَهْ؟) مه শব্দটি মূলত ما ইসতিফহামিয়্যাহ্ এবং সাকতার ه মিলে ঘটিত। যার অর্থ: তারপর কী? অর্থাৎ এই জীবন পাওয়ার পর আবার জীবন নাকি মৃত্যু? মালাক বললেন, তারপর তুমি মারা যাবে। তখন। মূসা আলায়হিস সালাম বলেন, (فَالْآنَ مِنْ قَرِيبٍ) অর্থাৎ তাহলে নিকটবর্তী সময়েই। অর্থাৎ পরে যখন মরতেই হবে তাহলে এই অবস্থায় মৃত্যুকে আমি পছন্দ করলাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ, নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ)
কোন কোন নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষী এ হাদীসকে অস্বীকার করেছে এবং এর কল্পনাকে অস্বীকার করেছে। তারা বলে, মূসার জন্য মালাকুল মাওতের চোখ অন্ধ করা কিভাবে বৈধ হয়? ‘উলামারা এর কয়েকটি উত্তর দিয়ে থাকেন।
[এক] এটা অসম্ভব নয় যে, মূসা আলায়হিস সালাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এই চড় মারার অনুমতি নিয়েছিলেন এবং এটা ছিল যাকে চড় মারা হয়েছে তার জন্য পরীক্ষা। আর আল্লাহ তা'আলা তার সৃষ্টির বেলায় যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন এবং যা দিয়ে ইচ্ছা তা দিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন।
[দুই] এটা রূপক অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ মূসা আলায়হিস সালাম মালাকুল মাওতের সাথে বাহাস ও বিতর্ক করেছেন এবং দলীল প্রমাণে। মালাকের (ফেরেশতার) ওপর জয়লাভ করেছেন। যেমন কেউ কাউকে দলীল প্রমাণে হারিয়ে দিলে বলা হয়ে থাকে, অমুক অমুকের চোখ অন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে তুমি কোন জিনিসে ত্রুটি প্রবেশ করিয়ে দিলে বলতে পারো, ‘আমি জিনিসটিকে কানা করে দিয়েছি। তবে এই ব্যাখ্যা দুর্বল। কেননা এ হাদীসেই রাসূল (সা.) বলেছেন, (فرد اللَّه عينه) “অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তার চক্ষু ফিরিয়ে দিলেন”। যদি বলা হয়, আল্লাহ তা'আলা চক্ষু ফিরিয়ে দিয়েছেন, অর্থাৎ- দলীল প্রমাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তবে এটা খুবই দুর্বল ব্যাখ্যা।

[তিন] মূসা আলায়হিস সালাম বুঝতে পারেননি যে, ইনি মালাক এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত। তিনি ভেবেছেন এই লোক নিজের পক্ষ থেকে এসেছে। তাই তিনি তাকে প্রতিহত করতে চেয়েছেন। আর প্রতিহত করতে গিয়ে চক্ষু জখম হয়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি চোখ অন্ধ করে দিতে চেয়েছেন এমন নয়। চড় মারার বর্ণনা এটাকে সমর্থন করে। ইমাম আবু বাকর, ইবনু খুযায়মাহ এবং অন্যরা এই উত্তর দেন। মারি এবং কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এই মত পছন্দ করেন। তারা বলেন, হাদীসে কোথাও এমন কথা নেই যে, তিনি আঘাত দিয়ে চোখ নষ্ট করে দেয়ার উদ্দেশে এমনটি করেছেন। যদি বলা হয়, ফেরেশতা যখন দ্বিতীয়বার আসলেন, তখন তো মূসা স্বীকার করেছেন ইনি মালাকুল মাওত? উত্তর: দ্বিতীয়বার ফেরেশতা এমন নিদর্শন নিয়ে এসেছেন যার দ্বারা মূসা আলায়হিস সালাম বুঝতে পেরেছেন ইনি মালাকুল মাওত। যার ফলে এবার তিনি নিজেকে মালাকের সামনে সোপর্দ করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রথমে চিনতে না পারার কারণে সোপর্দ করেননি। (নাবাবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ- অধ্যায়: মর্যাদা, অনুচ্ছেদ: মূসা আলায়হিস সালাম -এর ফযীলত)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)