৫৫৩৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর

৫৫৩৫-[৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: (হে লোক সকল!) কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- (کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُهٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ) “আমি তোমাদেরকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনব যেমন প্রথমবার তৈরি করেছিলাম, এটা আমার প্রতিশ্রুতি, যা আমি অবশ্যই পূরণ করব"- (সূরাহ আল আম্বিয়া ২১: ১০৪)। [অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন,] সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমি দেখব যে, আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করে বামদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি বলব, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক। (কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?) তখন আল্লাহ বলবেন, যখন থেকে আপনি তাদেরকে রেখে পৃথক হয়ে চলে এসেছেন, তখন হতেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করে উল্টা পথে চলেছিল। তিনি (সা.) বলেন, তখন আল্লাহর নেক বান্দা ’ঈসা আলায়হিস সালাম যেমন বলেছিলেন অনুরূপ বলব, ’আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবহিত ছিলাম..... আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী’ পর্যন্ত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» ثُمَّ قَرَأَ: (كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فاعلين) وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ وَإِنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُولُ: أُصَيْحَابِي أُصَيْحَابِي فَيَقُولُ: إِنَّهُمْ لَنْ يَزَالُوا مرتدين على أَعْقَابهم مذْ فَارَقْتهمْ. فَأَقُول كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ: (وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دمت فيهم) إِلى قَوْله (الْعَزِيز الْحَكِيم) مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3349) و مسلم (58 / 2860)، (7201) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «انكم محشورون حفاة عراة غرلا» ثم قرا: (كما بدانا اول خلق نعيده وعدا علينا انا كنا فاعلين) واول من يكسى يوم القيامة ابراهيم وان ناسا من اصحابي يوخذ بهم ذات الشمال فاقول: اصيحابي اصيحابي فيقول: انهم لن يزالوا مرتدين على اعقابهم مذ فارقتهم. فاقول كما قال العبد الصالح: (وكنت عليهم شهيدا ما دمت فيهم) الى قوله (العزيز الحكيم) متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3349) و مسلم (58 / 2860)، (7201) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (الْغُرْلُ يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا) এর অর্থ (غَيْرُمَخْتُونِينَ) (খতনাহীন)। (قُلْفَةٌ) অর্থাৎ এমন চামড়াকে বলা হয় যাকে খতনা দেয়াতে কেটে ফেলতে হয়। এটা কাটাবিহীন উঠানো হবে। (শারহু নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা. ২৮৬)

(حُفَاة) এমন ব্যক্তি যার কোন জুতা এবং মোজা নেই। (عُرَاة) যার কোন আবরণ বা সতর নেই। বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ দাউদে বর্ণিত আবূ সাঈদ-এর হাদীসে রয়েছে, যখন আবূ সাঈদ-এর মৃত্যু হাজির হলো তখন তিনি নতুন কাপড় নিয়ে ডাকলেন ও তা পরিধান করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি। তিনি (সা.) বলেন, নিশ্চয় মৃত্যু ব্যক্তি যে কাপড়ে মারা গেছে, সে কাপড়ে তাকে পুনরুত্থান করা হবে। ইবনু 'আব্বাস-এর হাদীস ও আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর হাদীসকে এভাবে এক করা যায় যে, কারো হাশর হবে বিবস্ত্র হয়ে। আর কারো হাশর হবে কাপড় পরে অথবা সবাইকে উলঙ্গ করে জমা করা হবে। অতঃপর নবী 'আলায়হিস সালাম-দেরকে কাপড় পরানো হবে। আর যাকে প্রথমে কাপড় পরানো হবে তিনি হলেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। অথবা মানুষ যে কাপড়ে মারা গেছে সে কাপড়সহ কবর থেকে উত্থিত হবে। অতঃপর কাপড় তাদের থেকে খুলে পড়বে হাশরের সূচনালগ্নে। তারপর তারা উলঙ্গ হয়ে জমায়েত হবে। অতঃপর প্রথমে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে কাপড় পরিধান করানো হবে। আবার কেউ আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসকে শহীদের জন্য ধরেছেন। কারণ তাদের ব্যাপারে নির্দেশ হলো যে, তাদেরকে স্ব স্ব কাপড়ে ঢেকে দাফন করতে হবে। আবূ সাঈদ শহীদদের ব্যাপারে উপরোক্ত নির্দেশনা শুনেছেন কিন্তু তা সবার জন্য ধরে নিয়েছেন। যারা সাধারণের জন্য ধরেছেন, তাদের মধ্যে মু'আয ইবনু জাবাল (রাঃ) অন্যতম।
ইবনু আবদ্ দুনিয়া ‘আম্‌র ইবনু আসওয়াদ-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা মু'আয ইবনু জাবাল-এর আম্মাকে দাফন করতে গেলে তিনি নির্দেশ দিলেন মায়ের জন্য। তাই আমরা নতুন কাপড়ে কাফন দিলাম। আর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের উত্তম কাফনের ব্যবস্থা কর। কারণ এতেই তাদেরকে উঠানো হবে। কোন বিদ্বান কাপড়কে ‘আমলের অর্থ গ্রহণ করেছেন। কাপড় ‘আমল অর্থে ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ হলো আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ) “আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক”- (সূরাহ্ আল আ'রাফ ৭: ২৬)।
(وَ ثِیَابَکَ فَطَهِّرۡ) “তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ”- (সূরাহ্ আল মুদ্দাসসির ৭৪: ৪)।
এটা কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাখ্যা। তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো (وَعَمَلَكَ فَأَخْلِصْهُ) আর তোমার আমাকে নির্ভেজাল কর।
এ কথাটা আরো মজবুত হয় জাবির (রাঃ)-এর মারফু হাদীস দ্বারা, বলা হয়েছে, (يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَتَ عَلَيْهِ) “প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার শেষ ‘আমলের সাথে উঠানো হবে” হাদীসটিকে মুসলিম বর্ণনা করেন। কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসকে প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করেন। তার মতটি কুরআনের আয়াত দ্বারা সুদৃঢ় হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا فُرَادٰی کَمَا خَلَقۡنٰکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ) “(কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছ যেমনভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম”- (সূরা আল আন'আম ৬: ৯৪)।
তিনি আরো বলেন, (...کَمَا بَدَاَکُمۡ تَعُوۡدُوۡنَ) “...যেভাবে প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পুনরায়ও সেভাবেই সৃজিত হবে”- (সূরা আল আ'রাফ ৭: ২৯)। অতএব আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসকে শহীদদের জন্য প্রযোজ্য হিসেবে ধরতে হবে। কারণ তাদেরকে স্বীয় কাপড়ে দাফন করতে হয় এবং তাতেই তাদেরকে উঠানো হবে যাতে তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়।
(أَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ) কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ মুসলিম-এর শারাহতে বলেন, (خلائق) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের নবী ব্যতীত বাকী সব। অতএব তিনি নিজের সম্বোধনের ব্যাপকতার মধ্যে প্রবেশ করবেন না। কিন্তু কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ছাত্র পরে বলেন, যদি ‘আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীস না থাকত তবে তাঁর কথা ঠিক হত। আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন প্রথম খলীলুল্লাহ আলায়হিস সালাম-কে দুটি কিবতী কাপড় পরানো হবে। অতঃপর মুহাম্মাদ (সা.)-কে ‘আরশের ডানে চমৎকার এক সেট পোশাক পরানো হবে।
‘উবায়দ ইবনু উমায়র-এর মুরসালে বর্ণিত হয়েছে, মানুষকে খালি পায়ে উলঙ্গ করে উঠানো হবে। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আমি আমার খলীলকে উলঙ্গ দেখেছি। তাই ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে সাদা কাপড় পরানো হবে। তিনি হবেন প্রথম কাপড় পরিহিত ব্যক্তি। ইবরাহীম 'আলায়হিস সালাম প্রথম কাপড় পরা ব্যক্তি হওয়ার রহস্য হলো তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করার সময় বিবস্ত্র করা হয়েছিল। কেউ বলেন, পায়জামা দ্বারা সতর ঢাকার সুন্নাত তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন। সে কারণে তাকে প্রথম কাপড় পরানো হবে। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার খলীলকে কাপড় পরাও যাতে মানুষেরা বুঝতে পারে যে, তাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম প্রথম কাপড় পরিহিত ব্যক্তি হিসেবে বিশেষিত হওয়াতে এ কথা আবশ্যক হয় না যে, তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) থেকে সাধারণভাবে উত্তম।
(إِنَّهُمْ لَنْ يَزَالُوا مرتدين على أَعْقَابهم مذْ فَارَقْتهمْ) এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী (ما احد ثوابعدك) এর ব্যাখ্যা। নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার উদ্দেশ্য নিয়ে ‘আলিমগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন।

(এক) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুনাফিক মুরতাদগণ। তাদেরকে উজ্জ্বল চিহ্নসহ হাশর করা হবে। অতঃপর নবী (সা.) তাদের ওপর থাকা চিহ্ন দেখে ডাকতে থাকবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হবে এরা সেসব লোক নয় যাদের সাথে আপনি ওয়াদা করেছেন। এরা আপনার পরে পরিবর্তন হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাদের জন্য যে ইসলাম প্রকাশ পেয়েছিল তার উপর তারা মৃত্যুবরণ করেনি।

(দুই) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সে সমস্ত ব্যক্তিরা যারা রাসূল (সা.) -এর যামানায় ছিল, পরে তারা মুরতাদ হয়েছে। তাদের ওপরে উযূর চিহ্ন না থাকলেও নবী (সা.) তাদেরকে ডাকবেন। কারণ তিনি (সা.) স্বীয় জীবদ্দশায় তাদের ইসালাম সম্পর্কে জানতেন। তাদের ব্যাপারে বলা হবে, আপনার পরে তারা মুরতাদ হয়েছে।

(তিন) এ কথার অর্থ হলো উদ্দেশ্য হবে কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি, যারা তাওহীদের উপরে মৃত্যুবরণ করেছে এবং বিদআতী ব্যক্তি যারা বিদ'আতের কারণে ইসালামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়নি।
(তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড হা, ২৪২৩)

বায়যাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (مرتدين) শব্দটি তাঁদের ইসালাম থেকে মুরতাদ হওয়ার দলীল নয়। বরং তারা গণ্য হবে মু'মিনদের বিরুদ্ধাচরণকারী হিসেবে এবং ঈমানের দৃঢ়তা থেকে বিচ্যুত মুরতাদ হিসেবে। তারা সৎ ‘আমলকে মন্দ দিয়ে বদলিয়ে দিত। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা. ৬৫২৬)
(الْعَبْدُ الصَّالِحُ) থেকে উদ্দেশ্য ‘ঈসা আলায়হিস সালাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)