৫০১১

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা

৫০১১-[৯] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ যারা আমার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার উদ্দেশে সভা-সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আমার গুণগান করে, আমার উদ্দেশে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমারই ভালোবাসা অর্জনের জন্য নিজেদের সম্পদ পরস্পরের মধ্যে ব্যয় করে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়। (মালিক)[1]

আর তিরমিযীর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’আমার মহত্ব ও সম্মানের খাতিরে যারা পরস্পর মহববত করে, তাদের জন্য পরকালে বিরাট নূরের মিনার হবে, যা দেখে নবী ও শাহীদগণ ঈর্ষা করবেন’’।

وَعَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ وَالْمُتَجَالِسِينَ فِيَّ وَالْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ وَالْمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ . رَوَاهُ مَالِكٌ. وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيَّ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: الْمُتَحَابُّونَ فِي جَلَالِي لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاء

وعن معاذ بن جبل قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: قال الله تعالى: وجبت محبتي للمتحابين في والمتجالسين في والمتزاورين في والمتباذلين في . رواه مالك. وفي رواية الترمذي قال: يقول الله تعالى: المتحابون في جلالي لهم منابر من نور يغبطهم النبيون والشهداء

ব্যাখ্যাঃ (لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ) যারা একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরস্পর ভালোবাসার সেতু বন্ধনে আবদ্ধ হবে, তাদের এ পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভালোবাসার মাঝে কোন স্বার্থসিদ্ধির ফন্দি আসবে না, থাকবে না কোন কু-মতলব, তাহলে এ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জান্নাতে অনুপ্রবেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

(الْمُتَجَالِسِينَ فِيَّ) যারা আল্লাহর দীনকে দুনিয়ায় প্রচার-প্রসার করার জন্য পরস্পর একত্রিত হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং মহান আল্লাহর একত্ববাদ, তার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব ও গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করে পরস্পর দীনী শিক্ষা করে তাদের জন্যও আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

(الْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ) হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর সাক্ষাৎ করল, তাদের জন্য আমার ভালোবাসা ওয়াজিব হয়ে গেছে, অর্থাৎ আমি তাদেরকে আমার জান্নাতে প্রবেশ করাব’’। এখানে সাক্ষাৎ করা অর্থ হলো মুসলিম ভাইয়ের খোঁজ-খবর নেয়া, তাঁর বিপদে-আপদে সাহায্য করা, সর্বদা তার কল্যাণ কামনা করা ইত্যাদি।

(الْمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ) যারা নিজেদের ধন-সম্পদকে পরস্পরের মধ্যে ব্যয় করে, একজন অন্যজনের আর্থিক অসুবিধা সমাধান করে, ঋণ পরিশোধ করে, আর এসব সহযোগিতার পিছনে যদি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য থাকে তবে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে থাকতে দিবেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে।

(الْمُتَحَابُّونَ فِي جَلَالِي) মহান আল্লাহ বলেনঃ আমার বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশ ও আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শনকল্পে যারা পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করে অর্থাৎ আমার দীনের স্বার্থে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে এ সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়।

[সম্পাদক]

(يَغْبِطُهُمُ النَّبِىُّونَ وَالشُّهَدَاء) মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ গিবত্বাহ্ বলা হয়, নি‘আমাতের অধিকারী ব্যক্তির নি‘আমাতের ধ্বংস কামনা না করে নিজেও তদ্রূপ নি‘আমাত লাভের আশা করাকে। এটা হিংসার বিপরীত কারণ হিংসা জন্যের নি‘আমাত চলে যাওয়া কামনা করা হয়।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রতিটি মানুষ তার ‘ইলম ও ‘আমল অনুযায়ী সম্মান ও মর্যাদা লাভ করবে, যার মধ্যে গুণ নেই সে তার মর্যাদা লাভ করবে না। কারও মধ্যে যদি একটা গুণ না থাকে তবে সে অন্যের মধ্যে সেই গুণ থাকার কারণে তার পুরস্কার দেখে ঈর্ষা করবে। সে কামনা করবে যদি তার মধ্যেও এ মর্যাদা থাকত তবে ভালো হত। সেও এ সম্মানের অধিকারী হত। আর এ কারণেই বলা হয়েছে- (يَغْبِطُهُمُ النَّبِىُّونَ وَالشُّهَدَاء) কেননা নবী ও শাহীদগণ সবচেয়ে উঁচু স্তরের মর্যাদাবান, কারণ তারা সৃষ্টিকুলকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন সত্য/হক প্রকাশ করেছেন, দীনকে সমুন্নত করেছেন, সাধারণ ও বিশেষ লোকেদেরকে সঠিক পথের রাস্তা দেখিয়েছেন। এছাড়াও তারা মহাসফলতা লাভ করেছেন। সাধারণ মানুষগুলো নবীদের মতো এরূপ গুরু দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় না ও দায়িত্ব পালনে সক্ষমও হয় না। এ সত্ত্বেও যখন তারা তাদেরকে কিয়ামতের দিনে তাদের স্থানে, তাদের নিকটবর্তী ও মহান আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা লক্ষ্য করবে, তারা বলবে তারাও যদি এদের মতো গুণে গুণান্বিত হত তবে তারা দ্বিগুণ কল্যাণ লাভ করতে পারত। তারা দু‘টি সফলতা লাভ করতে পারত। এও বলা হয়েছে যে, নবী-রসূলগণ ও শাহীদগণ এসব মর্যাদার জন্য খুশি হবেন। মনে হবে যেন তারাও এরূপ মর্যাদা ও মতবার প্রত্যাশা করেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)