পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩১-[২০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করবে, অথচ মিথ্যা হলো প্রকৃতই বাতিল, তার জন্য জান্নাতের এক প্রান্তে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি ঝগড়াঝাটি পরিত্যাগ করবে অথচ ন্যায়ত সে ঝগড়ার হকদার, তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্রকে উত্তম করবে, তার জন্য জান্নাতের উঁচু এলাকায় একটি প্রাসাদ বানানো হবে। (তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান। শারহুস্ সুন্নাহ্য়ও হাসান বলা হয়েছে; কিন্তু মাসাবীহ গ্রন্থকার বলেনঃ হাদীসটি গরীব।)[1]
عَنْ أَنَسٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من تَرَكَ الْكَذِبَ وَهُوَ بَاطِلٌ بُنِيَ لَهُ فِي ربض الْجنَّة وَمن ترك المراء وَهُوَ مُحِقٌّ بُنِيَ لَهُ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ وَمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِي أَعْلَاهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ. وَكَذَا فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي الْمَصَابِيحِ قَالَ غَرِيبٌ
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘সালামাহ্ ইবনু ওয়ারদান’’ নামের বর্ণনাকারী, সে য‘ঈফ। সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১০৫৬।
ব্যাখ্যাঃ মিথ্যা সর্বদাই পরিহারযোগ্য। সুতরাং এটাকে সাধারণভাবে নেয়াই উচিত। তবে ক্ষেত্রবিশেষ তার বৈধতা সার্বজনীন আলোচনার বিষয় নয়। হাদীসের বাণী, (وَهُوَ بَاطِلٌ) বাক্যটি শর্ত এবং জাযার মাঝে জুমলায়ে মু‘তারাযা বা বিছিন্ন বাক্য। এর মূল প্রতিপাদ্য কথা হলো তা (মিথ্যা) বাতিল। অথবা বাক্যটি জুমলায়ে হালিয়া হয়েছে অর্থাৎ হাল বা অবস্থা হলো এই যে, মিথ্যা বাতিল এতে কোন কল্যাণ নেই (মাত্র তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত)। এই হাল কর্তা এবং কর্ম বা فاعل কিংবা مَفْعُولٍ যে কোন বাক্যটি থেকে হতে পারে।
(ربض الْجنَّة) হলো জান্নাতের অভ্যন্তরের পার্শ্বস্থল। মিথ্যা পরিহারকারীর জন্য জান্নাতের পার্শদেশে বিশেষ একটি মহল তৈরি করা হবে। ‘আরবীতে المراء শব্দের অর্থ الجدال, ঝগড়ায় সর্বদা যে ন্যায় কথা বলা সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করে চলে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি বিশেষ প্রাসাদ বা মহল তৈরি করে দেয়া হবে। চরিত্র সুন্দর করার অর্থ হলো মিথ্যা বলা থেকে, ঝগড়া থেকে এবং যাবতীয় খারাপ চারিত্রিক অসৎ গুণাবলী থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সৎকর্ম দ্বারা স্বীয় চরিত্রকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, এর জন্য জান্নাতের উচ্চশৃঙ্গে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। এই উচ্চশৃঙ্গ ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য কিংবা অর্থগত দিক থেকেও হতে পারে। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, চরিত্র মানুষের উপার্জিত তথা নিজ হাতে গড়া বস্তু, যদিও তাতে প্রকৃতি বা স্বভাবজাত প্রভাব রয়েছে। সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা দু‘আ করেছেন, اَللّٰهُمَّ حَسِّنْ خُلُقِي كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দেহ অবয়বকে যেভাবে সুন্দর করেছ অনুরূপভাবে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।’’
সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় এভাবে দু‘আ এসেছে : اَللّٰهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে চরিত্র সুন্দর করার পথ দেখাও, চরিত্র সুন্দর করার পথ তুমি ছাড়া আর কেউই দেখাতে পারে না।’’
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ المراء হলো মানুষের কথা এড়িয়ে চলা, এতে প্রকাশ্যে ত্রুটি থাক বা আভ্যন্তরীণ ত্রুটি থাক, শাব্দিক ত্রুটি থাক বা আত্মিক ত্রুটি থাক অথবা বক্তার ইচ্ছাগত ত্রুটিই থাক না কেন। তুমি যে কথাই শুনবে তা হয় হক হবে আর না হয় নাহক বা বাতিল। যদি হক হয় তাহলে তুমি তার সত্যায়ন কর আর যদি বাতিল হয় আর সেটা যদি দীন সংক্রান্ত না হয় তাহলে তা থেকে তুমি নিরবতা অবলম্বন কর। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৩)