পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫৫৪-[৪১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। আমি যা নিয়ে এসেছি সে সম্পর্কে অবহেলা করছি বলে প্রমাণিত হবে, যদি আমি বিষনাশক অমৃত পান করি বা তা’বীয ঝুলাই অথবা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করি। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا أُبَالِي مَا أَتَيْتُ إِنْ أَنَا شَرِبْتُ تِرْيَاقًا أَوْ تَعَلَّقْتُ تَمِيمَةً أَوْ قُلْتُ الشِّعْرَ مِنْ قِبَلِ نَفْسِي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবদুর রাহমান ইবনু রাফি‘ আত্ তানূখী’’ নামের এক বর্ণনাকারী আছেন, যিনি য‘ঈফ। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/২৭৯ পৃঃ, হাঃ ৪৪৮২; আহমাদ ৭০৮১।
ব্যাখ্যাঃ ‘‘লুম্‘আত’’ কিতাবে এসেছে, হাদীসটির অর্থ হলো যদি আমি এ কাজগুলো করি তবে আমি সে ব্যক্তির মতো হয়ে যাব যে তার কাজ-কর্ম শারী‘আতসম্মত হচ্ছে না অন্য পন্থায় হচ্ছে তা পরোয়া করে না। যে শারী‘আত ও অন্য কোন কিছুর মাঝে পার্থক্য করে না।
(الترياق) যা বিষ প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিষেধক ও মলম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ইবনুল আসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে অপছন্দ করার কারণ হলো এতে সাপের গোশত এবং মদ দেয়া হয়। আর তা হারাম ও অপবিত্র। الترياق এর অনেক প্রকার রয়েছে। অতএব যে ترياق এর মধ্যে এ জাতীয় কিছু দেয়া না হয় তাতে কোন সমস্যা নেই।
এও বলা হয় যে, হাদীসটি মুত্বলাক বা সাধারণভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এর সকল প্রকার থেকে বিরত থাকা উত্তম।
(أَوْ تَعَلَّقْتُ تَمِيمَةً) ‘‘অথবা আমি তা‘বীয ঝুলাই’’। এখানে তা‘বীয تميمة দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জাহিলী যুগের তা‘বীয ও মন্ত্র। যে প্রকারটি আল্লাহর নাম ও তার কালামসমূহ দ্বারা করা হয় তা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
‘‘নিহায়াহ্’’ গ্রন্থকার বলেন, এটা সেসব পুঁথিকে বুঝিয়েছে যা (জাহিলী যুগে) ‘আরবরা তাদের সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিত। আর তারা বিশ্বাস করত যে, এটা তাদেরকে বদনযর থেকে রক্ষা করবে। তবে ইসলাম এটাকে বাতিল ঘোষণা করেছে।
হাদীসে এসেছে, التَّمَائِمُ وَالرُّقٰى مِنَ الشِّرْكِ তা‘বীয ও ঝাড়ফুঁক শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلَا أَتَمَّ اللهُ لَهٗ ‘‘যে ব্যক্তি তা‘বীয ঝুলাল আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না’’। তাদের এ কাজগুলো শির্কী কাজ এজন্যে যে, তারা মনে করতো যে, এগুলোর দ্বারা লিখিত ফায়সালা পরিবর্তন হয়ে যায়। আর তারা এসব বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট আবেদন করতো। অথচ প্রকৃতপক্ষ যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষাকারী হলেন আল্লাহ।
কেননা এর দ্বারা তারা তাদের নির্ধারিত তাকদীরকে দূর করতে চাইতো। যে আল্লাহ কষ্ট দূরকারী তাকে ছাড়া অন্যের নিকটে কষ্ট দূর করার কামনা করত।
‘আল্লামা সিনদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জাহিলী যুগের তা‘বীয تميمة। যেমন- পুঁথিসমূহ, হিংস্র প্রাণীর নখ, তাঁর হাড়। তবে যা কুরআন মাজীদ ও মহান আল্লাহর নাম নিয়ে হবে তা এর -কুমে হবে না। বরং তা জায়িয।
কাযী আবূ বকর ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) শারহুত্ তিরমিযী কিতাবে বলেন, কুরআন ঝুলানো সুন্নতী পদ্ধতি নয় বরং সুন্নাত হলো কেবল না ঝুলিয়ে পাঠ করা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৬৫)
ইবনুল মালিক বলেনঃ অর্থাৎ কবিতা রচনা করা আমার জন্য হারাম, অনুরূপভাবে الترياق পান করা আমার জন্য হারাম, তা‘বীয ঝুলানোও আমার জন্য হারাম। তবে উম্মাতের অধিকার আছে। উম্মাতের জন্য তা‘বীয ও কবিতা রচনা করা হারাম নয় যদি না তাতে কোন মিথ্যা থাকে, কোন মুসলিমকে হেয় করা না হয়, অথবা তাতে কোন পাপের কিছু না থাকে। অনুরূপভাবে الترياق-ও তাতে যদি শারী‘আতে নিষিদ্ধ কিছু না থাকে- যেমন সাপের গোশত, মদ ইত্যাদি তবে তাতেও কোন সমস্যা নেই। মহান আল্লাহই ভালো জানেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)