৩৭৫৯

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিচারকার্য এবং সাক্ষ্যদান

৩৭৫৯-[২] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে কোনো মুসলিমের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করতে চায়, কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভ করবে যে, আল্লাহ তা’আলা তার ওপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত থাকবেন। অতঃপর এ কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেনঃ ’’যারা আল্লাহ তা’আলার সাথে কৃত অঙ্গীকার ও তাঁর নামে করা কসম তুচ্ছমূল্যে (পার্থিব হাসিলের বিনিময়) বিক্রি করে দেয়.....’’- (সূরা আ-লে ’ইমরান ৩ : ৭৭)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَقْضِيَةِ وَالشَّهَادَاتِ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينِ صَبْرٍ وَهُوَ فِيهَا فَاجِرٌ يَقْتَطِعُ بِهَا مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ» فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَصْدِيقَ ذَلِكَ: (إِنَّ الَّذِينَ يشترونَ بعهدِ اللَّهِ وأيمانِهمْ ثمنا قَلِيلا)
إِلَى آخر الْآيَة

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من حلف على يمين صبر وهو فيها فاجر يقتطع بها مال امرى مسلم لقي الله يوم القيامة وهو عليه غضبان» فانزل الله تصديق ذلك: (ان الذين يشترون بعهد الله وايمانهم ثمنا قليلا) الى اخر الاية

ব্যাখ্যা: ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ কর্তৃক এ হাদীসটি বিচারকার্যে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমে অপরের হক ছিনিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারীমূলক। ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসে উল্লেখিত (يَمِينِ صَبْرٍ) (ইয়ামীনি সব্র) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্থির বা দৃঢ়তার সাথে কৃত শপথ। এ শপথকে (مَصْبُورَ) তথা দৃঢ়করণ শপথও বলা হয়, অথবা এখানে শপথকারীকে ধৈর্যধারণকৃত বলা যেতে পারে যেহেতু এটা সে নিজের ওপর আবশ্যক করে নিয়েছে। (يَمِينِ صَبْرٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য আরো পরিষ্কার করে এভাবে বলা যায় যে, আইনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রকর্তৃপক্ষ কোনো ব্যক্তি আইনানুগভাবে সুষ্ঠু বিচারকার্যের স্বার্থে যদি শপথ করতে বলে।

কেউ কেউ বলেছেন, মুসলিমের মাল-সম্পদ হরণের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা শপথের নামে (يَمِينِ صَبْرٍ) হাদীসটি উল্লেখিত فَاجِرٌ (ফাজির) শব্দের অর্থ হলো মিথ্যবাদী। হাদীসে উল্লেখিত মুসলিমের সস্পদ দ্বারা কেউ যিম্মীর সম্পদ উদ্দেশ্য করে তাহলে তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ সাক্ষ্যদানকালে মিথ্যা বলা কঠিনতম পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ধরনের অপরাধী অপরাধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

ক) অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ হরণ।

খ) যে বিষয়টি সংরক্ষণের চরম গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক ছিল তার প্রতি চরম অজ্ঞতা করা আর সেটি ইসলাম সংরক্ষণের দায়িত্ব ও আখিরাতকে গুরুত্ব প্রদান- এটি মানতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

গ) অন্যায় ও মিথ্যা শপথের প্রচলন ঘটালো।

এ ধরনের ব্যক্তির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আল্লাহ তার প্রতি দয়ার দৃষ্টি দিবেন না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।

এ হাদীসের সত্যায়ন পাওয়া যায় মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা আ-লি ‘ইমরান-এর ৭৭ নং আয়াতের মাঝে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্টভাবে বলেছেনঃ ‘‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কেউ কৃত ওয়া‘দাকে সুলভমূল্যে বিক্রয় করে দেবে তাদের আখিরাতে কোনো অংশ নেই আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না কিয়ামতে তাদের দিকে রহমাতের দৃষ্টি দিবেন না তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৫৫০; শারহে মুসলিম ২য় খন্ড, হাঃ ১৩৭; তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩০১২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء)