পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা
৩৭৩৩-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে জনগণের মাঝে কাযী (বিচারক) নিয়োগ দেয়া হলো, মূলত তাকে যেন চাকু ছাড়া যাবাহ করা হলো। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ جُعِلَ قَاضِيًا بَيْنَ النَّاسِ فَقَدْ ذُبِحَ بِغَيْرِ سِكِّينٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (قَاضِيًا بَيْنَ النَّاسِ فَقَدْ ذُبِحَ بِغَيْرِ سِكِّينٍ) অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যাকে মানুষের বিচারক বানানো হলো তাকে যেন ছুরিবিহীন যাবাহ করা হলো।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ এর কয়েকটি দিক হতে পারে।
১) কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ছুরিবিহীন হত্যা। যেমন : শ্বাসরুদ্ধ করে, পানিতে ডুবিয়ে, আগুনে জ্বালিয়ে ও খানা খাদ্য বন্ধের মাধ্যমে হত্যা করা, কেননা এভাবে হত্যা করা ছুরি দ্বারা হত্যার চেয়ে বেশী কষ্টকর।
২) যাবাহ সাধারণত ছুরি দ্বারাই হয় কিন্তু এখানে ছুরি ব্যতীত যাবাহের কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, যাতে করে বুঝা যায় তার শাস্তি আরো বেশী মারাত্মক, যেমন : তার দীন নষ্ট হওয়া। এখানে শারীরিক শাস্তি উদ্দেশ্য নয়।
আল আশরাফ (রহঃ) গ্রন্থকার বলেন, তূরিবিশতী (রহঃ) বলেছেনঃ ছুরি দ্বারা ছুরিবিহীন যাবাহ এ দু’য়ের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য বিরাজমান। কেননা ছুরি দ্বারা যাবাহের কষ্ট ক্ষণিকের আর ছুরি ছাড়া যাবাহের কষ্ট আমরণ, এমনকি পরকালেও এর জন্য অপমানিত হতে হবে।
৩) আল আশরাফ (রহঃ) গ্রন্থকার বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে যে, যাকে মানুষের বিচারপতি বানানো হলো তার ওপর আবশ্যক হয়ে গেল সকল প্রকার খারাপ প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকা এটাই যেন তাকে ছুরিবিহীন যাবাহের মতো। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তৃতীয় নং অর্থে বিচার ফায়সালার কাজ উৎসাহমূলক কাজ হলো অপরদিকে পূর্বে দু’আর্থে বিচার কাজের প্রতি আগ্রহ থাকাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে, কেননা সেখানে রয়েছে অনেক ক্ষতিকর দিক।
আল মুযহির বলেনঃ বিচার ব্যবস্থার দায়িত্ব একটি ভয়ানক দায়িত্ব, এর ভয়াবহতা খুব বেশী এবং তার অনিষ্টতা খুবই মারাত্মক। কেননা খুব কম বিচারপতিই আছেন যারা বাদী-বিবাদীর মাঝে ইনসাফ করতে পারেন। এর কারণ হলো আত্মার সমস্যা যে, সে যাকে ভালোবাসে বিচার তার পক্ষেই দিতে চায় অথবা যার বিপক্ষে রায় যাবে সে খুব প্রতাপশালী হওয়ায় বিচার তার বিপক্ষে না করে থাকেন। আবার মাঝে মধ্যে দেখা যায় ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে বিচার সুষ্ঠু হয় না, এটা এক দুরারোগ্য ব্যাধি।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩২৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৫৬৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)