পরিচ্ছেদঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - শিশুর বালেগ হওয়া ও ছোট বেলায় তাদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে
৩৩৭৬-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন উহুদ যুদ্ধে শামিল হবার উদ্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজেকে পেশ করলাম, তখন আমার বয়স ১৪ বছর। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসম্মতি জানালেন। অতঃপর ১৫ বছর বয়সে খন্দাকের যুদ্ধে নিজেকে পেশ করলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুমতি দিলেন। (এ হাদীস শুনে) পরবর্তীকালে খলীফা ’উমার ইবনু ’আব্দুল ’আযীয (রহঃ) বলেন, এটাই হলো মুজাহিদ ও বালকের মাঝে বয়সের পার্থক্য নির্ণয়কারী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ بُلُوْغِ الصَّغِيْرِ وَحَضَانَتِه فِى الصِّغَرِ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: عُرِضْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ أُحُدٍ وَأَنَا ابْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ سَنَةً فَرَدَّنِي ثُمَّ عُرِضْتُ عَلَيْهِ عَامَ الْخَنْدَقِ وَأَنَا ابْنُ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً فَأَجَازَنِي فَقَالَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ: هَذَا فَرْقُ مَا بَين الْمُقَاتلَة والذرية
ব্যাখ্যা: (عَامَ أُحُدٍ) উহুদ যুদ্ধের বছর। তৃতীয় হিজরী সনের শাও্ওয়াল মাসে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আবার অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে খন্দাক যুদ্ধ পঞ্চম হিজরী সনে সংঘটিত হয়। এই হিসেবে উহুদ যুদ্ধের সময় ইবনু ‘উমার -এর বয়স চৌদ্দ বছর হলে খন্দাক যুদ্ধকালে তার বয়স পনের না হয়ে ষোল হওয়ার কথা। তবে ইমাম বুখারী (রহঃ) হাদীসটিকে এই জোরালো আপত্তির প্রতি ভ্রূক্ষেপ করা ছাড়াই উল্লেখের কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি ঐতিহাসিক মূসা ইবনু ‘উকবার কথার প্রতি ধাবিত ছিলেন। আর মূসা বিন ‘উকবার মতে খন্দাক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরীতে সংঘটিত হয়। চতুর্থ হিজরী সংঘটিত হওয়ার পক্ষে বর্ণিত হাদীসটিকে দলীল বানানো হয়। কেননা উহুদ তৃতীয় হিজরীতে, সে সময় ইবনু ‘উমারের বয়স চৌদ্দ, আবার খন্দাকে তার বয়স পনের হয়েছে বলে তিনি নিজে উল্লেখ করছেন। অতএব খন্দাক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরী হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ঐতিহাসিক ইবনু ইসহকসহ অধিকাংশের মতে খন্দাক যুদ্ধ পঞ্চম হিজরীতেই সংঘটিত হয়েছে। ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে তা প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ইবনু ‘উমারের কথা দিয়ে খন্দাক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরীতে হয়েছে এ কথা বলার সুযোগ নেই। বরং ইবনু ‘উমারের কথারই ব্যাখ্যা করতে হবে।
খন্দাক পঞ্চম হিজরীতে হলে এ সময় ইবনু ‘উমারের বয়স ষোল হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নিজে তার বয়স পনের বলে উল্লেখ করার দরুন যে প্রশ্নের উদ্রেক হয় তার উত্তর ইমাম বায়হাক্বী এবং অন্যান্যরা এই বলে দেন যে, ইবনু ‘উমারের কথা : ‘‘উহুদের যুদ্ধে আমাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পেশ করা হয়, যে সময় আমার বয়স চৌদ্দ’’, তার মানে আমি চৌদ্দ বছরে প্রবেশ করেছি। এরপর তার কথা: ‘‘খন্দাকের যুদ্ধে আমাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে পেশ করা হয়, যে সময় আমার বয়স পনের’’, অর্থাৎ পনের পার করেছি। পনের পার হয়ে ষোল বছরের যে কয় মাস তা তিনি হিসেবে আনেননি। বয়সের বর্ণনার ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবহারের প্রচলন অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এভাবে ইবনু ‘উমার -এর কথা এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতা উভয়টি সঠিক হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৬৪)
هٰذَا فَرْقُ مَا بَيْنَ الْمُقَاتَلَةِ وَالذُّرِّيَّةِ ‘‘এটা হলো যোদ্ধা ও বাচ্চার বয়সের পার্থক্য।’’ এই বাক্যের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা যখন পনের বছর বয়সে উপনীত হবে তখন সে যোদ্ধার তালিকায় প্রবেশ করবে এবং যোদ্ধাদের রেজিস্ট্রিতে তার নাম যুক্ত করা হবে। আর বয়স পনের উপনীত না হলে সে বাচ্চাদের তালিকায় থাকবে। তাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হবে না।
এ হাদীস থেকে ‘উলামায়ে কিরাম আরেকটি মাসআলাহ্ বের করেন। মাসআলাটি হলো, নাবালক বা অপ্রাপ্ত বাচ্চার মাঝে বালেগ বা সাবালক হওয়ার অন্যান্য নিদর্শন যেমন স্বপ্নদোষ হওয়া বা নাভীর নিচের লোম প্রকাশ না পাওয়া গেলে পনের বছর বয়সকেই তার সময়সীমা ধরা হবে এবং এই বয়স থেকেই সে সাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক গণ্য হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)