৩৩৩৫

পরিচ্ছেদঃ ১৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩৩৫-[১২] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহ্ওয়াস (রহঃ) যখন শামে (সিরিয়ায়) মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর (’ইদ্দত পালনকালে) তৃতীয় ঋতুস্রাব শুরু হয়। এতদসম্পর্কে মাস্আলাহ্ জানার জন্য মু’আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান যায়দ ইবনু সাবিত আল আনসারী -এর নিকট পত্র লেখেন। যায়দ ইবনু সাবিত মু’আবিয়াকে পত্রযোগে জানালেন যে, (তালাকপ্রাপ্তা) স্ত্রীর যখন তৃতীয় ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে, তখনই সে স্বামী হতে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়ে গেল এবং স্বামীও তার হতে উত্তরাধিকার পাবে না, সেও স্বামীর উত্তরাধিকার হবে না। (মালিক)[1]

عَن سُليمانَ بنِ يَسارٍ: أَنَّ الْأَحْوَصَ هَلَكَ بِالشَّامِ حِينَ دَخَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي الدَّمِ مِنَ الْحَيْضَةِ الثَّالِثَةِ وَقَدْ كَانَ طَلَّقَهَا فَكَتَبَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ إِلَى زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ يَسْأَلُهُ عَنْ ذَلِكَ فَكَتَبَ إِلَيْهِ زِيدٌ: إِنَّهَا إِذَا دَخَلَتْ فِي الدَّمِ مِنَ الْحَيْضَةِ الثَّالِثَةِ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ وَبَرِئَ مِنْهَا لَا يرِثُها وَلَا ترِثُه. رَوَاهُ مَالك

عن سليمان بن يسار: ان الاحوص هلك بالشام حين دخلت امراته في الدم من الحيضة الثالثة وقد كان طلقها فكتب معاوية بن ابي سفيان الى زيد بن ثابت يساله عن ذلك فكتب اليه زيد: انها اذا دخلت في الدم من الحيضة الثالثة فقد برىت منه وبرى منها لا يرثها ولا ترثه. رواه مالك

ব্যাখ্যা: (هَلَكَ بِالشَّامِ حِينَ دَخَلَتِ امْرَأَتُه فِى الدَّمِ مِنَ الْحَيْضَةِ الثَّالِثَةِ وَقَدْ كَانَ طَلَّقَهَا) অর্থাৎ আহওয়াস তার স্ত্রীকে মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে তালাক দেন এবং স্ত্রী সেই ত্বলাকে ‘ইদ্দত পালনের সময় তৃতীয় হায়িযে পৌঁছলে আহওয়াস মারা যান।

(يَسْأَلُه عَنْ ذٰلِكَ) ঐ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে। অর্থাৎ এমতাবস্থায় আহওয়াস-এর স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে স্বামীর সম্পদের নির্ধারিত অংশ পাবে কিনা- এই মাসআলাহ্ সম্পর্কে জানতে যায়্দ বিন সাবিত -এর কাছে চিঠি দেন।

(إِنَّهَا إِذَا دَخَلَتْ فِى الدَّمِ مِنَ الْحَيْضَةِ الثَّالِثَةِ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ وَبَرِئَ مِنْهَا لَا يرِثُها وَلَا ترِثُه) অর্থাৎ সে যখন তৃতীয় হায়িযে প্রবেশ করেছে তখন তার ‘ইদ্দত শেষ হয়ে তারা একে অপরের কাছ থেকে পরিপূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তাই এমতাবস্থায় স্বামী বা স্ত্রী কেউ কারো ওয়ারিস হবে না।

এই হাদীস থেকে হায়িয হয় এমন নারীর ‘ইদ্দত হায়িয দ্বারা পালিত হবে নাকি পবিত্রতা দ্বারা পালিত হবে, এই মাসআলাটি বের হয়। হায়িয হয় এমন নারীর ‘ইদ্দাতের ক্ষেত্রে কুরআনে তিন ‘কুরূ’ অপেক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন- আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়িয (কুরূ) পর্যন্ত।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৮)

‘কুরূ’ শব্দটি হায়িয এবং পবিত্রতা উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ থেকে ইমামদের মাঝে ঋতুবতী নারীর ‘ইদ্দত পালন হায়িয দ্বারা হবে নাকি পবিত্রতা দ্বারা হবে- এ নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) পবিত্রতা দ্বারা হবে। অর্থাৎ একজন নারী তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পর তিনটি পবিত্রতা অতিক্রম করলে ‘ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। অপরদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে তিন হায়িয অতিক্রম হলে ‘ইদ্দত শেষ হবে।

বর্ণিত হাদীসে তৃতীয় হায়িয প্রবেশের সাথে সাথে ‘ইদ্দত শেষ হয়ে বিবাহ সংক্রান্ত সবকিছু পূর্ণ বিচ্ছেদের হুকুম দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনবার পবিত্রতা অতিক্রম করাকে ‘ইদ্দত ধরা হয়েছে। তাই হাদীসটি ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর পক্ষে দলীল। ‘ইদ্দত তিন হায়িয হলে বর্ণিত হায়িয শেষ হওয়ার পর বিবাহ বিচ্ছেদের কথা। তবে হাদীসটি মাওকূফ এবং একজন সাহাবীর ফতোয়া। বিভিন্ন সাহাবী থেকে এর বিপরীত ফতোয়া পাওয়া যায়। তাই আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতের বিরুদ্ধে হাদীসটি অকাট্য দলীলরূপে গ্রহণযোগ্য নয় বলে হানাফী ‘আলিমগণ মনে করেন।

মাসআলাহ্: বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকাবস্থায় স্বামী বা স্ত্রীর কোনো একজন মারা গেলে অপরজন যেমন ওয়ারিস সূত্রে প্রাপ্ত নির্ধারিত অংশের মালিক হোন তেমনিভাবে তালাকপ্রাপ্তা নারী ‘ইদ্দত পালনকালে স্বামী বা স্ত্রীর কোনো একজন মারা গেলে অপরজন ওয়ারিস সূত্রে সম্পদের নির্ধারিত অংশের মালিক হোন। কিন্তু ‘ইদ্দত পার করার পর তাদের কারো মৃত্যু হলে কেউ কারো ওয়ারিস হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)