৩৩২৯

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘ইদ্দত

৩৩২৯-[৬] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক মহিলা এসে বলল যে, আমার মেয়ের স্বামী মারা গেছে। এমতাবস্থায় তার চোখে অসুখ হয়েছে, (’ইদ্দতকালে) আমি কী তার চোখে সুরমা ব্যবহার করাতে পারব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। এতে স্ত্রীলোকটি দু’ বা তিনবার অনুমতি চাইল। প্রতিবারেই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। অতঃপর বললেন- দেখ! মাত্র ৪ মাস ১০ দিন, অথচ জাহিলিয়্যাত (অন্ধকার) যুগে তোমাদের এক একজন নারীকে ’ইদ্দতকাল এক বছর পূর্ণ হলে উটের গোবর ফেলতে হতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْعِدَّةِ

وَعَن أُمِّ سلمةَ قَالَتْ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنَتِي تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا وَقَدِ اشْتَكَتْ عَيْنُهَا أَفَنَكْحُلُهَا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا» مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا كُلُّ ذَلِكَ يَقُولُ: «لَا» قَالَ: «إِنَّمَا هِيَ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ وعشرٌ وَقد كَانَت إِحْدَاهُنَّ فِي الجاهليَّةِ تَرْمِي بِالْبَعْرَةِ عَلَى رَأْسِ الْحَوْلِ»

وعن ام سلمة قالت: جاءت امراة الى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت: يا رسول الله ان ابنتي توفي عنها زوجها وقد اشتكت عينها افنكحلها؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا» مرتين او ثلاثا كل ذلك يقول: «لا» قال: «انما هي اربعة اشهر وعشر وقد كانت احداهن في الجاهلية ترمي بالبعرة على راس الحول»

ব্যাখ্যা: ‘ইদ্দত পালনকালীন সময়ে মহিলার জন্য কোনো ধরনের সাজ-সজ্জা জায়িয নয়। সাজ-সজ্জার মাঝে চোখে সুরমা লাগানো অন্তর্ভুক্ত। তাই বিনা প্রয়োজনে সুরমা লাগানোও অবৈধ এতে কোনো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রয়োজনে সুরমা লাগাতে পারবে কিনা- এ নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। বর্ণিত হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, ‘ইদ্দতকালীন সময়ে সুরমার ব্যবহার প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে হোক কোনো ক্ষেত্রেই জায়িয নয়। তবে আরেকটি হাদীস যেখানে আবূ সালামাহ্-এর ওপর উম্মু সালামার শোক পালনকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চোখে সাবির (চোখে লাগানোর ওষুধ বিশেষ) দেখে বলেন, এটা কি? তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা সাবির ছাড়া কিছু নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «اجْعَلِيهِ بِاللَّيْلِ وَامْسَحِيهِ بِالنَّهَارِ» ‘‘এটাকে রাতে দাও এবং দিনে মুছে ফেল।’’ (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনানি ওয়াল আসার, কিতাবুল লি‘আন, ইহদাদ অনুচ্ছেদ, হাঃ ১৫৩৪২)

দুই হাদীসের সমন্বয় হলো, প্রয়োজনে রাতে সুরমা বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার জায়িয। কিন্তু দিনে তা কোনো অবস্থায়ই জায়িয নয়। রাতে ব্যবহার করলেও দিনে মুছে ফেলবে।

তবে মূলত নিষেধের হাদীসগুলো অপ্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু বর্ণিত হাদীসে চোখের অভিযোগের পরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরমা ব্যবহারের নিষেধ করার কারণে বুঝা যায় যে, নিষেধের হাদীস কেবল অপ্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং প্রয়োজন অপ্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে সুরমা ব্যবহার নিষেধ থাকবে। তবে ‘ইদ্দত পালনকালে মূল নিষেধ হলো সাজ-সজ্জা। তাই সাজ-সজ্জা ছাড়া প্রয়োজনে ঔষধরূপে ব্যবহারের নিষেধকে ‘উলামায়ে কিরাম মাকরূহ তানযিহী হিসেবে ধরে নেন। অর্থাৎ সাজের কারণে ব্যবহার আর প্রয়োজনে ব্যবহার এক নয়। আবার কোনো কোনো ‘আলিম বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহার জায়িয। তাদের মতে এখানে রসূলের নিষেধের কারণ হয়তবা তার অভিযোগটি সাধারণ ছিল, সুরমা ব্যবহার না করলে কোনো অসুবিধা ছিল না। তাই অভিযোগের পরও রসূল নিষেধ করেন।

(إِنَّمَا هِىَ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ وَعَشْرٌ) এটাতো কেবল চার মাস দশ দিনই। রাসুল  -এর এ কথার উদ্দেশ্য হলো, ‘ইদ্দত পালন করতে একটু ত্যাগ স্বীকার করা তেমন কিছু নয়। এ কথা বলার পর জাহিলিয়্যাতের যুগে তাদের ‘ইদ্দত পালনের কষ্টের বিবরণ দেন। মূর্খতার যুগে দীর্ঘ এক বছর অনেক কষ্ট করে যে ‘ইদ্দত পালন করা হত ইসলাম সে ধরনের কঠিন কোনো হুকুম দেয়নি। জাহিলী যুগের ‘ইদ্দত পালনের তুলনায় ইসলামের ‘ইদ্দত পালন একেবারেই সহজ। তাই এই সহজ হুকুমটি পালন করতে তোমাদের একটু ত্যাগ করতে হবে।

হাদীস থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, জাহিলী যুগের এক বছরের ‘ইদ্দত পালনের প্রথা কুরআনের আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।

(تَرْمِىْ بِالْبَعْرَةِ عَلٰى رَأْسِ الْحَوْلِ) ‘‘বছরের মাথায় গোবর নিক্ষেপ করত’’। হাদীসের এ অংশে জাহিলী যুগের অনর্থক নিজেকে কষ্ট দেয়ার কুসংস্কারের বিবরণ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক বছর ‘ইদ্দত পালন করার পর ‘ইদ্দত শেষে তারা ঘর থেকে বের হয়ে গোবর নিক্ষেপ করে ‘ইদ্দাতের সমাপ্তি ঘটাত। কোনো কোনো ‘আলিম বলেন, গোবর নিক্ষেপ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘ইদ্দত শেষ করা। অর্থাৎ এক বছর অযথা নোংরা কষ্টের পর ‘ইদ্দত থেকে বের হয়ে পৃথক হত যেমন গোবর শরীর থেকে বের হয়ে পৃথক হয়। কেউ কেউ বলেন, এখানে ইঙ্গিত হলো, জাহিলী যুগে ‘ইদ্দত পালনকালে নারী যে কাজ করেছে, এক বছর ‘ইদ্দত পালনের যে ধৈর্য ধরেছে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাপড় পরিধান করেছে এবং একেবারে ছোট ঘর আঁকড়ে থেকেছে, স্বামীর অধিকার হিসেবে এমন ‘ইদ্দত পালন করা অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয় যেমন কেউ গোবর নিক্ষেপ করল।
(শারহে মুসলিম ৯ম খন্ড, হাঃ ১৪৮৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)