৩২১১

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - ওয়ালীমাহ্ (বৌভাত)

৩২১১-[২] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)-এর বিয়েতে যত বড় আয়োজনে ওয়ালীমাহ্ করেন, আর অন্য কোনো স্ত্রীর বিয়েতে তা করেননি। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক বকরী দ্বারা ওয়ালীমাহ্ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْوَلِيْمَةِ

وَعَنْهُ قَالَ: مَا أَوْلَمَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَائِهِ مَا أولم على زَيْنَب أولم بِشَاة

وعنه قال: ما اولم رسول الله صلى الله عليه وسلم على احد من نساىه ما اولم على زينب اولم بشاة

ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মকথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী যায়নাব-এর সাথে বিবাহোত্তর ওয়ালীমাহ্ যত বেশী সুন্দর এবং পরিসরে করেছিলেন এমনটি অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করেননি। তিনি বকরী যবেহ করে তার ওয়ালীমাহ্ করেছিলেন।

মাওয়াহিব নামক গ্রন্থে আছে, উম্মুল মু’মিনীন যায়নাব বিনতু জাহ্শ (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফুপী আমীমাহ্ বিনতু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর কন্যা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার পালক পুত্র যায়দ ইবনু হারিসাহ্-এর সাথে বিবাহ দিয়ে দেন। দীর্ঘদিন অবস্থানের পর যায়দ ইবনু হারিসাহ্ তাকে তালাক প্রদান করেন। অতঃপর যখন তার ‘ইদ্দত শেষ হয় তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাকে বলেন, তুমি যায়নাব-এর কাছে গিয়ে আমার কথা উল্লেখ কর, অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পেশ কর। যায়দ ইবনু হারিসাহ্ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ পালনে যায়নাব (রাঃ)-এর বাড়ী গেলাম এবং দরজার দিকে পিঠ ফিরিয়ে কললাম, হে যায়নাব! আল্লাহর রসূল তোমাকে স্মরণ করিয়ে অর্থাৎ বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে যায়নাব বললেন, আমি কোনো কাজই করতে যাই না যতক্ষণ না আমার রবের নির্দেশ জারী হয়। অতঃপর যায়নাব তার একটি মসজিদ ছিল সেদিকে রওনা হলেন, এরপর এ আয়াত নাযিল হলো:

فَلَمَّا قَضٰى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর যায়দ যখন যায়নাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৩৭)

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা যায়নাব-এর বাড়ী চলে আসলেন এবং অনুমতি ছাড়াই তার ঘরে প্রবেশ করলেন। (সহীহ মুসলিম)

এ ঘটনার পর মুনাফিকরা বলতে লাগল মুহাম্মাদ পুত্রবধূকে হারাম বলে অর্থাৎ ছেলের বউকে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষণা করে থাকে অথচ নিজেই পুত্রবধূকে বিয়ে করে বসেছে। তখনই এ আয়াত নাযিল হলো:

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ

অর্থাৎ ‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যেকার কোনো পুরুষের পিতা নয়।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৪০)

যায়নাব (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য স্ত্রীদের ওপর গর্ব করে বলতেন : তোমাদের পিতাগণ ‘‘তোমাদের অভিভাবক হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তোমাদেরকে’’ বিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজে সপ্তম আসমানের উপর আমাকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) বিয়ে দিয়েছেন। (তিরমিযী)

যায়নাব-এর আসল নাম ছিল বারীরাহ্ , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখলেন যায়নাব।

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যায়নাবকে বিয়ে করলেন তখন ওয়ালীমার জন্য কওমের লোকজনকে দা‘ওয়াত করলেন। লোকজন খানা খাওয়া শেষ হলে বসে বসে গল্প শুরু করল, এটা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ভীষণ কষ্টের, কারণ তিনি তাদের উঠে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত করলেন কিন্তু তারা উঠলেন না। অনেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বিব্রত ও অস্বস্তি অবস্থা দেখে একে একে উঠে চলে গেলেন কিন্তু তিনজন লোক অবশিষ্ট বসেই রইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য এসে দেখেন লোকজন বসেই আছেন। এরপর তারা যখন চলে গেলেন তখন আমি (আনাস) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর জানালাম যে, তারা চলে গেছেন।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমি ঘরে ঢোকার জন্য গেলাম কিন্তু তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, তখনই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন:

يٰاَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ

অর্থাৎ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবীর ঘরে প্রবেশ করো না।’’ (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৫৩)

বিস্তারিত ঘটনা তাফসীরে ইবনু কাসীর ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ দেখুন। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫১৬৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)