৩০৫২

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ফারায়িয (মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধীয়) ও অন্তিম উপদেশ বা আদেশ)

৩০৫২-[১২] মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি প্রত্যেক মু’মিনের জন্যই তার নিজের চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং যে ঋণ অথবা পোষ্য (সন্তান-সন্ততি) রেখে যাবে তা আমার যিম্মাদারিত্ব হবে; আর যে ধন-সম্পদ রেখে যাবে তা তার ওয়ারিসদের হবে। আমিই অভিভাবক যার অভিভাবক নেই, আমি তার ধন-সম্পদের ওয়ারিস হবো এবং তার বন্দীত্ব মুক্ত করব। (অনুরূপভাবে) মামা তার ওয়ারিস হবে যার কোনো ওয়ারিস নেই, সে তার ধন-সম্পদের ওয়ারিস হবে এবং তার বন্দীত্ব মুক্ত করবে।

অপর বর্ণনায় আছে, আমি তার ওয়ারিস হব যার ওয়ারিস নেই, আমি তার রক্তপণ দেব এবং তার ওয়ারিস হব। মামা তার ওয়ারিস হবে যার ওয়ারিস নেই, সে তার রক্তপণ দেবে ও তার ওয়ারিস হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن الْمِقْدَام قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ فَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيْعَةً فَإِلَيْنَا وَمَنْ تَرَكَ مَالًا فَلِوَرَثَتِهِ وَأَنَا مَوْلَى مَنْ لَا مَوْلَى لَهُ أَرِثُ مَالَهُ وَأَفُكُّ عَانَهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ يَرِثُ مَالَهُ وَيَفُكُّ عَانَهُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «وَأَنَا وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ أَعْقِلُ عَنْهُ وَأَرِثُهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لَا وَارِثَ لَهُ يَعْقِلُ عَنْهُ ويرثه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن المقدام قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انا اولى بكل مومن من نفسه فمن ترك دينا او ضيعة فالينا ومن ترك مالا فلورثته وانا مولى من لا مولى له ارث ماله وافك عانه والخال وارث من لا وارث له يرث ماله ويفك عانه» . وفي رواية: «وانا وارث من لا وارث له اعقل عنه وارثه والخال وارث من لا وارث له يعقل عنه ويرثه» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি মু’মিনদের প্রতি জাগতিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে তাদের নিজেদের থেকে অধিকতর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তাদের প্রতি আমার স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা সকল কিছুর থেকেও অধিকতর।

সুতরাং তাদের কেউ যদি কোনো ঋণ রেখে মারা যায় বা তার পরিবার-পরিজন রেখে মারা যায়, আর ঐ মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করার মতো কেউ না থাকে বা তার কোনো সম্পদ না থাকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে দেখাশুনা ও তাদের ভরণ-পোষণের খরচ বহনের কিছুই না থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে ও পরিবারের ভরণ পোষণে আমি নিজেই যিম্মাদার।

আর যে ব্যক্তি কোনো সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করে তাহলে ঐ সম্পদ মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ঋণ পরিশোধ ও ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করার পর অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করবে।

আর কোনো মৃত ব্যক্তির যদি ওয়ারিস না থাকে, তাহলে আমি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পদের ওয়ারিস। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পদে ওয়ারিস হবেন যার কোনো ওয়ারিস নেই’’- এ কথার মর্মার্থ হলো ঐ ব্যক্তির সম্পদকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তথা বায়তুল মালে স্থানান্তরিত করা হবে এবং এটা আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য।

অতঃপর যদি হত্যার মতো অপরাধের কারণে মৃত ব্যক্তির ওপরে কাফফারা ওয়াজিব হয়, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে কাফফারা আদায় করে উক্ত মৃত ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করে দেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় এমতাবস্থায় মামা ব্যতীত অন্য কোনো ওয়ারিস না থাকে, তাহলে মামা তার বোনের ছেলের সম্পদে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়ার কারণে ওয়ারিস হবে এবং মৃত ব্যক্তির ওপর যদি হত্যার কাফফারা ওয়াজিব হয় তাহলে সে মৃতের সম্পদ থেকে কাফফারা আদায় করে তাকে মুক্ত করবে।

জ্ঞাতব্য যে, যাবিল আরহাম তথা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হলো মৃত ব্যক্তির এমন ওয়ারিস যারা যাবিল ফুরুজ বা নির্ধারিত অংশপ্রাপ্ত ওয়ারিস নয় এবং আসাবাও নয়। সুতরাং যাবিল আরহাম কি মৃত ব্যক্তির সম্পদে ওয়ারিস হবেন- এ নিয়ে সাহাবী এবং তাবি‘ঈদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ‘উমার, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, মু‘আয ইবনু জাবালসহ অধিকাংশ সাহাবী ও ‘আলকামাহ্, নাখ‘ঈ, ইবনু সীরীন, ‘আত্বা, মুজাহিদসহ একদল তাবি‘ঈ এবং ইমাম আবূ হানীফাহ্, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদসহ একদল ফাকীহ মনে করেন যে, ‘‘যাবিল আরহাম’’ উত্তরাধিকার সূত্রে ওয়ারিস হবে এবং ইমাম মালিক, শাফি‘ঈসহ অন্যান্য বলেন যে, যাবিল আরহাম ওয়ারিস হবে না। মৃত ব্যক্তির যদি কোনো উত্তরাধিকারী ব্যক্তিবর্গ না থাকে তাহলে তার সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। তারপরও যাবিল আরহাম-কে পরিত্যক্ত সম্পদ দেয়া হবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৯৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع)