পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে
৩০২৩-[৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে দান করা হয় তার যদি সামর্থ্য থাকে সে যেন তার প্রতিদান (বিনিময়) দেয়; আর যে অসমর্থ সে যেন তার (দানকারীর) প্রশংসা করে। কারণ যে তার প্রশংসা করেছে সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে, আর যে তা লুকিয়েছে সে অকৃতজ্ঞ হয়েছে। আর যে দান না পেয়েও পেয়েছে বলে (ঘোষণা করেছে), সে মিথ্যার দু’টি কাপড় পরিধানকারীর ন্যায় হয়েছে (দ্বিগুণ মিথ্যুক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে)। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أُعْطِيَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيُجْزِ بِهِ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ فَإِنَّ مَنْ أَثْنَى فَقَدْ شَكَرَ وَمَنْ كَتَمَ فَقَدْ كَفَرَ وَمَنْ تَحَلَّى بِمَا لَمْ يُعْطَ كَانَ كَلَابِسِ ثوبي زور» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তিকে কোনো কিছু দান করা হবে, অতঃপর সে ব্যক্তি সম্পদগত সামর্থ্য রাখলে সে যেন দানের মাধ্যমে দাতা ব্যক্তিকে বিনিময় প্রদান দেয়। আর সামর্থ্য না রাখলে সে যেন তার গুণকীর্তন করে। এক বর্ণনাতে আছে, সে যেন তার জন্য দু‘আ করে, কেননা যে ব্যক্তি গুণকীর্তন করল, সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, সামষ্টিকভাবে তার বিনিময় প্রদান করল। আর যে ব্যক্তি দানের মাধ্যমে সমতা রক্ষা না করে অথবা গুণকীর্তনের মাধ্যমে বদলা না দিয়ে অনুগ্রহকে গোপন করবে সে অনুগ্রহকে অস্বীকার করল, তার অধিকার আদায় করা হতে বিরত থাকলো। আর ব্যক্তিকে যা দেয়া হয়নি তথাপিও তা তাকে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে যে নিজেকে সজ্জিত করবে সে ঐ ব্যক্তির মতো যে দু’জন মিথ্যুক হিসেবে মিথ্যা বলেছে অথবা দু’জন মিথ্যুক হিসেবে দু’টি বস্তু প্রকাশ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি ঐ মহিলাকে বলেছিলেন, যে বলেছিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার একটি সতীন আছে। এমতাবস্থায় আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি তা আমাকে দিয়েছেন বলে আমার পরিতৃপ্তি লাভ করাতে আমার কি কোনো অপরাধ হবে?
খত্ত্বাবী বলেনঃ ‘আরব দেশে এক লোক ছিল, সে পরিচিত লোকেদের দু’টি করে কাপড় দান করত, উদ্দেশ্য হলো- যাতে মানুষ তার সম্পর্কে ধারণা করে যে, সে একজন প্রসিদ্ধ সম্মানিত লোক। কেননা পরিচিতরা মিথ্যা বলে না, অতঃপর মানুষ যখন তাকে এ অবস্থায় দেখবে তখন তারা তার কথার উপর তার মিথ্যা সাক্ষ্যর উপর নির্ভর করবে। এটা মূলত তার নিজকে সত্যবাদীদের সাথে সাদৃশ্য দেয়ার কারণে। ব্যক্তির কাপড়দ্বয় ছিল তার মিথ্যার কারণ, ফলে কাপড়দ্বয়কে মিথ্যার কাপড়দ্বয় বলে নামকরণ করা হয়। অথবা কাপড়দ্বয় মিথ্যার কারণ না, একে চাদর এবং লুঙ্গির বিবেচনায় দ্বিবচন করা হয়েছে, অতঃপর এ মহিলাকে ঐ পুরুষের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। যামাখশারী ফায়িক গ্রন্থে বলেন, কৃত্রিমতা প্রকাশকারীকে মিথ্যার দু’ কাপড় পরিধানকারী তথা যে কোনো মিথ্যাবাদীর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। আর সে হলো ঐ ব্যক্তি যে লোক দেখানোর জন্য সৎ লোকেদের কাপড় পরিধান করে। ব্যক্তির দিকে দু’টি কাপড় সম্বন্ধ করেছেন। কেননা দু’টি কাপড় দু’টি পোষাকের মতো। দ্বিবচন দ্বারা উদ্দেশ্য করেছে যে, কৃত্রিমতা প্রকাশকারী ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি মিথ্যার দু’টি কাপড় পরিধান করেছে দু’টির একটিকে পরিধান করেছে এবং অপরটি লুঙ্গি স্বরূপ ব্যবহার করেছে। মিরকাতুল মাফাতীহে ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ সুতরাং সে সম্মানকে পরিধান করেছে এবং লুঙ্গি স্বরূপ ব্যবহার করেছে। সুতরাং লুঙ্গি এবং চাদর দ্বারা ঐদিকে ইঙ্গিত যে, তার মাথা হতে তার পায়ের পাতা পর্যন্ত মিথ্যা দ্বারা আচ্ছাদিত।
দ্বিবচন দ্বারা ঐ দিকে ইঙ্গিত হওয়ারও সম্ভাবনা রাখছে যে, কৃত্রিমতার মাধ্যমে তার দু’টি নিন্দনীয় অবস্থা অর্জন হয়েছে। একটি হলো যার মাধ্যমে কৃত্রিমতা প্রকাশ করেছে তার অনুপস্থিতি, অপরটি হলো- মিথ্যা প্রকাশ। এভাবে ফাত্হে আছে, আবূ ‘উবায়দাহ্ বলেনঃ সে ঐ ব্যক্তি যে ভনিতাকারী, দুনিয়া বিমুখতার কাপড় পড়ে এবং সে মনে করে যে, সে দুনিয়াবিমুখী। একমতে বলা হয়েছে- তাকে দু’টি কাপড়ের সাথে সাদৃশ্য কেবল এজন্য দেয়া হয়েছে যে, সে কৃত্রিমতা প্রকাশকারী দু’টি মিথ্যা বলেছে। অতঃপর সে তার নিজেকে এমন গুণে গুণান্বিত করেছে যা তার মাঝে নেই। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৪)