২৯৯৩

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনাবাদী জমিন আবাদ করা ও সেচের পালা

২৯৯৩-[৩] ’উরওয়াহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাররাহ্ হতে প্রবাহিত নালার পানি বণ্টন সম্পর্কে (আমার পিতার) যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে এক আনসারীর বিবাদ হলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুবায়র! তুমি তোমার জমিনে পানি দাও, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমিনের দিকে ছেড়ে দাও। আনসারী বলে উঠলো- আপনার ফুফাতো ভাই, এজন্য কি? এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে গেল। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে যুবায়র! তুমি তোমার জমিনে পানি দাও, অতঃপর তা আটকে রাখো যাতে পানি আইল পর্যন্ত পৌঁছে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমিনের দিকে ছেড়ে দাও। এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশে যুবায়রকে তার পূর্ণ হক দিয়ে দিলেন, যখন আনসারী তাঁকে রাগান্বিত করলো। আর প্রথমে উভয়ের সুবিধার জন্য তাদেরকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِحْيَاءِ الْمَوَاتِ وَالشِّرِبِ

وَعَنْ عُرْوَةَ قَالَ: خَاصَمَ الزُّبَيْرُ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فِي شِرَاجٍ مِنَ الْحَرَّةِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْقِ يَا زُبَيْرُ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلَى جَارِكَ» . فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّ: أَنْ كَانَ ابْنَ عَمَّتِكَ؟ فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ قَالَ: «اسْقِ يَا زُبَيْرُ ثُمَّ احْبِسِ الْمَاءَ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى الْجَدْرِ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلَى جَارِكَ» فَاسْتَوْعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلزُّبَيْرِ حَقَّهُ فِي صَرِيحِ الْحُكْمِ حِينَ أحفظه الْأنْصَارِيّ وَكَانَ أَشَارَ عَلَيْهِمَا بِأَمْرٍ لَهُمَا فِيهِ سَعَةٌ

وعن عروة قال: خاصم الزبير رجلا من الانصار في شراج من الحرة فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «اسق يا زبير ثم ارسل الماء الى جارك» . فقال الانصاري: ان كان ابن عمتك؟ فتلون وجهه ثم قال: «اسق يا زبير ثم احبس الماء حتى يرجع الى الجدر ثم ارسل الماء الى جارك» فاستوعى النبي صلى الله عليه وسلم للزبير حقه في صريح الحكم حين احفظه الانصاري وكان اشار عليهما بامر لهما فيه سعة

ব্যাখ্যা: ((شِرَاجٍ الْحَرَّةِ অর্থাৎ- পানি প্রবাহের স্থান। حَرَّة (হাররাহ্) বলা হয় ঐ সমতল জায়গাকে যেখানে কালো পাথর আছে।

(تَلَوَّنَ وَجْهُه) অর্থাৎ- নবূওয়াতের মর্যাদা নষ্ট করা এবং এ ব্যক্তির মন্দ কথার কারণে ক্রোধে তার চেহারা বিবর্ণ আকার ধারণ করল।

(يَرْجِعَ إِلَى الْجَدْرِ) এখানে (الْجَدْرِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দেয়ালের গোড়া। একমতে বলা হয়েছে, বৃক্ষের গোড়া, প্রথম উক্তিটি বিশুদ্ধ। বিদ্বানগণ এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, সম্পূর্ণ ভূমিতে পানি এ পরিমাণ উঁচু হওয়া যে, মানুষের পায়ের টাখনু ভিজে যায়, পানির নিকটবর্তী প্রথম ভূমির মালিকের অধিকার রয়েছে, জমিনে এ সীমা পর্যন্ত পানি আটকিয়ে রাখা। অতঃপর তার ঐ প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দেয়া যে তার পরে আছে। আর যুবায়র ছিল প্রথম মালিক। তাই আল্লাহর রসূল তাকে তার ভালোবাসার দৃঢ়তা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, (اسْقِ ثُمَّ أَرْسِلِ الْمَاءَ إِلٰى جَارِكَ) অর্থাৎ- তুমি তোমার অধিকার অপেক্ষা কমে তোমার জমিকে অল্প কিছু সিক্ত কর, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে তা ছেড়ে দাও। এটা যুবায়র-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ স্বরূপ। তাঁর ঐ জ্ঞান থাকার কারণে যে, তিনি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তার প্রতিবেশীর প্রতি দয়াকে প্রাধান্য দিবেন। অতঃপর প্রতিবেশী যা বলার তা যখন বলল তখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়রকে তার পূর্ণ অধিকার গ্রহণ করতে নির্দেশ দিলেন।

বিদ্বানগণ বলেন, যে ধরনের কথা আনসারী বলল সে ধরনের কথা যদি বর্তমানে নিজ প্রবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কোনো মানুষ হতে প্রকাশ পায়, তাহলে এ ধরনের উক্তি কুফরীতে পরিণত হবে। তার ওপর মুরতাদের হুকুমসমূহ প্রয়োগ হবে। তখন শর্তসাপেক্ষে তাকে হত্যা করা আবশ্যক হবে। তাঁরা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কেবল এজন্য ছেড়ে দিয়েছেন যে, তিনি ইসলামের সূচনাতে মানুষের সাথে মিলে থাকতেন, সর্বোত্তম পন্থায় তাদের উক্তি প্রতিহত করতেন, মুনাফিক এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে তাদের পক্ষ হতে কষ্টদানে ধৈর্য ধারণ করতেন এবং বলতেন, ‘‘সহজতা আরোপ কর কাঠিন্যতা আরোপ করো না, শুভ সংবাদ দাও, মানুষকে সংস্পর্শ হতে দূরে ঠেলে দিও না।’’ আরও বলতেন, ‘‘মানুষ যেন এ আলোচনায় লিপ্ত না হয় যে, মুহাম্মাদ তাঁর সাথীবর্গকে হত্যা করে।’’

মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আপনি সদা তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখবেন তবে তাদের কিছু সংখ্যক ছাড়া, সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৩)। কাযী বলেন, দাঊদী বর্ণনা করেন যে, এ লোকটি যে যুবায়র-এর সাথে বাদানুবাদ করেছিল সে মুনাফিক ছিল। (শারহে মুসলিম ১৫/১৬শ খন্ড, হাঃ ২৩৫৭)

‘শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আছে- আল্লাহর রসূলের উক্তি ‘‘হে যুবায়র! তুমি তোমার জমি সিক্ত কর, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমির দিকে পানি ছাড়ো। এটা সদাচরণ করতে যুবায়র-এর প্রতি নির্দেশ স্বরূপ ছিল, পারস্পরিক উদারতাগ্রহণ পূর্বক ছিল, অধিকারে ছাড় দেয়ার মাধ্যমে প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ স্বরূপ ছিল, এটা তার পক্ষ হতে নির্দেশ স্বরূপ ছিল। অতঃপর তিনি যখন আনসারীকে দেখলেন সে অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, তখন তিনি যুবায়রকে তার পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত অবস্থায় বিচারককে বিচার করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি স্বীয় রাগের অবস্থায় আনসারীর বিরুদ্ধে হুকুম দিয়েছেন এটা এ কারণে যে, তিনি রাগ ও সন্তুুষ্টি উভয় অবস্থাতে না-হক তথা অন্যায় কথা বলা থেকে নিরাপদ ছিলেন।

হাদীসটিতে আছ- নিশ্চয় ঐ সকল উপত্যকা ও প্রবাহের পানি যার ঝর্ণা ও নালার মালিকানা সাব্যস্ত করা যায় না তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে মানুষ সমান। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি এ ঝর্ণা বা নালাসমূহের মধ্যে অগ্রগামী হবে সে ব্যক্তি অন্য অপেক্ষা ঐ নালা বা ঝর্ণার সর্বাধিক অধিকারী হবে। পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে উপরের অধিবাসীগণ পানি অংশের কাছাকাছি হওয়ার কারণে তাদেরকে নিম্নগামীদের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। আর পানি অংশের উপরের অধিবাসীদের প্রয়োজন মেটানোর পর তাদের পানির যথেষ্টতা মনে করা হবে, অতঃপর পানি অংশের নিম্নগামীরা পানি নিবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উরওয়াহ (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع)