১৬৯

পরিচ্ছেদঃ নিয়ত ও ইখলাস সম্পর্কিত হাদীসসমূহ

(১৬৯) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে (বনী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, এহেন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ কর।’ সুতরাং তারা স্ব স্ব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে) দু’আ করতে লাগল।

তাদের মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং (এও জান যে,) আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা নৈশদুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার কর। এই দু’আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

দ্বিতীয়-জন দু’আ করল, হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) আমি তাকে এত বেশী ভালবাসতাম, যত বেশী ভালবাসা পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এই শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) রাজী হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার সতীচ্ছদ নষ্ট করো না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত কর।’’ সুতরাং পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

তৃতীয়জন দু’আ করল, হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন হলে) আমি তাদের সকলকে মজুরী দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরী না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর একদিন সে এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার মজুরী দিয়ে দাও। আমি বললাম, এসব উঁট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম (আদি) যা তুমি দেখছ তা সবই তোমার মজুরীর ফল। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে না। আমি বললাম, আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি)। সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর। এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।

وَعَنْ أَبيْ عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنهما قَالَ : سمعتُ رسولَ الله ﷺ يقول انطَلَقَ ثَلاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ المَبيتُ إِلى غَارٍ فَدَخلُوهُ فانْحَدرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ فَقَالُوْا : إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أنْ تَدْعُوا اللهَ بصَالِحِ أعْمَالِكُمْ قَالَ رجلٌ مِنْهُمْ : اَللّٰهُمَّ كَانَ لِي أَبَوانِ شَيْخَانِ كبيرانِ وكُنْتُ لا أغْبِقُ قَبْلَهُمَا أهْلاً ولاَ مالاً فَنَأَى بِي طَلَب الشَّجَرِ يَوْماً فلم أَرِحْ عَلَيْهمَا حَتَّى نَامَا فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُما نَائِمَينِ فَكَرِهْتُ أنْ أُوقِظَهُمَا وَأَنْ أغْبِقَ قَبْلَهُمَا أهْلاً أو مالاً فَلَبَثْتُ - والْقَدَحُ عَلَى يَدِي - أنتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُما حَتَّى بَرِقَ الفَجْرُ والصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عَندَ قَدَميَّ فاسْتَيْقَظَا فَشَرِبا غَبُوقَهُما اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاء وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ فانْفَرَجَتْ شَيْئاً لا يَسْتَطيعُونَ الخُروجَ مِنْهُ
قَالَ الآخر : اَللّٰهُمَّ إنَّهُ كانَتْ لِيَ ابْنَةُ عَمّ كَانَتْ أَحَبَّ النّاسِ إليَّ - وفي رواية : كُنْتُ أُحِبُّها كأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النساءَ - فأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسِهَا فامْتَنَعَتْ منِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بها سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمئةَ دينَارٍ عَلَى أنْ تُخَلِّيَ بَيْني وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا - وفي رواية : فَلَمَّا قَعَدْتُ بَينَ رِجْلَيْهَا قالتْ : اتَّقِ اللهَ وَلاَ تَفُضَّ الخَاتَمَ إلاّ بِحَقِّهِ فَانصَرَفْتُ عَنهَا وَهيَ أَحَبُّ النَّاسِ إليَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أعْطَيتُها اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابْتِغاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنا مَا نَحْنُ فيهِ فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا
وَقَالَ الثَّالِثُ : اَللّٰهُمَّ اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ وأَعْطَيْتُهُمْ أجْرَهُمْ غيرَ رَجُل واحدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهبَ فَثمَّرْتُ أجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنهُ الأمْوَالُ فَجَاءنِي بَعدَ حِينٍ فَقالَ : يَا عبدَ اللهِ أَدِّ إِلَيَّ أجْرِي فَقُلْتُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أجْرِكَ: مِنَ الإبلِ وَالبَقَرِ والْغَنَمِ والرَّقيقِ فقالَ : يَا عبدَ اللهِ لاَ تَسْتَهْزِىءْ بِي! فَقُلْتُ : لاَ أسْتَهْزِئ بِكَ فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فاسْتَاقَهُ فَلَمْ يتْرُكْ مِنهُ شَيئاً الَّلهُمَّ إنْ كُنتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنا مَا نَحنُ فِيهِ فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ مُتَّفَقٌ عليهِ

وعن ابي عبد الرحمان عبد الله بن عمر بن الخطاب رضي الله عنهما قال : سمعت رسول الله ﷺ يقول انطلق ثلاثة نفر ممن كان قبلكم حتى اواهم المبيت الى غار فدخلوه فانحدرت صخرة من الجبل فسدت عليهم الغار فقالوا : انه لا ينجيكم من هذه الصخرة الا ان تدعوا الله بصالح اعمالكم قال رجل منهم : اللهم كان لي ابوان شيخان كبيران وكنت لا اغبق قبلهما اهلا ولا مالا فناى بي طلب الشجر يوما فلم ارح عليهما حتى ناما فحلبت لهما غبوقهما فوجدتهما ناىمين فكرهت ان اوقظهما وان اغبق قبلهما اهلا او مالا فلبثت - والقدح على يدي - انتظر استيقاظهما حتى برق الفجر والصبية يتضاغون عند قدمي فاستيقظا فشربا غبوقهما اللهم ان كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك ففرج عنا ما نحن فيه من هذه الصخرة فانفرجت شيىا لا يستطيعون الخروج منه قال الاخر : اللهم انه كانت لي ابنة عم كانت احب الناس الي - وفي رواية : كنت احبها كاشد ما يحب الرجال النساء - فاردتها على نفسها فامتنعت مني حتى المت بها سنة من السنين فجاءتني فاعطيتها عشرين ومىة دينار على ان تخلي بيني وبين نفسها ففعلت حتى اذا قدرت عليها - وفي رواية : فلما قعدت بين رجليها قالت : اتق الله ولا تفض الخاتم الا بحقه فانصرفت عنها وهي احب الناس الي وتركت الذهب الذي اعطيتها اللهم ان كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما نحن فيه فانفرجت الصخرة غير انهم لا يستطيعون الخروج منها وقال الثالث : اللهم استاجرت اجراء واعطيتهم اجرهم غير رجل واحد ترك الذي له وذهب فثمرت اجره حتى كثرت منه الاموال فجاءني بعد حين فقال : يا عبد الله اد الي اجري فقلت: كل ما ترى من اجرك: من الابل والبقر والغنم والرقيق فقال : يا عبد الله لا تستهزىء بي! فقلت : لا استهزى بك فاخذه كله فاستاقه فلم يترك منه شيىا اللهم ان كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما نحن فيه فانفرجت الصخرة فخرجوا يمشون متفق عليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
৩/ নিয়্যাত