পরিচ্ছেদঃ ৬৯. চুমো দিলে অযু করা প্রসঙ্গে
১৮০। ’উরওয়াহ আল-মুযানী ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহ্ইয়াহ্ ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান এক ব্যক্তিকে এ মর্মে আদেশ দেন, আমার সূত্রে ঐ হাদীস দু’টি বর্ণনা কর। অর্থাৎ আ’মাশের হাদীস এবং একই সানাদে ইস্তিহাযা রোগিনী’’ সম্পর্কে বর্ণিত তার ঐ হাদীস যাতে রয়েছে, ’ইস্তিহাযা রোগিনী প্রত্যেক সালাতের জন্যই অযু করবে।’ ইয়াহ্ইয়াহ্ ঐ ব্যক্তিকে আরো বলেন, তুমি আমার সূত্রে বর্ণনা কর যে, (আ’মাশের সূত্রে বর্ণিত) উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দূর্বল।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাওরী বলেছেন, হাবীব আমাদের কাছে কেবল ’উরওয়াহ আল-মুযানীর সূত্রেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ তিনি তাদের কাছে ’উরওয়াহ ইবনুয যুবাইরের সূত্রে কোন হাদীস বর্ণনা করেননি। আবূ দাউদ আরো বলেন, অবশ্য হামযাহ আয-যাইয়্যাত, হাবীব এবং ’উরওয়াহ ইবনু যুবাইরের থেকে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে একটি সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন।[1]
باب الْوُضُوءِ مِنَ الْقُبْلَةِ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَخْلَدٍ الطَّالْقَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، - يَعْنِي ابْنَ مَغْرَاءَ - حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، أَخْبَرَنَا أَصْحَابٌ، لَنَا عَنْ عُرْوَةَ الْمُزَنِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ، بِهَذَا الْحَدِيثِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ لِرَجُلٍ احْكِ عَنِّي أَنَّ هَذَيْنِ - يَعْنِي حَدِيثَ الأَعْمَشِ هَذَا عَنْ حَبِيبٍ وَحَدِيثَهُ بِهَذَا الإِسْنَادِ فِي الْمُسْتَحَاضَةِ أَنَّهَا تَتَوَضَّأُ لِكُلِّ صَلَاةٍ - قَالَ يَحْيَى احْكِ عَنِّي أَنَّهُمَا شِبْهُ لَا شَىْءَ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرُوِيَ عَنِ الثَّوْرِيِّ قَالَ مَا حَدَّثَنَا حَبِيبٌ إِلَّا عَنْ عُرْوَةَ الْمُزَنِيِّ يَعْنِي لَمْ يُحَدِّثْهُمْ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ بِشَىْءٍ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَقَدْ رَوَى حَمْزَةُ الزَّيَّاتُ عَنْ حَبِيبٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ حَدِيثًا صَحِيحًا
মাসআলাহঃ স্ত্রীকে স্পর্শ করলে উযু ভঙ্গ হয় কি না?
* উযু নষ্ট হওয়ার পক্ষে দলীলসমূহঃ
এ মতের পক্ষে গিয়েছেন তারা, যাদের ধারণা কুরআনুল কারীমে او لامستم النساء فلم تجد ماء فتيمموا আয়াতে বর্ণিত লাম্স তথা স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে সহবাস ছাড়া অন্য কিছু। যেমন, হাত দ্বারা স্পর্শ করা ও ঠেলা দেয়া। এ মতের পক্ষের দলীলসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) ‘আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লাহ থেকে মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি যদি তার জন্য বৈধ নয় এমন কোনো মহিলার সাথে এমন সব কাজ করে, যা তার নিজের স্ত্রীর সাথে করে থাকে। অর্থাৎ সহবাস ছাড়া কোনো কাজই সে বাকী রাখল না, তাহলে তার হুকুম কি? জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ উত্তমরূপে উযু করবে অতঃপর উঠে সালাত আদায় করবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা اقم الصلاة طرفي النهار وزلفا من الليل আয়াতটি নাযিল করলেন। এরপর মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বললেন, এ হুকুম কি তার জন্য খাস না কি সমস্ত মুসলিমের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, বরং সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য। (দারাকুতনী, বায়হাক্বী, হাকিম, তিনি এতে নিরব থেকেছেন। ইমাম তিরমিযীও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তাফসীর অধ্যায়ে সূরাহ ১১, অনুঃ ৫ তিনি বলেন, এ হাদীসের সানাদ মুত্তাসিল নয়। কারণ ‘আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লাহ হাদীসটি মু‘আয ইবনু জাবাল থেকে শুনেননি)।
হাদীসটিতে বহু উদ্দেশ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। তা হলোঃ হতে পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বরকতের জন্য এবং গুনাহ মোচনের জন্য উযু করার হুকুম দিয়েছেন উযু ভঙ্গ হওয়ার কারণে নয়। সেজন্যই তিনি তাকে বলেছেন ‘তুমি উত্তমরূপে উযু করে নিবে। কেননা হাদীসে আছে কোনো পাপ করার পর উযু করে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলে পা দূরিভূত হয়। অথবা লোকটির মযী নির্গত হয়েছিল, সেজন্য উযুর নির্দেশ দিয়েছেন। অথবা লোকটি সালাতের শর্ত জানতে চেয়েছিল। হাদীসে তো এ কথার প্রমাণ নেই যে, লোকটি প্রথমে উযু অবস্থায় ছিলো, তারপর স্বীয় নারীকে স্পর্শ করার কারণে তার উযু ভঙ্গ হয়ে গেছে। সুতরাং যখন কোনো হাদীস বিভিন্ন অর্থের সম্ভাবনা রাখে সেই হাদীস নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের দলীল হতে পারে না।
(খ) আবূ ‘উবাইদাহ বর্ণনা করেন, ইবনু মাসঊদ বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি হাত দ্বারা স্বীয় স্ত্রীকে স্পর্শ করলে এবং চুম্বন করলে উযু করতে হবে। তিনি او لامستم النساء আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতেন, এর অর্থ হচ্ছে হাত দ্বারা ঠেলা বা স্পর্শ করা, (ত্বাবারানী ‘কাবীর, আবূ উবাইদ (রহঃ) পিতা থেকে শ্রবণ করেননি, মাজমাউয যাওয়ায়িদ)। ইবনু মাসঊদ সূত্রে ‘মাসমাউয যাওয়ায়িদ’ গ্রন্থে আরো রয়েছেঃ ইবনু মাসঊদ বলেনঃ মুলামাসা হলো পুরুষ কর্তৃক স্বীয় স্ত্রীর কামোদ্দীপনার সাথে স্পর্শ করা। এতে উযু ওয়াজিব হবে।’’ এর সনদে হাম্মাদ ইবনু সুলায়মান রয়েছে। তার দ্বারা দলীল গ্রহণে মতভেদ রয়েছে। তবে ইবনুমাঊদ থেকে এ বিষয়ে সহীহ আসার রয়েছে।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ হাতের যিনা হচ্ছে স্পর্শ করা। (বায়হাক্বী)
(ঘ) মাঈয এর কিস্সাঃ সম্ভবতঃ তুমি চুম্বন করেছো অথবা স্পর্শ করেছো। (নায়লুল আওত্বার)
(ঙ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ লামস হচ্ছে সহবাস ব্যতীত অন্য কিছু। তাই কেউ স্ত্রীকে স্পর্শ করলে তাকে উযু করতে হবে- (বায়হাক্বী)। কিন্তু আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছেঃ তার নিকট যখন ‘চুমু দিলে উযু করতে হয়’ ইবনু উমারের এ বক্তব্য পৌঁছে তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় নিজ স্ত্রীকে চুম্বন করতেন। কিন্তু এরপর উযু করতেন না। (দারাকুতনী, হাসান)।
এছাড়া বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরাতে’ ইবনু মাসঊদ, ইবনু উমার ও উমার (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ আসার বর্ণিত আছে। অর্থাৎ তাঁদের মতে, আয়াতে লামস দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য নয়। অতঃপর ইমাম বায়হাক্বী উল্লেখ করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাদের বিপরীত মত দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ এর দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য। সুতরাং স্ত্রীকে স্পর্শ করলে উযু জরুরী নয়। ইবনু আব্দুল বার উমার বর্ণিত আসারকে দুর্বল বলেছেন। তিনি বলেন, এটা তাদের ভুল। আসারটি ইবনু ‘উমার সূত্রে সঠিক, উমার সূত্রে নয়। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)
* উযু নষ্ট না হওয়ার পক্ষে বর্ণিত দলীলসমূহঃ
এ মতের পক্ষে গিয়েছেন তারা, যাদের ধারণা কুরআনুল কারীমের। او لامستم النساء فلم تجد ماء فتيمموا আয়াতে বর্ণিত লামস তথা স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে সহবাস। এ মতটিই বেশি মজবুত ও সঠিক। এর পক্ষে বর্ণিত দলীলসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) ‘উরওয়াহ থেকে আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তাঁর কোনো স্ত্রীকে চুম্বন করতেন, অতঃপর সালাত আদায় করতেন কিন্তু উযু করতেন না।’’ উরওয়াহ বিন যুবায়র বলেন, সেই স্ত্রী আপনি ছাড়া আর কেই বা হবেন, এ কথা শুনে আয়িশাহ (রাঃ) হেসে দিলেন। (সহীহ ইবনু মাজাহ ৪১২, সুনান আবূ দাঊদ ১৭৯, সহীহ তিরমিযী, সহীহ সুনান নাসায়ী, আহমাদ, মিশকাত ৩২৩, আলবানী একে সহীহ বলেছেন। আহমাদ শাকির বলেন, এর সানাদ সহীহ। এর কোনো দোষ নেই)
(খ) ইবরাহীম আত-তায়মী থেকে আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুম্বন দিয়েছেন, কিন্তু এ জন্য উযু করেননি। (হাদীস সহীহ, সুনান আবূ দাঊদ ১৭৮, নাসায়ী ১৭০, ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, এটি মুরসাল বর্ণনা। ইবরাহীম তায়মী আয়িশাহ থেকে শুনেননি। ইমাম নাসায়ী বলেন, এই অনুচ্ছেদে এর চেয়ে উত্তম হাদীস আর নেই, যদিও তা মুরসাল। এ হাদীসটিকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী সুফয়ান সওরী সূত্রে আবূ রাওমাহ থেকে, তিনি ইবরাহীম আততায়মী থেকে তার পিতা থেকে আয়িশাহ সূত্রে। আয়িশাহ সূত্রে এ হাদীসের সানাদ সহীহ মুত্তাসিল। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিছানায় না পেয়ে (অন্ধকারে) হাতড়াতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাতখানি তার পায়ের তালুতে গিয়ে লাগলো। তখন তিনি সিজদারত অবস্থায় ছিলেন এবং পা দু’টি খাড়া ছিলো। তিনি বলছিলেনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযুবিকা বিরিজাকা মিন সাখতিকা...। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, নাসায়ী, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন)।
কারো মতে, উক্ত স্পর্শ সংঘটিত হয়েছে কাপড়ের আবরণের সাথে। তাই উযু ভঙ্গ হয়নি। আল্লামা যায়লাঈ বলেনঃ এটি বহু দূরের ব্যাখ্যা। হাদীসের শব্দই ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়- (নাসবুর রায়াহ)। আল্লামা শাওকানী বলেনঃ আয়িশাহর হাদীসের জবাবে ইবনু হাজার ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেছেন যে, ‘‘এখানে স্পর্শ করার বিষয়টি পর্দার সাথেও হতে পারে অথবা এটি তার জন্য খাস ছিলো।’’ এটি একান্তই কৃত্রিমতা এবং যাহিরের বিপরীত কথা। এর কোনই দলীল নেই। (নায়লুল আওত্বার)
(ঘ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম। আমার পা দু’টো ক্বিবলার দিকে থাকত। যখন তিনি সিজদা দিতেন তখন হাত দিয়ে আমাকে ঠেলা দিতেন। ফলে আমি পা টেনে নিতাম। আবার তিনি যখন দাঁড়িয়ে যেতেন তখন আমি পা দু’টো আবার ছড়িয়ে দিতাম। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তখন ঘরে বাতি থাকতো না। (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম, সুনানু নাসায়ী, আলবানী একে সহীহ বলেছেন)
(ঙ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতেন আর আমি তার সামনে জানাযার মতো আড়াআড়িভাবে থাকতাম। অতঃপর যখন তিনি বিতর সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন তখন আমাকে স্বীয় পা দ্বারা স্পর্শ করতেন। (সুনানু নাসায়ী, অনুঃ কামোদ্দীপনা ছাড়া পুরুষ যদি কোনো মহিলাকে স্পর্শ করে তবে উযু করার প্রয়োজন নেই। হাফিয আত-তালখীস গ্রন্থে বলেনঃ এর সানাদ সহীহ। আলবানী একে সহীহ বলেছেন সহীহ নাসায়ী হা/ ১৬৬, সহীহ আবূ দাঊদ হা/ ৭০৭। হাদীসটি আরো বর্ণিত আছে সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম গ্রন্থে)
‘আলিমগণ এ হাদীস দ্বারা এভাবে দলীল গ্রহণ করেন যে, আয়াতে যে লামস্ শব্দ এসেছে, এর অর্থ হচ্ছে সহবাস। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে সর্বদাই তাকে এভাবে স্পর্শ করতেন। যদি এতে উযু নষ্ট হতো তাহলে তিনি সালাত আদায় অব্যাহত রাখতেন না)।
(চ) আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে না পেয়ে মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয় তো তাঁর দাসী মারিয়ার কাছে গিয়েছেন। তখন আমি ঘুম থেকে উঠে প্রাচীর তালাশ করতে লাগলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় পেলাম। তখন হঠাৎ করে আমি আমার হাতখানা তাঁর চুলের ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম, পরিক্ষা করে দেখার জন্য যে, আসলে তিনি গোসল করেছেন কি না? অতঃপর সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়িশাহ! তোমাকে শয়তান পেয়ে বসেছে। (ত্বাবারানী সাগীর)
(ছ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালনরত (রোযা) অবস্তায় তাকে চুম্বন করতেন। এরপর রোযা ছাড়তেন না এবং নতুনভাবে উযুও করতেন না। (ত্বাবারী)
(জ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, চুম্বন করলে উযু ওয়াজিব হয় না। (দারাকুতনী, তিনি একে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন)
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে কিছু দুর্বল হাদীসও রয়েছে। যেমন, ইবনু ‘আদীর কামিল গ্রন্থে আবূ উমামাহ থেকে, ত্বাবারানী আওসাত্বে আবূ হুরাইরাহ থেকে এবং ইবনু হিব্বানের যু‘আফা গ্রন্থে ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে এ বিষয়ে মারফূ হাদীস বর্ণিত আছে। তবে আবূ উমামাহর সনদে রুকন ইবনু আব্দুল্লাহ দুর্বল। ইবনু উমারের সনদে গালিব ইবনু আব্দুল্লাহ দুর্বল।
এছাড়া এ মতের পক্ষে আরো উল্লেখযোগ্য সহীহ হাদীস হচ্ছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর স্ত্রীর একই পাত্র থেকে উযু করা, অনুরূপভাবে সাহাবায়ি কিরামের ঐরূপ উযু করা সম্পর্কিত হাদীস, এতে তো অবশ্যই একজনের হাত অন্যজনের হাতের সাথে স্পর্শ হয়ে থাকে, যদি নারীর স্পর্শ উযু ভঙ্গের কারণ হতো তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের এভাবে উযু করার সুযোগ দিতেন না। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্বীয় স্ত্রী কর্তক চুল আচড়ানো সম্পর্কিত হাদীস, ইত্যাদি। মূলতঃ এ সম্পর্কে আরো বহু শাহিদ হাদীস ও আসার রয়েছে। আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সেগুলো উল্লেখ করা হলো না।
* এ বিষয়ে কয়েকজন বিজ্ঞ ‘আলিমের ফাতাওয়াহঃ
* ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ স্ত্রীকে স্পর্শ করলে উযু নষ্ট হয় কি না এ বিষয়ে ফক্বীহগণের তিনটি অভিমত রয়েছেঃ একঃ উযু নষ্ট হবে না। এটি ইমাম আবূ হানিফা ও অন্যদের অভিতম। দুইঃ কামোদ্দীপনার সাথে স্পর্শ করলে উযু নষ্ট হবে। স্বাভাবিক স্পর্শে নষ্ট হবে না। এটি ইমাম মালিক এবং মদীনাহবাসীর অভিমত। উল্লেখ্য, ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম আবূ ইউসূফ বলেছেনঃ তবে উত্তেজনা বেশি হলে ভিন্ন কথা, যদিও তাতে মযী নির্গত না হয়। ইমাম মালিক থেকেও এ কথা এসেছে। তিনঃ স্পর্শ করলেই উযু ভঙ্গ হবে। এটি ইমাম শাফিঈ ও অন্যদের অভিমত।
এ বিষয়ে সহীহ কথা হচ্ছে দু’ উক্তির একটি। হয় তো প্রথমটি, যা সাধারণভাবেই উযু ভঙ্গ না হওয়ার কথা বলছে। অথবা দ্বিতীয়টি। যা কামোদ্দীপনার সাথে স্পর্শকে উযু ভঙ্গের কারণ বলছে। কিন্তু তৃতীয় মতটি অতি দুর্বল। যাতে কোনো উত্তেজনা ছাড়া কেবল স্পর্শ করলেই উযু ওয়াজিব হওয়ার কথা বলছে। কোনো সাহাবী থেকেই এ মতটি জানা যায় না। এমন কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কেউ এরূপ কথা বর্ণনা করেননি যে, তিনি কেবল স্পর্শ করার কারণে উযুর নির্দেশ দিয়েছেন। বরং হাদীসে আছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই‘তিকাফের অবস্থায় স্বীয় স্ত্রীর হাতে মাথা আচরিয়েছেন, সালাতরত অবস্থায় আয়িশাহকে হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন যেন আয়িশাহ পা গুটিয়ে নেন ইত্যাদি। যা উক্ত মততে দুর্বল প্রমাণ করে।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ মধ্যমপন্থা হচ্ছে সেই মত যারা উভয় হাদীসগুলোকে একত্রিত করে এ মত দিয়েছেন যেঃ নারীকে স্পর্শ করলে উযু ভঙ্গ হবে না। কিন্তু কামোদ্দীপনার সাথে স্পর্শ করলে উযু ভঙ্গ হবে। (মাজমু‘আহ ফাতাওয়াহ লি ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ থেকে সংক্ষেপিত)
* শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কখনই উযু ভঙ্গ হবে না। এ কথার দলীল হচ্ছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, তিনি স্ত্রীকে চুম্বন করে সালাত আদায় করতে বের হয়েছেন কিন্তু উযু করেননি। কেননা আসল হচেছ দলীল না থাকলে উযু ভঙ্গ না হওয়া। কেননা শারঈ দলীলের ভিত্তিতে তার উযু প্রমাণিত হয়েছে। আর যা শারঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শারঈ দলীল ছাড়া নষ্ট হবে না। যদি বলা হয়, আল্লাহ তো বলেছেনঃ ‘‘অথবা তোমরা যদি স্ত্রীকে স্পর্শ করো।’ উত্তরে বলা হবেঃ আয়াতে স্ত্রীদের স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। যেমনটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাই আমরা বললো, স্ত্রীকে স্পর্শ করা কখনই উযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই স্পর্শ উত্তেজনার সাথে হোক বা উত্তেজনার সাথে না হোক। তবে স্পর্শ করার কারণে যদি কোনো কিছু নির্গত হয় তবে তার বিধান ভিন্ন। যদি বীর্য বের হয়, তবে গোসল করা ফারয আর যদি মযী নির্গত হয় তবে অন্ডকোষসহ লিঙ্গ ধৌত করে উযু করা আবশ্যক। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)
সারকথাঃ স্বাভাবিক অবস্থায় নারী স্পর্শ করা উযু ভঙ্গের কারণ নয়। অনুরূপভাবে উত্তেজনা প্রবল না হলে নারীকে স্পর্শ করার কারণে উযু ওয়াজিব নয়। কিন্তু প্রবল উত্তেজনার সাথে নারীকে স্পর্শ করলে (মযী নির্গত না হলেও) উযু ভঙ্গ হবে। নারী স্পর্শের যে কোনো অবস্থায় বীর্যপাত হলে গোসল করা ওয়াজিব। আর মযী নির্গত হলে উযু করা ওয়াজিব হবে। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
This tradition has been reported through another chain of narrators on the authority of 'Aishah.
Abu Dawud said:
Yahya b. Sa'id al-Qattan said to a person: Narrate these two tradition from me, that is to say, one tradition on the authority of al-A'mash from Habib (about kissing); another through the same chain about a woman who has prolonged flow of bloos and she is asked to perform ablution for every prayer.
Yahya said: Narrate from me that both these traditions are weak in respect of their chains.
Abu Dawud said: Al-Thawri is reported to have said: Habib narrated this tradition to us only on the authority of 'Urwat al-Muzani, that is, he did not narrated any tradition on the authority of 'Urwah b. al-Zubair.
Abu Dawud said: Hamzah al-Zayyat reported a sound tradition on the authority of Habib, from 'Urwah b. al-Zubair from 'Aishah.