২৬৮৫

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৮৫-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: احْتَجَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ محرم

وعن ابن عباس قال: احتجم النبي صلى الله عليه وسلم وهو محرم

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা হাযিমী সহ অনেক ‘আলিমের মতামত হলো এ শিঙ্গা লাগানোর সময়টি ছিল বিদায় হজ্জের দিন।

(وَهُوَ مُحْرِمٌ) সহীহুল বুখারীতে অতিরিক্ত এসেছে, (فى راسه من وجع كان به تماء يقال له لحى جمل) অর্থাৎ- শিঙ্গাটা লাগিয়েছিলেন মাথায় আঘাতজনিত কারণে পানি দ্বারা যাকে ‘‘লুহা জামাল’’ বলা হয়। অন্য সনদে ইবনু ‘আব্বাস  থেকে মু‘আল্লাক সূত্রে বর্ণনা এসেছে,

(ان رسول الله ﷺ احتجم وهو محرم فى راسه من شقيقة كانت به)

অর্থাৎ- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন মাথায় ‘‘শাক্বীক্বাহ্’’-এর কারণে। শাক্বীক্বাহ্ অর্থ وجع يأخذ فى احد نبى الرأس او فى مقدمه অর্থাৎ- এমন ব্যথা যা মাথার এক পাশে অথবা মাথার সম্মুখভাগে। অপর একটি হাদীস যেটি ইবনু হায়নাহ্ বর্ণনা করেছেন তৃতীয় পরিচ্ছেদে হাদীসটি আসবে তাতে রয়েছে মাথার মধ্যভাগের কথা।

আর আনাস (রাঃ)-এর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত হাদীস যা তৃতীয় পরিচ্ছেদে রয়েছে সেখানে রয়েছে পায়ের উপরিভাগে ব্যথা পাওয়ার কারণে সেখানে তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন এবং জাবির (রাঃ) কর্তৃক হাদীস যেটি ইমাম আহমাদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন সেখানে রয়েছে, তিনি পিঠে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। যাই হোক উপরোক্ত মতবিরোধের সমাধাকল্পে ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, বস্ত্তত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিঙ্গা লাগানো একবার ছিল না তা ছিল কয়েকবার।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় মুহরিমের জন্য শিঙ্গা লাগানো বৈধ আছে- এর সমর্থনে ইমাম বুখারী (রহঃ) তারজামাতুল বাব তথা অধ্যায় রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, (باب الحجامة للمحرم) হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)-এর অর্থ করেছেন باب الحجامة للمحرم অর্থ হলো (هل يجوز الحجامة للمحرم) অর্থাৎ- মুহরিমের জন্য শিঙ্গা লাগানো কি বৈধ আছে নাকি নেই? এ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিতে উদ্দেশ্য মাহজূম তথা শিঙ্গা যাকে লাগানো হয়েছে الحاجم তথা শিঙ্গা যিনি লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি উদ্দেশ্য নন।

‘আল্লামা ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) তাঁর ‘আল মুগনী’ নামক কিতাবে (৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৩০৫) বলেন, অতঃপর শিঙ্গা যদি লাগানোর ফলে একটি চুলও না কাটে তাহলে তা বৈধ হবে কোন প্রকার ফিদিয়া ব্যতীত আর এটাই জমহূর ‘উলামায়ে কিরামের ফাতাওয়া। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, বিশেষ কারণ ব্যতীত শিঙ্গা লাগাবে না। তবে হাসান বাসরী (রহঃ) মনে করেন শিঙ্গা লাগালে জরিমানা দিতে হবে।

‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেন, যে কোন অবস্থাতেই শিঙ্গা লাগানো বৈধতার ফাতাওয়া দিয়েছেন ‘আত্বা, মাসরূক, ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ, ত্বাউস, সাওরী, আবূ হানীফা, শাফি‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক। আর এক দল বলেছেন, বিশেষ কারণ ব্যতীত শিঙ্গা লাগানো নিষেধ, ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে কথার বর্ণনা পাওয়া যায়। আর এটাই ইমাম মালিক (রহঃ)-এর অভিমত।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, সকলের ঐকমত্যে মাথা বা শরীরের অন্য যে কোন অঙ্গে শিঙ্গা লাগানো বৈধ যদি কোন অসুবিধা থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি চুলও কেটে যায় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। তবে চুল কাটানোর কারণে ফিদিয়া দেয়া আবশ্যক হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘অর্থাৎ- তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা তার মাথায় যখন হবে সে ফিদিয়া দিবে।’’ (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৬)

আর অত্র হাদীস (যার ব্যাখ্যা আমরা করছি) সে হাদীসটির অর্থ এমন হবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথার মধ্যভাগে শিঙ্গা লাগিয়েছেন তার অসুবিধার কারণে এবং তিনি কোন চুল কাটেননি। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়াই যদি মুহরিম মাথার বা অন্য কোথাও শিঙ্গা লাগায় আর তাতে যদি তার চুল কেটে যায় তাহলে শিঙ্গা লাগানো হারাম হবে যেহেতু মুহরিম অবস্থায় চুল কাটা নিষেধ। আর যদি চুল না কাটে যেমন সে এমন জায়গায় শিঙ্গা লাগালো যেখানে কোন চুল নেই তাহলে অধিকাংশ ‘আলিমের মতে তাকে কোন ফিদিয়া দিতে হবে না। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ইমাম মালিক (রহঃ)-এর নিকট এটা মাকরূহের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইমাম হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, চুল না কাটলে, এখানে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। আমাদের (জমহূর) এক্ষেত্রে দলীল হল সে ফিদিয়া দিবে না এ কারণে যে, কোন হাদীস এমন নেই যে ইহরাম অবস্থায় রক্ত বের হলে ফিদিয়া দিতে হবে। তবে দাঊদ আয্ যাহিরীর মতানুসারীরা শুধু মাথার চুলকে নির্দিষ্ট করেছেন।

মোট কথা হচ্ছে এখানে জমহূরের মতই প্রাধান্য কারণ, এ সম্পর্কে যতগুলো রিওয়ায়াত এসেছে তার একটিতেও এ কথা বর্ণিত হয়নি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিঙ্গা লাগানোর ফলে চুল কেটে গেলে ফিদিয়া দিয়েছেন।

আর যারা ফিদিয়া আবশ্যকের মতাবলম্বী তাদের দলীল মহান আল্লাহর বাণী, অর্থাৎ- ‘‘কুরবানীর পশু তার স্বীয় স্থানে পৌঁছার পূর্বে তোমরা মাথা হলক করিও না।’’ (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৯৬)

এ আয়াতের ব্যাপকতার মাধ্যমে অর্থাৎ- এখানে যেহেতু মাথা হলক করা নিষেধ আছে তাই শিঙ্গা লাগাতে গিয়ে একটি চুলও যদি কাটা যায় তাহলে ফিদিয়া দিতে হবে। তাদের এ ফাতাওয়া ঠিক নয়, কারণ আয়াতটি শুধু একটি চুল কাটলেই ফিদিয়া দিতে হবে এমন কথা বলছে না বরং সমস্ত মাথা হলক করলে ফিদিয়া দেয়ার কথা বলছে। সুতরাং কিংয়দংশ হলকের সাথে ফিদইয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে মাথার কতটুকু হলক করলে ফিদিয়া দিতে হবে এ বিষয়টি নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে বিরোধ আছে। তাই ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, তিনটি চুল বা ততোধিক চুল কাটলে ফিদিয়া আবশ্যক হবে।

ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর এক বর্ণনায়ও তাই আছে। তবে অন্য বর্ণনায় আছে চারটি চুলের কথা। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মত হলো যদি মাথার এক চতুর্থাংশ হলক করে তাহলে ফিদিয়া দিবে। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, ফিদিয়া দিতে হবে যদি চাকচিক্যের উদ্দেশে বা اماطة الأذى তথা ময়লা দূর করার জন্য মাথা হলক করে থাকে এ ক্ষেত্রে চুলের সংখ্যা অনির্ধারিত। (আল্লাহ অধিক অবগত আছেন)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)