পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে
২৫৬৪-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ/হজ বা ’উমরা করতে এসে প্রথমে যখন তাওয়াফ করতেন তিন পাক জোরে পদক্ষেপ করতেন, আর চার পাক স্বাভাবিকভাবে চলতেন। তারপর (মাকামে ইবরাহীমের কাছে) দু’ রাক্’আত (তাওয়াফের) সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করতেন এবং সাফা মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا طَافَ فِي الْحَجِّ أَوِ الْعمرَة مَا يَقْدَمُ سَعَى ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشَى أَرْبَعَةً ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَطُوفُ بَيْنَ الصَّفَا والمروة
ব্যাখ্যা: ১. বর্ণিত হাদীসটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল সুন্নাত হওয়ার দলীল। অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের অভিমত এটিই।
২. শাফি‘ঈ মাযহাবে কিছু ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, হজ্জ/হজ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা মুস্তাহাব, হজ্জ/হজ ‘উমরা ব্যতীত সাধারণ তাওয়াফে রমল নেই।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই যে, হজ্জ/হজ এবং ‘উমরার শুধু একটি তাওয়াফে রমল করা শারী‘আত সম্মত। এ মাসআলায় ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর দু’টি অভিমত রয়েছে। প্রসিদ্ধ অভিমতটি হচ্ছে, যে তাওয়াফের পরে সা‘ঈ রয়েছে সে তাওয়াফে রমল করবে। আর পরে সা‘ঈ রয়েছে এমন তাওয়াফ হচ্ছে তাওয়াফে কুদূম ও তাওয়াফে ইফাদাহ্। বিদায়ী তাওয়াফের পরে সা‘ঈ নেই, সুতরাং সে তাওয়াফে রমলও হবেনা।
দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে, রমল শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদূমেই শারী‘আতসম্মত অন্য তাওয়াকে নয়। চাই তাওয়াফকারী তাওয়াফের পরে সা‘ঈর ইচ্ছা করুক বা না করুক। আর ‘উমরার তাওয়াফে রমল শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা ‘উমরার মাঝে তাওয়াফ একটিই হয়ে থাকে।
৩. বর্ণিত হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, রমল শুধু প্রথম তিন তাওয়াফে করবে বাকীগুলোতে করবে না। কেউ যদি প্রথম তিন তাওয়াফে রমল ছেড়ে দেয় তাহলে বাকী তাওয়াফগুলোতে কাযা করাও লাগবে না এবং তাঁর উপর দমও (কুরবানী) আবশ্যক হবে না।
৪. তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করার বিধান শুধু পুরুষদের জন্য। মহিলাগণ রমল করবে না।
৫. বর্ণিত হাদীস দ্বারা তাওয়াফের পরে মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাতের বিধানটি প্রমাণিত হয়। হানাফীদের নিকট এই দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করা ওয়াজিব তাদের দলীল হচ্ছে, (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى) ।
শাফি‘ঈদের নিকট তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করা সুন্নাত।
৬. বর্ণিত হাদীস দ্বারা হজ্জের কার্যক্রমের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। তাওয়াফের পরে সা‘ঈ করতে হবে। কেউ যদি তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করে নেয় তাহলে তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না।
তাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমল করেছিলেন মুশরিকদের সামনে মুসলিমদের বীরত্ব প্রকাশের জন্য। কেননা ‘উমরাতুল কাযার সময় মুশরিকরা মুসলিমদের দেখে বলেছিল, ইয়াস্রিবের জ্বর মুসলিমদের কাবু করে ফেলেছে। তাদের এ কথার প্রতিবাদস্বরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের তাওয়াফের প্রথম তিনি চক্করে রমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিজয়ের পর রমলের এই কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রমলের হুকুম রয়ে গিয়েছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময়ও রমল করেছিলেন। রমলের হুকুমের কারণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পূর্বের মতো ঠিক থাকার কারণ বর্ণনায় ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, রমলের হুকুম পূর্বের অবস্থায় রাখা হযেছে যাতে করে মুসলিমগণ তাদের পূর্বের অবস্থা স্মরণ রাখতে পারে। তাদের উপর আল্লাহ রববুল ‘আলামীনের অনুগ্রহসমূহ স্মরণ রাখতে পারে যে, তারা এক সময় এমন দুর্বল ছিল মুশরিকরা তাদেরকে হাসি-ঠাট্টা করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাক্তিশালী করেছেন স্বল্পসংখ্যা বৃহৎ সংখ্যায় পরিণত করেছেন। এ সকল নি‘আমাত স্মরণ করানোর জন্যই রমলের হুকুম এখনো বাকি রয়েছে।