২৫৫৬

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ

২৫৫৬-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিদায় হজে বের হলাম। আমাদের কেউ কেউ ’উমরার ইহরাম বেঁধেছিল আর কেউ কেউ হজের ইহরাম। আমরা যখন মক্কায় পৌঁছলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি ’উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসেনি সে যেন ’উমরার কাজ শেষ করে (ইহরাম খুলে) হালাল হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি ’উমরার ইহরাম বেঁধেছে, সাথে করে কুরবানীর পশুও এনেছে, সে যেন হজের তালবিয়াহ্ পাঠ করে ’উমরার সাথে এবং ইহরাম না খুলে, যে পর্যন্ত হজ্জ/হজ ও ’উমরা উভয় হতে অবসর গ্রহণ না করে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যেন ইহরাম না খুলে যে পর্যন্ত পশু কুরবানী করে অবসর গ্রহণ না করে। আর যে শুধু হজের ইহরাম বেঁধেছে সে যেন হজের কাজ পূর্ণ করে। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি ঋতুমতী হয়ে গেলাম, (’উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারলাম না এবং সাফা-মারওয়ার সা’ঈও করতে পারলাম না। আমার অবস্থা ’আরাফার দিন উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত এরূপই থাকলো। অথচ আমি ’উমরা ছাড়া অন্য কিছুর ইহরাম বাঁধিনি।

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন, আমি যেন আমার মাথার চুল খুলে ফেলি ও চিরুনী করি। সুতরাং হজের ইহরাম বাঁধি, আর ’উমরা ত্যাগ করি। আমি তা-ই করলাম এবং আমার হজ্জ/হজ আদায় করলাম। এরপর আমার ভাই ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর-কে আমার সাথে পাঠালেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আমার সেই ’উমরার পরিবর্তে তান্’ঈম হতে ’উমরা করি। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, যারা শুধু ’উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলো এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করলো। অতঃপর তারা হালাল হয়ে গেলো। তারপর যখন মিনা হতে (১০ তারিখে) ফিরে এসে তখন (হজের জন্যে) তাওয়াফ করল, আর যারা হজ্জ/হজ ও ’উমরা একসাথে (ইহরাম বেঁধেছিল) করেছিল তারা শুধু (১০ তারিখে) একটি মাত্র তাওয়াফ করলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ قِصَّةِ حَجَّةِ الْوَدَاعِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ فَلَمَّا قَدِمْنَا مَكَّةَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَلَمْ يُهْدِ فَلْيَحْلِلْ وَمَنْ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ وَأَهْدَى فَلْيُهِلَّ بِالْحَجِّ مَعَ العُمرةِ ثمَّ لَا يحل حَتَّى يحل مِنْهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فَلَا يَحِلُّ حَتَّى يَحِلَّ بِنَحْرِ هَدْيِهِ وَمَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ فَلْيُتِمَّ حَجَّهُ» . قَالَتْ: فَحِضْتُ وَلَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ وَلَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَلَمْ أَزَلْ حَائِضًا حَتَّى كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ وَلَمْ أُهْلِلْ إِلَّا بِعُمْرَةٍ فَأَمَرَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَنْقُضَ رَأْسِي وَأَمْتَشِطَ وَأُهِلَّ بِالْحَجِّ وَأَتْرُكَ الْعُمْرَةَ فَفَعَلْتُ حَتَّى قَضَيْتُ حَجِّي بَعَثَ مَعِي عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي بَكْرٍ وَأَمَرَنِي أَنْ أَعْتَمِرَ مَكَانَ عُمْرَتِي مِنَ التَّنْعِيمِ قَالَتْ: فَطَافَ الَّذِينَ كَانُوا أَهَلُّوا بِالْعُمْرَةِ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حَلُّوا ثمَّ طافوا بَعْدَ أَنْ رَجَعُوا مِنْ مِنًى وَأَمَّا الَّذِينَ جَمَعُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوا طَوَافًا وَاحِدًا

وعن عاىشة رضي الله عنها قالت: خرجنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في حجة الوداع فمنا من اهل بعمرة ومنا من اهل بحج فلما قدمنا مكة قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من اهل بعمرة ولم يهد فليحلل ومن احرم بعمرة واهدى فليهل بالحج مع العمرة ثم لا يحل حتى يحل منها» . وفي رواية: «فلا يحل حتى يحل بنحر هديه ومن اهل بحج فليتم حجه» . قالت: فحضت ولم اطف بالبيت ولا بين الصفا والمروة فلم ازل حاىضا حتى كان يوم عرفة ولم اهلل الا بعمرة فامرني النبي صلى الله عليه وسلم ان انقض راسي وامتشط واهل بالحج واترك العمرة ففعلت حتى قضيت حجي بعث معي عبد الرحمن بن ابي بكر وامرني ان اعتمر مكان عمرتي من التنعيم قالت: فطاف الذين كانوا اهلوا بالعمرة بالبيت وبين الصفا والمروة ثم حلوا ثم طافوا بعد ان رجعوا من منى واما الذين جمعوا الحج والعمرة فانما طافوا طوافا واحدا

ব্যাখ্যা: (وَمَنْ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ وَأَهْدٰى فَلْيُهِلَّ بِالْحَجِّ مَعَ العُمْرَةِ ثُمَّ لَا يَحِلُّ حَتّٰى يَحِلَّ مِنْهَا) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং সাথে কুরবানীর পশু নিয়ে এসেছে সে যেন ‘উমরার সাথে হজ্জের ইহরামও বেঁধে নেয়।’’ অতঃপর সে হজ্জ/হজ ও ‘উমরা সম্পন্ন করার পূর্বে হালাল হতে পারবে না। অর্থাৎ- সে ইহরাম থেকে বের হতে পারবে না এবং ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কোন কাজ তার জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ না সে ‘উমরা ও হজ্জ/হজ উভয়টির কাজ সম্পন্ন না করবে। উভয় কাজ সম্পন্ন করার পর সে ইহরাম থেকে হালাল হবে।

(فَحِضْتُ وَلَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ وَلَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ) ‘‘অতঃপর আমি ঋতুবতী হয়ে গেলাম তাই বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করিনি এবং সাফা-মারওয়াতে সা‘ঈ করিনি। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করেননি এজন্য যে, তিনি অপবিত্র হয়ে পড়েছিলেন। আর বায়তুল্লাহতে তাওয়াফ করার জন্য পবিত্রতা শর্ত। আর সা‘ঈ এজন্য করেননি যে, সা‘ঈ তো তাওয়াফের পর করতে হয় তাওয়াফ ব্যতীত সা‘ঈ বিশুদ্ধ নয়। তবে ঋতুবতীর বিধান এর ব্যতিক্রম। ঋতুবতীর জন্য সা‘ঈ করা বৈধ এজন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। কেননা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ঋতুবতী হওয়ায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের সকল কাজ সম্পন্ন করো।

ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ সা‘ঈ তাওয়াফের অনুগামী। তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করা বৈধ নয়। অতএব তাওয়াফের পূর্বে কেউ সা‘ঈ করলে তা যথেষ্ট হবে না। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং আহলুল বায়তগণের অভিমত এটিই। ‘আত্বা বলেনঃ তাওয়াফের পূর্বে সা‘ঈ করলেও যথেষ্ট হবে। কতক আহলুল হাদীসের অভিমতও তাই।

(وَأُهِلَّ بِالْحَجِّ وَأَتْرُكَ الْعُمْرَةَ) ‘‘(আমাকে নির্দেশ দিলেন) আমি যেন ‘উমরাহ পরিত্যাগ করে হজ্জের ইহরাম বাঁধি।’’ হানাফীদের নিকট এর অর্থ হলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি যেন ‘উমরা-এর ইহরাম থেকে বেরিয়ে যাই এবং ইহরাম অবস্থায় যা হারাম ছিল তা পালন করি যেমন মাথার বেণী খুলে ফেলি, চুল আচড়াই ইত্যাদি। কেননা ঋতুর কারণে ‘উমরা-এর কার্যাবলী সম্পাদন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর হজ্জের ইহরাম বাঁধি। তাঁরা এ হাদীসটিকে তাদের দলীল হিসেবে পেশ করেন এবং বলেন, কোন মহিলা যদি তামাত্তু' হজ্জের নিয়্যাতে ইহরাম বাঁধার পর কাবা ঘরের তাওয়াফ করার আগেই ঋতুবতী হয়ে যায় এবং ‘আরাফার দিন আসা পর্যন্ত তার ঋতু অব্যাহত থাকে তাহলে সে মহিলা ‘উমরা পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র ইফরাদ হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবে। হজ্জের কাজ সম্পন্ন করার পর পুনরায় পরিত্যক্ত ‘উমরার জন্য কাযা ‘উমরা করবে। আর ইতোপূর্বে ‘উমরা পরিত্যাগ করার জন্য দম দিবে।

জমহূর ‘উলামাহগণ বলেনঃ এ হাদীসের অর্থ হলো- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিলেন আমি যেন ‘উমরা-এর যাবতীয় কাজ তথা কাবা ঘরের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সা‘ঈ, মাথার চুল খাটো করা এসব কিছু বাদ রেখে ‘উমরার ইহরামের সাথেই হজ্জের ইহরাম বাঁধি। ফলে আমি হজ্জে কিরানকারী হয়ে যাই। এখানে ‘উমরা-এর কাজ পরিত্যাগ করার অর্থ ‘উমরার ইহরাম বাতিল করা নয় বরং ‘উমরার কাজ বাদ রেখে তার সাথে হজ্জের কাজ সংযুক্ত করা। এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ইমাম মালিক, আওযা‘ঈ শাফি‘ঈ এবং অনেক ‘উলামাহবৃন্দ। তারা দলীল হিসেবে জাবির (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করেন যাতে রয়েছে- ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি গোসল করে হজ্জের ইহরাম বাঁধো, অতঃপর তিনি তাই করলেন। অতঃপর তিনি হজ্জের সকল কাজ সম্পাদন করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবার তুমি হজ্জ/হজ ও ‘উমরা থেকে হালাল হলে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়াওমুন্ নাফরে (ফিরার দিন) বললেনঃ তোমার এ তাওয়াফ তোমার হজ্জ/হজ ও ‘উমরা-এর জন্য যথেষ্ট হবে’’ হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

(فَفَعَلْتُ) ‘‘আর আমি তাই করলাম।’’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ- ‘উমরার বাদ রেখে রেখে আমি হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলাম।

(ثُمَّ حَلُّوْا) ‘‘এরপর তারা হালাল হয়ে গেল।’’ অর্থাৎ- ‘উমরা-এর কাজ সম্পাদন করে হলক অথবা তাক্বসীরের মাধ্যমে তারা হালাল হয়ে গেল। অতঃপর মক্কা থেকে পুনরায় হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধল।

(ثُمَّ طَافُوْا بَعْدَ أَنْ رَجَعُوْا مِنْ مِنًى) ‘‘এরপর মিনা থেকে মক্কায় ফিরে এসে তারা তাওয়াফ করল’’। তার ওপর থেকে, অর্থাৎ- তামাত্তু' হজ্জ/হজ সম্পাদনকারীর ওপর থেকে তাওয়াফে কুদূম রহিত হয়ে গেল। কেননা সে এখন মক্কাহবাসীদের মতই। আর মক্কাহ্বাসীদের জন্য তাওয়াফে কুদূম নেই।

(وَأَمَّا الَّذِينَ جَمَعُوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوا طَوَافًا وَاحِدًا) ‘‘যারা হজ্জে কিরান করল, তারা মাত্র একবার তাওয়াফ করল।’’ অর্থাৎ- হজ্জে কিরানকারী ‘আরাফাতে অবস্থান করার পর কুরবানীর দিন মক্কায় ফিরে এসে হজ্জ/হজ ও ‘উমরার জন্য একবার তাওয়াফ করল। ইমাম যুরক্বানী বলেনঃ কেননা কিরান হজ্জ/হজ সম্পাদনকারীর জন্য এক তাওয়াফ, একবার সা‘ঈ করাই যথেষ্ট। কারণ ‘উমরার কার্যাবলী হজ্জের কাজের মধ্যেই প্রবেশ করেছে।

এ অভিমত ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও জমহূর ‘উলামাগণের। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা-এর মতে কিরানকারীর জন্যও দু’টি তাওয়াফ ও দু’টি সা‘ঈ আবশ্যক।

জেনে রাখা ভাল যে, কিরান সম্পাদনকারীর জন্য তিনটি তাওয়াফ রয়েছে- (১) তাওয়াফে কুদূম (আগমনী তাওয়াফ) তাওয়াফে ইফাযাহ্ বা যিয়ারহ্ (এটি হজ্জের রুকন) তাওয়াফুল বিদা' (বিদায়ী তাওয়াফ) এটি ওয়াজিব। ওজর ব্যতীত তা পরিত্যাগ করলে দম দিতে হবে। তবে ঋতুবতীর জন্য তা ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম আবূ হানীফার মতে কিরান হজ্জ/হজ সম্পাদনকারীর আরেকটি তাওয়াফ আবশ্যক যা ‘উমরা-এর তাওয়াফ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)