পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্
২৫৪৫-[৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (হজের উদ্দেশে) রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু ’উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ হজ্জ/হজ ও ’উমরা উভয়ের জন্যে ইহরাম বেঁধেছিলেন, আবার কেউ কেউ শুধু হজের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু হজের জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। অতঃপর যারা শুধু ’উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা (তাওয়াফ ও সা’ঈর পর) হালাল হয়ে গেলেন (অর্থাৎ- ইহরাম খুলে ফেললেন)। আর যারা শুধু হজ্জ/হজ অথবা হজ্জ/হজ ও ’উমরা উভয়ের জন্য ’ইহরাম’ বেঁধেছিলেন তারা কুরবানীর দিন আসা পর্যন্ত হালাল হননি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْإِحْرَامِ وَالتَّلْبِيَةِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِحَجٍّ وَعُمْرَةٍ وَمِنَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ وَأَهَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْحَجِّ فَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ فَحَلَّ وَأَمَّا مَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ أَوْ جَمَعَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَلَمْ يَحِلُّوا حَتَّى كَانَ يَوْمُ النَّحْرِ
ব্যাখ্যা: (خَرَجْنَا) ‘‘আমরা বের হলাম’’। অর্থাৎ- আমরা মদীনাহ্ থেকে বের হলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যারা বিদায় হজের বৎসর বের হয়েছিলেন তাদের সংখ্যা কত ছিল- এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, তাদের সংখ্যা ছিল নব্বই হাজার।
আবার এটাও বলা হয় যে, তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ দশ হাজার। কেউ বলেন তাদের সংখ্যা আরো বেশী ছিল।
তাবূকের যুদ্ধের সময় তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ। বিদায় হজ্জ/হজ তারও এক বৎসর পরে অনুষ্ঠিত হয়। অতএব তাদের সংখ্যা এক লাখের বেশীই ছিল।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ থেকে কোন দিন বের হয়েছিলেন- এ নিয়ে ও মতভেদ রয়েছে। সঠিক কথা হলো তিনি যিলকদ মাসের চার দিন বাকী থাকতে শনিবার মদীনাহ্ থেকে বের হয়ে যুলহুলায়ফাতে যেয়ে যুহর অথবা ‘আসর-এর সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করেন।
(عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ) ‘‘বিদায় হজের বৎসর’’। এ হজ্জ/হজকে বিদায় হজ্জ/হজ এজন্যই বলা হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে লোকজনদেরকে বিদায় জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ সম্ভবত এরপর আমি আর হজ্জ/হজ করব না। প্রকৃতপক্ষে ঘটেও ছিল তাই। তিনি পুনরায় আর হজ্জ/হজ করার সুযোগ পাননি।
জেনে রাখা ভাল যে, হজ্জ/হজ তিন প্রকারঃ ইফরাদ, তামাত্তু' ও কিরান। ‘উলামাহগণ সকলে একমত যে, তিন প্রকারের যে কোন এক প্রকার হজ্জ/হজ করা বৈধ।
(১) ইফরাদঃ হজ্জের মাসে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে হজের কার্য সম্পাদন করাকে ইফরাদ হজ্জ/হজ বলে। হজ্জের কাজ সম্পাদন করে কেউ ইচ্ছা করলে ‘উমরা করতে পারে।
(২) তামাত্তুঃ হজের মাসে মীকাত থেকে শুধুমাত্র ‘উমরা এর নিয়্যাতে ইহরাম বেঁধে ‘উমরা এর কাজ সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাবে। এরপর ঐ বৎসরই পুনরায় ইহরাম বেঁধে হজের কার্যাবলী সম্পাদন করবে।
(৩) কিরানঃ মীকাত থেকে একই সাথে হজ্জ/হজ ও ‘উমরা-এর জন্য নিয়্যাত করে ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ‘উমরা ও হজ্জের কার্য সম্পাদন করাকে কিরান হজ্জ/হজ বলে।
এ তিন প্রকারের হজের মধ্যে কোন প্রকারের হজ্জ/হজ উত্তম- এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
[১] উত্তম হলো ইফরাদ হজ্জঃ ইমাম মালিক ও ইমাম শাফি‘ঈর মত এটিই। এরপর তামাত্তু' এরপর কিরান।
[২] উত্তম হলো তামাত্তু' হজ্জঃ ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালের অভিমত এটিই। ইমাম শাফি‘ঈর একটি মতও এরূপ পাওয়া যায়।
[৩] উত্তম হলো কিরান হজ্জঃ এটি ইমাম আবূ হানীফার অভিমত। হানাফীদের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, অতঃপর তামাত্তু', অতঃপর ইফরাদ। ইমাম আবূ হানীফা থেকে একটি মত এরূপ পাওয়া যায় যে, তামাত্তু'-এর চাইতে ইফরাদ উত্তম।
[৪] কুরবানীর পশু সাথে নিলে কিরান উত্তম নচেৎ তামাত্তু' উত্তম। ইমাম আহমাদ থেকে এ মত বর্ণনা করেছেন ‘আল্লামা মারূয।
[৫] ফাযীলাতের দিক থেকে তিন প্রকার হজ্জই সমান। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে দাবী করেছেন যে, এটি ইমাম ইবনু খুযায়মার অভিমত।
[৬] তামাত্তু' ও কিরান ফাযীলাতের ক্ষেত্রে সমান। আর এ দু’টো ইফরাদের চাইতে উত্তম। আবূ ইউসুফ থেকে এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে।