২৫০৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

مناسك শব্দটি বহুবচন, এর একবচন منسك। ইবনু জারীর বলেনঃ ’আরাবী منسك ঐ স্থানকে বলা হয় যেখানে লোকজন কল্যাণের উদ্দেশে একত্রিত হয়। হজের কার্যসমূহকে مناسك এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে, হজ্জের কাজ সম্পাদনের জন্য লোকজন একই জায়গায় বারবার একত্রিত হয়।

الحج-এর শাব্দিক অর্থ হলো ’কোন কিছুকে উদ্দেশ্য করা’। ইসলামী শারী’আতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে, কাবা ঘরের সম্মানের উদ্দেশে তা যিয়ারত করাকে হজ্জ/হজ বলে।

কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা হজ্জ/হজ ফরয হওয়া প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী কাফির এতে কোন দ্বিমত নেই। জীবনে তা শর্তসাপেক্ষে মাত্র একবারই ফরয।

হজ্জ/হজ ফরয হওয়ামাত্রই তা সম্পাদন করা ওয়াজিব না-কি তা বিলম্বে পালন করার অবকাশ রয়েছে- এ বিষয়ে ’উলামাগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম মালিক, আহমাদ, আবূ ইউসুফ এবং মুযানী-এর মতে তা ফরয হওয়ামাত্রই আদায় করা ওয়াজিব, বিলম্ব করার অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে ইমাম শাফি’ঈ, সাওরী, আওযা’ঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান এর মতে তা বিলম্বে আদায় করার অবকাশ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মতে ওজর ব্যতীত বিলম্বকারী গুনাহগার হবে।

উত্তম কথা হলো এই যে, যথাসম্ভব দ্রুত হজ্জ/হজ সম্পাদন করা উচিত। কেননা মৃত্যু কখন আসবে তা কেউ জানে না, তাই ফরয হওয়ার পরে তা বিলম্বে আদায় করতে গিয়ে তা আদায় করার পূর্বেই মৃত্যু উপস্থিত হলে, আর তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা না হলে নিশ্চিত গুনাহের মধ্যে নিপতিত হতে হবে। আর তা দ্রুত আদায় করা মধ্যেই তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায়। হজ্জ কখন ফরয হয়েছে তা নিয়েও ’আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ অভিমত হলো নবম হিজরী সালে হজ্জ ফরয করা হয়েছে।


২৫০৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দানকালে বললেন, হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ/হজ ফরয করেছেন, সুতরাং তোমরা হজ্জ/হজ পালন করবে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! এটা (হজ্জ পালন) কি প্রত্যেক বছরই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুপ থাকলেন। লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তবে তা (হজ্জ প্রতি বছর) ফরয হয়ে যেতো, যা তোমরা (প্রতি বছর হজ্জ পালন করতে) পারতে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে ব্যাপারটি সেভাবে থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বের লোকেরা বেশি বেশি প্রশ্ন করে ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নির্দেশ করবো তা যথাসাধ্য পালন করবে এবং যে বিষয়ে নিষেধ করবো তা পরিত্যাগ করবে। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ:: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحُجُّوا» فَقَالَ رَجُلٌ: أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَسَكَتَ حَتَّى قَالَهَا ثَلَاثًا فَقَالَ: لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُمَّ قَالَ: ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْء فدَعُوه . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال:: خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «يا ايها الناس قد فرض عليكم الحج فحجوا» فقال رجل: اكل عام يا رسول الله؟ فسكت حتى قالها ثلاثا فقال: لو قلت: نعم لوجبت ولما استطعتم ثم قال: ذروني ما تركتكم فانما هلك من كان قبلكم بكثرة سوالهم واختلافهم على انبياىهم فاذا امرتكم بشيء فاتوا منه ما استطعتم واذا نهيتكم عن شيء فدعوه . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فُرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحُجُّوْا) ‘‘তোমাদের ওপর হজ্জ/হজ ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ সম্পাদন করো।’’ এ কথা শ্রবণ করে একব্যক্তি প্রশ্ন করল- (أَكُلَّ عَامٍ) প্রত্যেক বৎসরই কি?

অর্থাৎ- আপনি কি আমাদেরকে প্রত্যেক বৎসরই হজ্জ/হজ সম্পাদন করতে আদেশ দিচ্ছেন?

(لَوْ قُلْتُ: نَعَمْ لَوَجَبَتْ) ‘‘আমি হ্যাঁ বললেই তা প্রতি বৎসরের জন্যই ওয়াজিব হয়ে যেত।

ইমাম সিন্দী বলেনঃ এটা অসম্ভব নয় যে, হজ্জ/হজ প্রতি বৎসর ওয়াজিব করা বা না করার বিষয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ন্যাস্ত ছিল। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হ্যাঁ বললেই তা প্রতি বৎসরের জন্যই ওয়াজিব হয়ে যেত। কেননা আল্লাহর পক্ষে তাঁর নাবীকে কোন ব্যাপারে সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়ার পর তার ব্যাখ্যার বিষয়টি তার ওপর ন্যাস্ত করা বৈধ।

(ذَرُوْنِىْ مَا تَرَكْتُكُمْ) ‘‘যে বিষয়ের উপর আমি তোমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছি তোমরাও সে বিষয়ে আমাকে ছেড়ে দাও।’’ অর্থাৎ- আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে হয়েছে শারী‘আতের নিয়মাবলী বর্ণনা করা এবং তা লোকদের নিকট পৌঁছানোর জন্য। অতএব শারী‘আতের বিধান আমি তোমাদের নিকট অবশ্যই বর্ণনা করব, সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করার কোন প্রয়োজন নেই।

(فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ) ‘‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ অধিক প্রশ্ন করার কারণে ধ্বংস হয়েছে।’’

ইমাম বাগাবী শারহে সুন্নাতে উল্লেখ করেছেন যে, প্রশ্ন দু’ ধরনের। যথা-

(১) ধর্মীয় কোন বিষয়ে প্রয়োজনের খাতিরে শিখার উদ্দেশে প্রশ্ন করা, আর এ ধরনের প্রশ্ন করা বৈধ। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যারা জানে তোমরা তাদের নিকট জিজ্ঞেস করো’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৪৫ আয়াত, সূরা আল আম্বিয়া ২১ : ৬ আয়াত)। সাহাবীগণের প্রশ্নাবলী এ ধরনেরই ছিল।

(২) হতবুদ্ধি ও বিহ্বল করার জন্য অনর্থক প্রশ্ন করা। আর এ ধরনের প্রশ্ন করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ অধিক ভাল জানেন।

(إِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوْهُ) ‘‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নিষেধ করি তা পরিত্যাগ করো।’’

যেহেতু নিষিদ্ধ বস্ত্ত পরিত্যাগ করতে সকলেই সক্ষম তাই বলা হয়নি যে, সক্ষম হলে তা পরিত্যাগ করো। পক্ষান্তরে আদিষ্ট কোন বিষয় কার্যকর করতে সক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে। তাই সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে ‘‘আমি যে বিষয়ে আদেশ করি সাধ্যমত তা পালন করো।’’


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)