২৪৯২

পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৯২-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাজলিস (বৈঠক) হতে খুব কমই উঠতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবীগণের জন্য এ দু’আ না করতেন-

’’আল্ল-হুম্মাকসিম লানা- মিন্ খশ্ইয়াতিকা মা- তাহূলু বিহী বায়নানা- ওয়া বায়না মা’আ-সীকা ওয়ামিন্ ত্ব-’আতিকা মা- তুবাল্লিগুনা- বিহী জান্নাতাকা ওয়ামিনাল ইয়াক্বীনি মা- তুহাওবিনু বিহী ’আলায়না- মুসীবা-তিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া মাত্তি’না- বিআসমা-’ইনা- ওয়া আবস-রিনা- ওয়া ক্যুওয়াতিনা- মা- আহ্ইয়াইতানা- ওয়াজ্’আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না- ওয়াজ্’আল সা’রানা- ’আলা- মান্ যলামনা- ওয়ানসুরনা- ’আলা- মান ’আ-দা-না ওয়ালা- তাজ্’আল মুসীবাতানা- ফী দীনিনা- ওয়ালা- তাজ্’আলিদ্ দুন্ইয়া- আকবারা হাম্মিনা- ওয়ালা- মাব্‌লাগা ’ইলমিনা- ওয়ালা- তুসাল্লিত্ব ’আলায়না- মান্ লা- ইয়ার্‌হামুনা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে ঐ পরিমাণ তোমার ভীতি-সঞ্চার করো যা দিয়ে তুমি আমাদের মাঝে ও তোমার নাফরমানীর মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তোমার ’ইবাদাত-আনুগত্যের ঐ পরিমাণ আমাদেরকে দান করো, যা দিয়ে তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং তোমার ওপর ঈমানের ঐ পরিমাণ দান করো যা দিয়ে তুমি দুনিয়ার বিপদাপদ সহজ করে দেবে। হে আল্লাহ! আমাদের উপকার সাধন করো আমাদের কানের মাধ্যমে, আমাদের চোখের মাধ্যমে ও আমাদের শক্তির মাধ্যমে, যতক্ষণ না তুমি আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উত্তরাধিকারী জারী রাখো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিশোধ-প্রতিরোধকে সীমাবদ্ধ রাখো তাদের ওপর, যারা আমাদের ওপর যুলম [অত্যাচার-অবিচার] করেছে এবং আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করো তাদের বিরুদ্ধে, যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে। হে আল্লাহ! আমাদের দীন সম্পর্কে আমাদেরকে কোন বিপদে ফেলো না এবং দুনিয়াকে আমাদের মৌলিক চিন্তার বিষয় ও জ্ঞানের পরিসীমা করো না। হে আল্লাহ! যারা আমাদের ওপর দয়া প্রদর্শন করবে না, তাদেরকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিও না।)। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُومُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهَؤُلَاءِ الدَّعَوَاتِ لِأَصْحَابِهِ: «اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مُصِيْبَاتِ الدُّنْيَا وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنَا وَقُوَّتِنَا مَا أَحْيَيْتَنَا وَاجْعَلْهُ الْوَارِثَ مِنَّا وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا وَلَا تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا وَلَا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَرْحَمُنَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

وعن ابن عمر قال: قلما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقوم من مجلس حتى يدعو بهولاء الدعوات لاصحابه: «اللهم اقسم لنا من خشيتك ما تحول به بيننا وبين معاصيك ومن طاعتك ما تبلغنا به جنتك ومن اليقين ما تهون به علينا مصيبات الدنيا ومتعنا باسماعنا وابصارنا وقوتنا ما احييتنا واجعله الوارث منا واجعل ثارنا على من ظلمنا وانصرنا على من عادانا ولا تجعل مصيبتنا في ديننا ولا تجعل الدنيا اكبر همنا ولا مبلغ علمنا ولا تسلط علينا من لا يرحمنا» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: বলা হয়, অন্তর যখন আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ থাকে তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর অবাধ্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর ভয়ের অনুপাতে গুনাহের কাজ থেকেও বিরত থাকা বাড়ে-কমে। যখন ভয় একেবারে কমে যায় এবং চরম গাফলতিতে অন্তর নিমজ্জিত হয় তখন তা ব্যক্তির দুর্ভাগ্যের চিহ্ন প্রকাশ করে। এজন্যই বিদ্বানগণ বলেছেন যে, আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ মূলত কুফরীর দূত যেমনভাবে চুম্বন হচ্ছে যৌনমিলনের দূত, গান হচ্ছে যিনার (ব্যভিচার) দূত, দৃষ্টি হচ্ছে যৌন উত্তেজনার দূত, রোগ হচ্ছে মৃত্যুর দূত। দুনিয়া ও আখিরাতে এবং ব্যক্তির শরীর ও বুদ্ধি-বিবেচনাশক্তির উপর গুনাহের খুবই খারাপ ও ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে, যে প্রভাব আল্লাহ ছাড়া কেউ গণনা করতে পারবে না।

এখানে দুনিয়ার মুসীবাত বা বিপদাপদসমূহ বলতে, রোগ-বালাই, আঘাত, সম্পদ বিনষ্ট হওয়া, সন্তান মারা যাওয়া ইত্যাদি বুঝাচ্ছে। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে নিশ্চিতভাবে জানবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়ায় যে বিপদাপদ দিচ্ছেন তার বিনিময়ে আখিরাতে তাকে সাওয়াব দান করবেন, তার গুনাহসমূহ মাফ করবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তাই কোন বিপদাপদে তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও হতাশ না হয়ে বরং শেষ পর্যন্ত এর বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়ার কারণে তার খুশি হওয়া উচিত।

এ দু‘আর শেষ অংশে বলা হয়েছে- ‘‘তুমি দুনিয়াকে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ বানাবেন না’’। এর অর্থ হলো, পার্থিব সম্পত্তি ও সম্মান অর্জনকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ বানিও না, বরং আখিরাতকেই আমাদের চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ বানাও।

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুনিয়ার জীবনে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ অর্জনের যতটুকু চিন্তা না করলেই নয় ততটুকু করা অন্যায় নয় বরং অনুমোদিত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব বা ওয়াজিবও।

হাদীসের সর্বশেষ অংশে অত্যাচারী বা কাফিরদের অধীনস্ত না বানাতে দু‘আ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাফির ও যালিমদেরকে আমাদের ওপর শাসক বা বিচারক নিয়োগ করো না। কেননা যালিমরা অধীনস্তদের ওপর রহম বা দয়া করে না।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)