২৪৮৩

পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৌলিক দু‘আসমূহ

২৪৮৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আ) বলতেন,

’’আল্ল-হুম্মা আস্‌লিহ লী দীনিল্লাযী হুওয়া ’ইস্‌মাতু আম্‌রী ওয়া আস্‌লিহ লী দুন্ইয়া- ইয়াল্লাতী ফীহা- মা’আ-শী ওয়া আস্‌লিহ লী আ-খিরাতিল্লাতী ফীহা- মা’আ-দী ওয়াজ্’আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান লী ফী কুল্লি খয়রিন ওয়াজ্’আলিল মাওতা রা-হাতান লী মিন কুল্লি শাররিন’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য আমার দীন [ধর্ম]-কে ঠিক করে দাও, যা ঠিক করে দেবে আমার কার্যাবলী। তুমি ঠিক করে দাও আমার দুনিয়া [ইহকাল], যাতে রয়েছে আমার জীবন। তুমি ঠিক করে দাও আমার আখিরাত [পরকাল], যেখানে আমি [অবশ্যই] ফিরে যাবো। আমার হায়াত [আয়ুষ্কাল] প্রত্যেক কল্যাণকর কাজের জন্য বাড়িয়ে দাও, আর আমার মৃত্যুকে আমার জন্য প্রত্যেক অকল্যাণ হতে শান্তিস্বরূপ কর।)। (মুসলিম)[1]

بَابُ جَامِعِ الدُّعَاءِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «اللهم اصلح لي ديني الذي هو عصمة امري واصلح لي دنياي التي فيها معاشي واصلح لي اخرتي التي فيها معادي واجعل الحياة زيادة لي في كل خير واجعل الموت راحة لي من كل شر» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: আমার দীনকে ঠিক করে দাও যাতে তা আমাকে জাহান্নামের আগুন ও আল্লাহর অসন্তোষ থেকে আমাকে রক্ষা করে। ইমাম মানাবী বলেন, যার দীন-ধর্ম ঠিক থাকে না তার সমস্ত কর্মই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের মুখোমুখি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমার ইহকালকে ঠিক করে দাও যাতে রয়েছে আমার জীবনোপকরণ। এর অর্থ হলো আমার প্রয়োজনীয় বিষয় ও দ্রব্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে এবং হালাল উপায়ে প্রদান করে আমার ইহকালকে ঠিক করে দাও। এর অর্থ এও হতে পারে যে, দুনিয়ায় আমার প্রয়োজনীয় বিষয়াদিতে বিদ্যমান সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করো।

‘ইবাদাত করার তাওফীক (শক্তি), আনুগত্যে ইখলাস ও সুন্দর সম্মতির মাধ্যমে আমার আখিরাতকে ঠিক করে দাও। অর্থাৎ- আমার প্রত্যাবর্তনস্থল তথা আখিরাতের স্বার্থে তোমার আনুগত্য করার তাওফীক আমাকে দান করো।

ইখলাস, আনুগত্য ও ‘ইবাদাতে অধিক কল্যাণ অর্জনে আমার জীবনকে ব্যাপৃত রাখো। অর্থাৎ- যে কাজ তুমি ভালোবাস ও পছন্দ করো সে কাজ আমার জীবনকে ব্যস্ত রাখো আর যে কাজ তুমি অপছন্দ করো তা থেকে আমাকে দূরে রাখো।

আমার মৃত্যুকে আমার পক্ষে প্রত্যেক অকল্যাণ হতে শান্তিস্বরূপ করো। এর অর্থ হলো, আমার মৃত্যুর সময় আমাকে সঠিক বিশ্বাস, সাক্ষ্য ও তাওবার উপরে রাখো। যাতে করে আমার মৃত্যু দুনিয়ার কষ্ট থেকে পরিত্রাণের ও চূড়ান্ত প্রশান্তি অর্জনের উপায় হয়।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) তাঁর ‘‘তুহফাতুয যাকিরীন’’ গ্রন্থে (পৃঃ ২৮৪) এ হাদীস সম্পর্কে লিখেছেনঃ

এ হাদীসটি ব্যাপক অর্থবোধক একটি হাদীস। কারণ এর মধ্যে দীন ও দুনিয়া উপকারিতার সকল দিক আলোচিত হয়েছে। দীনের সঠিক বুঝ ও ‘আমল হলো বান্দার সকল সম্পদের মূল এবং তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য। অত্র হাদীসে দুনিয়াকে জীবনোপকরণের ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে আখিরাতের উপকারিতা অর্জনের দু‘আ করা হয়েছে যে, আখিরাতই হচ্ছে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনস্থল। দীনের সঠিকতার প্রার্থনা এজন্যই করা হয়েছে যে, আল্লাহ যখন কারো দীনকে ঠিক করে দেন তখন তার আখিরাতকেও ঠিক করে দেন। এখানে প্রত্যেক ভাল কাজে জীবনকে বৃদ্ধি করে দেয়ার দু‘আ করা হয়েছে এজন্য যে, যার জীবনকে আল্লাহ অধিক কল্যাণ দ্বারা সমৃদ্ধ করেন তার জীবন কল্যাণ ও সফলতায় ভরপুর হয়। আর মৃত্যুকে সকল অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণের উপায় করার অর্থ হলো মৃত্যুর মাধ্যমেই অকল্যাণের দরজা বন্ধ হয়। এর মধ্যে বান্দার জন্যে অনেক কল্যাণ রয়েছে। তবে এ জন্যে সরাসরি মৃত্যু কামনা না করে, বরং এ দু‘আ করা উচিত যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন,

(اَللّٰهُمَّ أَحْيَنِيْ مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِّيْ، وَتَوَفَّنِيْ إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرً لِّيْ)

অর্থাৎ- ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে ততক্ষণ জীবিত রাখো যতক্ষণ পর্যন্ত জীবন আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে মৃত্যু দান করো যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৬৮০)

এ দু‘আটি সবকিছুকে শামিল করে। আর এ কথা সবারই জানা যে, যার সারাটা জীবন শুধু অকল্যাণে ভরপুর তার জন্য জীবিত থাকার চেয়ে মৃত্যুই উত্তম ও প্রশান্তিদায়ক।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১০: আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)